ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ, কৃষি ডিপ্লোমা ও বিএড কোর্সের সনদ সরবরাহের শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে।

অফিস সহকারী মুকুল মিয়া মোটা অঙ্কের টাকা’র বিনিময়ে উপজেলার একাধিক ব্যক্তিকে ভুয়া সনদ সরবরাহ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া আরজান আলী নামে এক বহিষ্কৃত শিক্ষকদের লিখিত কারণ দর্শানোর নোটিশে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বহিষ্কৃত শিক্ষক আরজান আলী উপজেলার জোড়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জাল সনদে ১৩ বছর চাকরি করেছেন। পরে তার সনদ ভুয়া বলে প্রমাণিত হলে তিনি চাকুরিচ্যুত হন।

এদিকে আরজান আলীকে চাকুরিচ্যুত করার পর তাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হলে জবাবে তিনি জানান, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হরিণাকুন্ডু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মুকুল মিয়া জাল বিএড সনদ সরবরাহ করেন। শিক্ষক আরজান আলীর লিখিত জবাবের পর একের পর এক হরিণাকুন্ডু উপজেলার বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসায় জাল সনদে নিয়োগের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, শিক্ষক-কর্মচারী পদে নিয়োগের জন্য জাল সনদ সরবরাহের জন্য চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন মুকুল মিয়া। সনদ সরবরাহের জন্য হাতিয়ে নিতেন বিপুল পরিমাণ টাকা। সেই টাকা চলে যেতো উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী’র পকেটে। উপজেলার ঘোড়াগাছা লাল মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গুলশান আরা জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদে ১২ বছর চাকরী করে আসলেও তার বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোন ভ্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। অথচ বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) যাচাই-বাছাই করে ভুয়া বলে প্রমান করে চিঠি দিয়েছে। এদিকে হরিণাকুন্ডু উপজেলার পার ফলসি দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্যানুসন্ধানেও জাল সনদ সরবরাহের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

অভিযোগ উঠেছে, জাল কৃষি ডিপ্লোমার সনদ দিয়ে একই প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন আবু সালেহ ওল্টু মিয়া। তাকে এই সনদ সরবরাহ করেছেন ২৫ বছর ধরে একই স্থানে চাকরী করা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মুকুল মিয়া। এছাড়া একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া শিক্ষক রুহুল আমিনের বিপিএড সনদ জাল বলে চিহ্নিত হয়েছে।

আইনানুযায়ী, ডিগ্রি পাশের পরে বিপিএড কোর্সে ভর্তি হওয়ার নিয়ম থাকলেও শিক্ষক রুহুল আমিন ডিগ্রী পাস করার আগেই বিপিএড কোর্সের সনদ সংগ্রহ করেন এবং ওই সনদ দিয়েই তিনি পার ফলসি দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তাকে জাল সনদ সরবরাহ করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মচারী মুকুল। এই কাজের জন্য মুকুল নিয়েছেন এক লাখ টাকা।

পার ফলসি মাদ্রাসার সুপার ইয়ারুল ইসলাম জানান, তার মাদ্রাসার জমিজমা সংক্রান্ত ত্রæটি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার সহ একাধিক শর্তে নিরাপত্তা কর্মচারী পদে ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে জসিম উদ্দিন নামে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়। জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে ওই টাকা গ্রহণ করেন মুকুল।

হরিণাকুন্ডু উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান শিলু এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন মুকুল ও তার অফিসার আব্দুল বারী হরিণাকুন্ডুর শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।

এ ব্যাপারে মুকুল মিয়া জানিয়েছেন, আমি বিপ্লব ও আবু সালেহ নামে দুইজনের কাছ থেকে টাকা গ্রহন করেছিলাম। এরমধ্যে এক লাখ টাকা ফেরৎ দিয়েছি। হরিণাকুন্ডু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।