যশোর অফিস : যশোরে বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ১৬ বছরের নির্যাতন থেকে জাতি আজ মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু শত্রু বসে নেই। সুতরাং আপনারা (দলীয় নেতাকর্মী) আনন্দ উল্লাসে থাকবেন না। অতীতে আমাদের দলের নেতাকর্মী কেউ যদি জনগণের সাথে খারাপ আচারণ করে থাকেন তাহলে ভালো হয়ে যান।

বিএনপি কিন্তু এখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে নাই। ক্ষমতায় আসতে হলে জনগণের ভোটের প্রয়োজন আছে। আগামী নির্বাচনে কিন্তু জনগণের ভোটের রায় নিয়ে সরকার গঠিত হবে। ফলে জনগণকে আস্থায় রাখতে হবে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এদেশে আর কোন দল রাজনীতি করতে পারবে না।

আমাদের নেতা তারেক রহমান বার বার সেই কথায় বলছেন। আপনারা জনগণকে আস্থায় নিতে তাদের কাছে ছুটে যান। তাদের সমস্যার কথা শোনেন এবং সম্ভাব্য সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেন। মনে রাখবেন গণতন্ত্র ও ভোটের রাজনীতিতে জনগণের ব্যালটের রায়ের কোন বিকল্প নেই।

মহান বিজয় দিবসের ৫৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। যশোর টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম। সভার শুরুতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

আলোচনা সভায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে ভারতের অপপ্রচার প্রসঙ্গে বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি এ দেশের সংখ্যালঘূরা মায়ের কোলে শিশুর মত নিরাপদ থাকে। আমরা বিএনপি নেতাকর্মীরা এ দেশের সংখ্যা লঘুদের মায়ের কোলের শিশুর মত লালন পালন করছি।

পাশের দেশের দিদি (মমতা ব্যানার্জি) আপনি নিজে বাংলাদেশে এসে দেখে যান। যশোরে আসেন দেখেন অনিন্দ্য ইসলাম অমিত কিভাবে আপনার ধর্মের লোকদের নিরাপদে রেখেছে। ফিরে গিয়ে আপনার দেশে মিডিয়াকে বলেন, কুৎসা রটিয়ে কোন দেশে রায়োট (দাঙ্গা) বাঁধানো যায় না। আমরা এখানে হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই হিসেবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করি। আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এটি আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। বর্তমানে আমাদের নেতা তারেক রহমান সেই শিক্ষায় দলের প্রতিটিি নেতাকর্মীকে দিচ্ছেন।

ইকবাল হাসান আরো বলেন, আওয়ামী লীগ চাপাবাজিতে বরাবরই প্রথম। মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগের ব্যবসা। প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা এসেছিল ২৬ তারিখে। ২৫ তারিখে পাকিস্তানের বর্বরোচিত হামলার পরে আওয়ামী লীগের সবাই লেজ তুলে পালিয়েছিল মামুর বাড়িতে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের খুঁজে পায়নি। তখন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর সবাই যুদ্ধের ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এটাই হলো স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করি। নিয়াজি আত্মসমর্পন করছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি নেই। এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে অপমানের ছিল। এরই জের ধরে মোদী (ভারতে প্রধানমন্ত্রী) বলছে এটা ভারতে বিজয়। আমরা সাত কোটি মানুষ যুদ্ধ করেছিলাম সেটি আওয়ামী লীগের দোষে ব্যহত হয়ে গেছে।
টুকু আরো বলেন, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের দোকান খুলে ১৬ বছর সেই দোকানে নানান রকম মলম বিক্রি করেছে। ইতিহাসকে বিক্রিত করে মুক্তিযুদ্ধ তার বাবার এবং তার ভ্যানেটি ব্যাগের সম্পদ বানিয়েছিল। আমরা ১৬ বছর আন্দোলন করেছি, গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত হয়। কিন্তু ৪ আগস্ট পর্যন্ত গাছের পাতায়ও আওয়ামী লীগ ছিল। কিন্ত আগস্টের পরে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের এই চরিত্র নতুন না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত গাছের পাতায় বাকশাল দেখেছি। কিন্তু যেই ১৫ আগস্টে নির্মম হত্যাকান্ড সংঘটিত হলো কাউকে খুঁজে পাওয়া গেল না। ঢাকা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে নেতার (শেখ মুজিব) লাশ পড়েছিল কেউ দেখতে আসলো না। এখন তারা পালিয়েছে আমরা কিন্তু অবাক হইনি। কারণ আওয়ামী লীগ মানে কিছু হলেই লেজ তুলে পালায়। আর দৌড় দেয় তাদের মামুর বাড়িতে। এবারও তারা সেই মামুর বাড়িতে পালিয়েছে।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাড. সৈয়দ সাবেরল হক সাবু, সদস্য প্রকৌশলী টি এস আইয়ূব, আবুল হোসেন আজাদ, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি,নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, চৌগাছা পৌর বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা আওলিয়ার, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, শার্শা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী গোলাম হায়দার ডাবলু, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা, জেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী বেগম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে রাতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।