এস এম মহিদার রহমান, সাতক্ষীরা ঃ সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। ফলে দূষিত পানি পান করায় নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুকিতে স্থানীয়রা। বেড়িবাঁধ ভেঙে পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে যাওয়া ও ফিল্টারগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় দুস্কর হয়ে পড়েছে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ। বেঁচে থাকার তাগিদে দূষিত পানি পান করায় পেটের পীড়াসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, উপকুলীয় এলাকার মানুষকে বাঁচাতে সরকারিভাবে নির্মিত হোক বড়ধরণের জলাধার বা পানির প্লান্ট।
জানা যায়, ২০০৯ সালে আইলার তান্ডবের পর থেকে সুপেয় পানির সংকট উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ জুড়ে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে নষ্ট হয়ে যায় সুপেয় পানির উৎস। বিকল্প হিসেবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পুকুরের পানি ফিল্টারিং করে ব্যবহার করতেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। তবে অধিকাংশ পিএসএফ অকেজো হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েন উপকূলবাসী। প্রতিদিন পায়ে হেঁটে ৬-৮কি: মি: দুরে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে যেতে হয় উপকুলীয় অঞ্চলের মহিলাদের। এতে ক্লান্ত হয়ে পড়তে হয় তাদের। এক কলস পানি আনতে যেয়ে একবেলাই কেটে যায় তাদের। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করা উপকূলীয়বাসীর নিত্যদিনের ঘটনা। মাঝে মাঝে বে-সরকারি একটি সংস্থার সরবরাহ করা জারের পানির উপরে ভরসা করে থাকতে হয় তাদের। পানি সংগ্রহে তাদের প্রচুর শ্রম ও সময় ব্যয় হচ্ছে। নোংরা পানিতে গোসল করায় স্বাস্থ্য সংকটে অনেকেই। ভুক্তভোগীদের দাবী, সুপেয় পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের। তবে,সুপেয় পানির সংকট সমাধানে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানালেন জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জেলা পরিষদ।
শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালি গ্রামের জোহরা বেগম জানান, আমাদের পরিবারের জন্য সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ৭-৮ মাইল পায়ে হেটে গিয়ে পানি আনতে হয়। সেখানে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিতে খুবই কষ্ট হয়। অনেক সময় সারদিনের আয় উপার্জন ফেলে এক কলস পানির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
সুন্দরবন গ্রামের আমেনা খাতুন জানান, মাটির পাত্রে বৃষ্টি পানি সংগ্রহ করে ২-৩ মাস ধরে খেয়ে থাকি তবে এখন বৃষ্টি না হওয়ায় দূর থেকে পানি আনতে হয়। তার দাবী সরকারিভাবে নির্মিত হোক বড়ধরণের জলাধার বা পানির প্লান্ট।
গাবুরা ইউনিয়নের ছাত্তার গাজী জানান, উপকুলীয় এলাকায় যে দিকে তাকায় শুধু পানি আর পানি। কিন্তু খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। ড্রামে করে নদীর ওপার থেকে নৌকা ভাড়া করে খাবার পানি আনতে হয়। মাঝে মধ্যে টাকা দিয়ে পানি আনাতে হয়। এ এলাকার পুকুরগুলোকে পুন:খনন করে কাটা তারের বেড়া দিয়ে সুপেয় পানি নিশ্চিত করার দাবী তার।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান জানান, সুপেয় পানির সংকট নিরসনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে পানির ট্যাংকি প্রদান করা হয়েছে। যেসব এলাকার গভীর নলকূপ থেকে লোনা পানি উঠে সেসব এলাকায় পুকুর কেটে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান,আমরা সুপেয় পানির সংকটে কাজ করে যাচ্ছি। গভীর ও অগভীর নলকুপ স্থাপন করছি। রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্লান্ট স্থাপন করছি। আইরন ও আর্সেনিক দূরিকরণেও আমরা কাজ করছি। আশা করি অচিরেই সুপেয় খাবার পানি সংকট দূর হবে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম জানান, জেলার ৬৩ ভাগ মানুষ সূপেয় পানি পাচ্ছে,সরকারিভাবে এ তথ্য দেওয়া হলেও সুপেয় পানি পান করতে পারছেননা ৫০ ভাগের বেশী মানুষ। সংস্কারের অভাবে উপকুলীয় এলাকায় সরকারিভাবে বসানো ৬শ’ ৫০টি পিএসএফের অধিকাংশ অকেজো হয়ে আছে। জেলা পরিষদের ৭৩টি পুকুর পুনঃখনন করে কাটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে সুপেয় পানি নিশ্চিতকরনে। এছাড়া ১৫ হাজার গভীর নলকূপ, ৮ হাজার রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টারসহ ৪২ হাজার পানির উৎস চলমান রয়েছে। এছাড়াও বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন এনজিও-র’ মাধ্যমে প্রতিটি পারিবারে মাঝে পানির ট্যাংক বিতরণ করা হচ্ছে।