নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় নির্বাচন কবে করা সম্ভব হবে- সে বিষয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে আলোকপাত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন কমিশন সংস্কার।

ভাষণে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আগামী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

“বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে, নির্বাচনের তারিখ ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্ধারণ করা যেতে পারে।”বলেন ড. ইউনূস।

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সব ধরনের বড় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজনের জন্য তিনি বারবার সবার কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তবে, রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে, একটি সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়নের ভিত্তিতে ছোটখাটো সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন করা সম্ভব হতে পারে।

তিনি বলেন, “যদি আমরা এর সঙ্গে নির্বাচনি প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কারের প্রত্যাশিত স্তর যোগ করি, তবে এটি কমপক্ষে আরও ছয় মাস সময় নিতে পারে। ব্যাপকভাবে বলতে গেলে, নির্বাচনের তারিখ ২০২৫ এর শেষ এবং ২০২৬ এর প্রথমার্ধের মধ্যে করা যেতে পারে।

নির্বাচনের আগে সংস্কার সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সংস্কারের জন্য জনগণের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে প্রতিটি সংস্কার কমিশন গুরুত্বপূর্ণ।”

এসময় নির্বাচনি সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করেন তিনি। বলেন, “সরকারের প্রস্তুতি এবং আগামী নির্বাচনের তারিখ মূলত এই দুই কমিশনের সুপারিশের ওপর নির্ভর করে।”

“এই প্রেক্ষাপটে বড় খবর হলো, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হয়েছে। কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এখন থেকে তাদের (কমিশন) দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের জন্য তাদের অনেক কাজ আছে।”

ইসির প্রথম বড় কাজ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, “ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা সবসময়ই কঠিন কাজ কিন্তু এখন কাজটি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ গত তিনটি নির্বাচনে দেশের ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “গত ১৫ বছরে যারা ভোটের যোগ্য হয়েছেন তাদের সবার নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এটি একটি বড় কাজ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সেখানে ভুলের সুযোগ নেই।”

এসময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “অনেক তরুণ-তরুণী দীর্ঘদিন পর জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। অতীতে তারা তাদের ভোটাধিকার ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিল।”

“সুতরাং, এই নির্বাচনে তাদের ভোটদান একটি স্মরণীয় ঘটনা হবে। এই অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আমার আন্তরিক ইচ্ছা এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো তরুণ ভোটাররা প্রায় ১০০ শতাংশ ভোট দিয়ে একটি ঐতিহ্য তৈরি করুন,” তিনি বলেন।

এ লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মসূচি গ্রহণের জন্য ইসিসহ সব সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস এমন একটি ঐতিহ্য তৈরি করার পরামর্শ দেন যাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোটাররা সব কেন্দ্রে শতভাগ ভোটদান নিশ্চিত করবে।

প্রধান উপদেষ্টা অঅরও বলেন, “আমরা যদি এটি নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সাহস করবে না।”

“নতুন ভোটার ছাড়াও সব ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় নিশ্চিত করতে হবে এবং জাল ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দিতে বিশেষ নজর দিতে হবে।” যোগ করেন অধ্যাপক ইউনূস।

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশিদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।”

“আমরা যদি নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করতে এবং নির্বাচনি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রশস্ততা এবং গভীরতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সময় দিতে হবে,” যোগ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বব্যাপী দেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার সকাল ১০টা থেকে ১০টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

ভাষণের শুরুতে তিনি দেশবাসীকে সালাম জানান। একই সঙ্গে একাত্তরের শহীদ ও ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শহীদদের স্মরণ করেন তিনি।