সাইফুল ইসলাম নাহিদ, সিলেট : মন্ত্রী ত্রাণ তুলে দিলেন বন্যাদুর্গত মাহফুজ মিয়ার হাতে। ফটোসেশন হলো, ভিডিও ধারণ হলো। তারপর সেই ত্রাণের ব্যাগ নিয়ে নিলেন ত্রাণ বিতরণের আয়োজকরা। গতকাল শনিবার সকালে এই ঘটনা ঘটেছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে।

সকাল ১০টায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ তার নির্বাচনী এলাকায় বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করতে যান। কোম্পানীগঞ্জে মন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণের খবর পেয়ে উপস্থিত হন আশপাশের ৬টি ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার মানুষ।

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মন্ত্রীর হাত দিয়ে বিতরণের জন্য ত্রাণের ১২০টি প্যাকেট তৈরি করা হয়। এই উপজেলার আশপাশের ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় ১ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ত্রাণ বিতরণের শুরুতে ফটোসেশনের জন্য ‘ভাগ্যবান’ তিনজনকে বেছে নেওয়া হয়। যাদের হাতে মন্ত্রী তুলে দেন ত্রাণের প্যাকেট। এই তিনজনের একজন মাহফুজ মিয়া।
১০ কেজি চাল ও আনুষঙ্গিক কিছু জিনিসসহ প্যাকেটটি যখন মন্ত্রী তার হাতে তুলে দেন তখন পরিবারের খাবার জোগানোর দুশ্চিন্তা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পান মাহফুজ। কিন্তু তা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি।

আয়োজকরা তার হাত থেকে প্যাকেটটি নিয়ে নেন এবং বলেন, যখন সবাইকে দেওয়া হবে তখন মাহফুজ মিয়াকেও ত্রাণ দেওয়া হবে। ফটোসেশন ও বক্তৃতা পর্বের পর মন্ত্রী চলে যেতেই, ১২০ প্যাকেট ত্রাণের জন্য উপস্থিত লোকজনের মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হয়। গায়ের জোরে যারা পেরেছেন তারা প্যাকেটগুলো বাগিয়ে নেন। তবে, নিজের প্যাকেটটি আর পাননি মাহফুজ।

অব্যবস্থাপনা সামাল দিতে পুলিশ এক পর্যায়ে বন্যা দুর্গতদের ওপর লাঠিচার্জ করে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। মাহফুজ বলেন, ‘সবার আগে আমার ত্রাণ পাওয়ার কথা, পেলামও। কিন্তু আবার নিয়ে নিলো। শেষ পর্যন্ত আর ত্রাণ পেলাম না। পাওয়ার মধ্যে পেলাম পুলিশের লাঠির আঘাত।’

হুড়োহুড়ির মধ্যে মাহফুজের হাত থেকে ছাতাটাও কেউ নিয়ে যায়। মাহফুজ বলেন, ‘ত্রাণ তো পেলামই না, উল্টো লুটের শিকার হলাম।’ গণমাধ্যমে ছবি দেখে মানুষ হয়তো জানবে মাহফুজ ত্রাণ পেয়েছেন। কিন্তু, তিনি ঘরে ফিরবেন খালি হাতে।

এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আমরা যতই ত্রাণ দেই না কেন, তারপরও কিন্তু কম পড়বে। আমরা কোনো ইউনিয়নে ১০০ মণ চাল দিলে ১০০ জন পাবে, যদি ২০০ জন চলে আসে, তাহলে অর্ধেক করে সেটা দেয়া যায়, যদি খোলা চাল ও গম থাকে। কিন্তু প্যাকেট করা খাবার তো ভাগ করা যায় না। তাই যারা আগে থেকে তালিকাভুক্ত হয়েছে তাদেরকে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কেউ যদি নির্দিষ্টভাবে দেখাতে পারে যে তালিকায় অনিয়ম হয়েছে, আমি কঠিন ব্যবস্থা নেব। আগে এরকম হয়েছে, কিন্তু এখন এই অপবাদ আমি মাথায় নেবো না।

‘সরকারও যতই দিক না কেন, এরকম হবে আর এর মধ্যেই কিন্তু মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে এখন পাননি, কিন্তু অবশ্যই আপনি পরবর্তীতে পাবেন। আলটিমেটলি ঘুরে ঘুরে সবার কাছেই যাবে এবং কেউই বাদ পড়বে না,’ যোগ করেন তিনি।