বিশেষ সংবাদ | তারিখঃ মে ২৩, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3603 বার
সোহাগ হোসেন, চট্টগ্রাম : এক বছর ৯ মাস পর স্ত্রী চুমকি কারনের সঙ্গে দেখা হয়েছে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের। দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রাম আদালতের এজলাস কক্ষে সোমবার (২৩ মে) তাদের দেখা হয়।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলার পর চুমকি কারন পলাতক ছিলেন। সোমবার প্রথমবারের মতো মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে চুমকি কারনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’
এদিকে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারন দুজনই আছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। তবে তাদের মধ্যে দেখা ও কথা বলার কোনও সুযোগ নেই বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রদীপ কুমার দাশ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এ কারণে তাকে কারাগারের ৩২ নম্বর সেলে রাখা হয়েছে। তার স্ত্রী চুমকি কারন থাকবেন কারাগারের নারী ওয়ার্ডে। চুমকি কারনকে প্রথম সাতদিন কারাগারের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। সেখান থেকে সাত দিন পর ওয়ার্ডে পাঠানো হবে। তবে স্বামী-স্ত্রী দুজন একই কারাগারে থাকলেও তাদের দেখা কিংবা কথা বলার সুযোগ নেই।’
মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম-২-এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামি চুমকি কারন পলাতক ছিলেন। তাকে গ্রেফতারে আমরা অনেকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। তবে এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ নেই। কেননা, মামলার বিচারকাজ চলছে।’
দুদকের মামলার পর চুমকি কারন কোথায় ছিলেন, দেশে না দেশের বাইরে কোথাও আত্মগোপনে ছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদি দেশেই থেকে থাকেন তাহলে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী কেন খুঁজে পায়নি তা নিয়েও উঠেছে নানা গুঞ্জন।
২০২০ সালের ২৩ আগস্ট প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২-এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন এ মামলা করেন। মামলায় তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। ২০২১ সালের ২৬ জুলাই প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর এই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রদীপের স্ত্রীর নামে চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে বাড়ি, ৪৫ ভরি সোনা, একটি কার, একটি মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব ও কক্সবাজারে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। চুমকির চার কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল। যার মধ্যে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় দুই কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকার। বাকি দুই কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকা অবৈধ সম্পদ বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে দুদক। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর এই মামলায় চার্জ গঠনের মাধ্যমে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মুনসী আব্দুল মজিদ।
এর আগে, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে প্রাণ হারান সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় সিনহার বোন বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকেও আসামি করা হয়। ২০২০ সালের ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এ মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। মামলায় ওসি প্রদীপসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার রায় ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের হরেন্দ্রলাল দাশের ছেলে প্রদীপ। নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা আরসি চার্চ রোডের বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশে যোগ দেন প্রদীপ।