ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় সরকারী, বেসরকারী বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জোর পুর্বক মানববন্ধন করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করে গত এক সপ্তাহ ধরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রখর রোদে দাড় করিয়ে মানববন্ধন করানো হলেও জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস অনেকটা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। জোর করে পালন করা মানববন্ধন কর্মসুচি বন্ধে কোন সিদ্ধান্ত বা দায়ী অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত স্বার্থ তো দূরের কথা শিক্ষার্থীদের রোদে দাড় করিয়ে কোন মন্ত্রী কিংবা সচিবের ভিআইপি প্রটোকলেও ব্যবহার করা যাবে না। অথচ কালীগঞ্জে এক জনপ্রতিনিধির নামে কথিত মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ করতে ঢালাও ভাবে কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোরপুর্বক মানববন্ধন কর্মসুচি করানো হচ্ছে। এই বেআইনী কাজে বাধ্য করতে কালীগঞ্জ সরকারী দলের কতিপয় নেতার চাপ রয়েছে বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন। অনেকেই বলছেন মানববন্ধন করাতে প্রতিষ্ঠান প্রতি ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এই লোভ সামলাতে না পেরে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সুস্পষ্ট নীতিমালা লঙ্ঘন করে কালীগঞ্জের প্রধান শিক্ষকরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রোদে দাড় করিয়ে মানববন্ধন করাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, স্থানীয় এমপি ও তার লোকজনের হুমকীর কারণে তারা এই মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সরকারি নলডাঙ্গা ভ‚ষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সলিমুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাট বারবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলহাজ¦ আমজাদ আলী ও ফাইজুর রহমান মহিলা কলেজ, শহীদ নুর আলী কলেজ, শোয়াইবনগর মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনের কারণ জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ রাশেদ সাত্তার তরু বলেন, সবাই করছে তাই শিক্ষার্থীরাও করেছে। তিনি দাবী করেন রোদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাড় করানো হয়নি। কালীগঞ্জের রুস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীরা এ্যসেম্বলি শেষ করা মুহুর্তে সুশান্ত কুমার পাল নামে একজন শিক্ষক ব্যানার ধরে মানববন্ধন করতে বলেন। পরে পড়ে দেখি এমপির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মানববন্ধন করানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করে কেন মানববন্ধন করা হলো এমন প্রশ্নের কোন সদ্দুত্তর দিতে পারেনি কোন কলেজ বা স্কুলের প্রধানরা।

বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মধু সুদন সাহা বলেন, বিষয়টি আমি সামাজিক গনমাধ্যমে দেখেছি। বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তাসলিমা বেগম বলেন, এমন মানববন্ধন করলে সমস্যা কি ? মন্ত্রনালয়ের এমন কোন আদেশ আছে নাকি ? তিনি সাংবাদিকদের উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, আপনারা কি করছেন ? অবশ্য পরে তিনি বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে এধরণের মানববন্ধন করা বেআইনী।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন জানান, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন খবর জেনেছে। তবে মানববন্ধন করতে আমার কাছে কেও অনুমতি গ্রহন করেনি বা কেউ অভিযোগ করেনি। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন কর্মসুচি পালন করলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও তিনি জানান। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, আমি শুনেছি শুধু শিক্ষকরা এই মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করছেন। শিক্ষার্থীদের দিয়ে করানো হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই। যদি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হয় তবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উল্লেখ্য “তুই শিবির করিস” এই কথা বলে স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার সরকারী মাহতাব উদ্দীন কলেজের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনকে চড় থাপ্পড় মারেন বলে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত ও বেরসরকারী টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত সংবাদ ‘মিথ্যা’ প্রমান করার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলার সকল কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোরপুর্বক মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করানো হচ্ছে বলে নতুন করে অভিযোগ উঠেছে।