সারাবিশ্ব ডেস্ক : এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। এর মধ্যেই কিছু রাজ্যে কে জিতেছেন তাও অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে। আবার কিছু জায়গায় এখনো ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন ভোট দেওয়ার জন্য। সবার দৃষ্টি এখন সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর একটি-জর্জিয়ার উপর। সেখানে এখন দ্রুত ভোট গণনা চলছে। এই রাজ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন প্রায় চল্লিশ লাখ ভোটার। খবর: বিবিসির।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোট গ্রহণ প্রথম যেখানে বন্ধ হয়েছে সেটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় হয়েছিল। আর শেষ যে জায়গায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে তা হয়েছে রাত একটায়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর গভীর রাতে কিংবা পরদিন ভোরেই জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এবার অনেক রাজ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ায় সংবাদ মাধ্যমের জন্য সম্ভাব্য জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা জটিল হয়ে গেছে। যদিও কিছু রাজ্যের ফল আসতে শুরু হয়েছে। কোথাও খুব কম ব্যবধান দেখা গেলে সেখানে ভোট পুন:গণনারও সম্ভাবনা রয়েছে।

যেমন সুইং স্টেট পেনসিলভানিয়ায় ভোট আবার গণনার পর দুই প্রার্থীর মধ্যে আধা শতাংশ ব্যবধান দেখা গেলে পুন:গণনার প্রয়োজন হতে পারে। সেখানে ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোটের ব্যবধান ছিল ১ দশমিক ১ শতাংশ। আইনি চ্যালেঞ্জেরও সম্ভাবনা আছে। ভোট দেয়ার যোগ্যতা এবং ভোট ব্যবস্থাপনা নিয়ে নির্বাচনের আগেই একশ’র বেশি আইনি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে, গুরুত্বপূর্ণ মিশিগানসহ কিছু এলাকায় ভোট গণনার গতি বাড়ানো হয়েছে। সাতটি রাজ্য দোদুল্যমান বা সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমালা হ্যারিস – দুজনের যে কেউই এসব রাজ্যে জিততে পারেন। এবার রেকর্ড সংখ্যক ভোট পড়েছে। সরাসরি কেন্দ্রে কিংবা ডাকযোগে আগাম ভোট দিয়েছেন ভোটাররা।

জর্জিয়া- স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে সেখানে। জর্জিয়া সেক্রেটারি অফ স্টেট ব্রাড রাফেনসপার্জার যে ধারণা দিয়েছেন, তাতে ভোট শেষ হওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে গণনার বেশিরভাগ কাজ হয়ে যেতে পারে। নর্থ ক্যারোলাইনা- জর্জিয়ায় ভোট শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা পর এখানে ভোট শেষ হয়েছে। রাত শেষ হওয়ার আগেই সেখানকার ভোটের ফল আশা করা হচ্ছে।

পেনসিলভানিয়া- ভোট শেষ হয়েছে রাত আটটায়। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন কে জয় পাচ্ছেন এটি দৃশ্যমান হতে চব্বিশ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। মিশিগান- ভোট শেষ হয়েছে স্থানীয় সময় রাত নয়টায়। বুধবারের শেষ নাগাদ চূড়ান্ত ফল আসতে পারে। উইসকনসিন- ছোট ছোট কাউন্টিগুলোর ফল রাত নয়টায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই চলে আসার কথা। কিন্তু পুরো রাজ্যের ফল আসতে বুধবার পেরিয়ে যেতে পারে।

অ্যারিজোনা- স্থানীয় সময় রাত দশটা নাগাদ প্রাথমিক ফল আসতে শুরু করতে পারে। তবে রাজ্যের বড় কাউন্টি বলেছে, সেখানকার ফল বুধবার সকালের আগে নাও পাওয়া যেতে পারে। নেভাডা- এখানে ভোট গণনায় কয়েক দিনও লাগতে পারে। এই রাজ্যে ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত ডাকযোগে ভোট নেয়া হয়। তবে সেটি অবশ্যই ৯ই নভেম্বরের মধ্যে পৌঁছাতে হবে।

এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের টিভি নেটওয়ার্কগুলো নির্বাচনের পর চার দিন পর্যন্ত জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করেনি, কারণ পেনসিলভানিয়ার চূড়ান্ত ফল আসতে চারদিন লেগে যায়।

তবে ২০১৬ সালে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আর ২০১২ সালের নির্বাচনে বারাক ওবামার দ্বিতীয় নির্বাচনে মধ্যরাতের মধ্যেই তার জয়ের খবর আসে।

অবশ্য ২০০০ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ ও আল গোরের নির্বাচন ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। সেবার ফল চূড়ান্ত হতে পাঁচ সপ্তাহ সময় লেগে যায়। সুপ্রিম কোর্ট তখন ফ্লোরিডার ভোট পুন:গণনার পক্ষে মত দিয়েছিল, তাতে বুশ জিতে হোয়াইট হাউজে যেতে পেরেছিলেন।

সব বৈধ ভোট গণনা হয়ে গেলে ইলেক্টোরাল কলেজের বিষয়টি সামনে আসে। শুধু পপুলার ভোট নয় বরং যে প্রার্থী ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট বেশি পাবেন তিনিই জয়ী হবেন। সাধারণত যে রাজ্যে পপুলার ভোটে যিনি জয়ী হন তিনিই সেই রাজ্যের ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটগুলো পেয়ে থাকেন। এরপর ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস আনুষ্ঠানিক ভাবে ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করে এবং নতুন প্রেসিডেন্টকে কনফার্ম করে থাকে। যদিও ২০২০ সালের নির্বাচনের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। কংগ্রেস যখন বাইডেনের বিজয় নিশ্চিত করে তখন ট্রাম্প সমর্থকরা কংগ্রেস ভবনে ঢুকে পড়ে।

তিনি তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ফল প্রত্যাখ্যান করতে বলেছিলেন। কিন্তু পেন্স সেই অনুরোধ রাখেননি। নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যগুলো থেকে আসা ফল অনুমোদন না করা আইন প্রণেতাদের জন্য কঠিন। এমনকি ইলেক্টোরাল ভোট এককভাবে বাতিলের ক্ষমতাও ভাইস প্রেসিডেন্টের নেই। দু’জন প্রার্থীই ২৬৯টি করে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেলে টাই হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যেতে পারে। তখন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দেবে। এটিকে বলা হয় কন্টিনজেন্ট ইলেকশন।

অন্যদিকে, সেনেটে ভোট হবে ভাইস প্রেসিডেন্টের জন্য। তবে গত দু’শো বছরেও এমন কিছু ঘটেনি। নির্বাচনে যে প্রার্থী বিজয়ী হবেন, তিনি ২০২৫ সালের ২০শে জানুয়ারি শপথ নিবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটা হবে প্রেসিডেন্টের ৬০তম শপথ অনুষ্ঠান। নতুন প্রেসিডেন্ট সেখানে সংবিধান সমুন্নত রাখার শপথ নেবেন ও ভাষণ দেবেন।