মনিরামপুর প্রতিনিধি : দিনের পর দিন কু-প্রস্তাব দেয়াসহ নানা ধরনের উত্ত্যক্তের অপমান সইতে না পেরে শান্তনা সরকার (৩৮) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগ প্রতিবেশী প্রভাবশালি মহিরউদ্দীন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। মানসিক নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ মণিরামপুর উপজেলার বাহিরঘরিয়া গ্রামের উত্তম কুমার সরকারে স্ত্রী। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরদিন শনিবার দুপুরে মণিরামপুর থানা পুলিশ গৃহবধূর মরদেহ থানায় নিয়ে আসলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।

মৃত গৃহবধূর স্বামী উত্তম কুমার সরকার জানান, তাদের পরিবারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মাস দেড়েক আগে প্রতিবেশী মৃত. জব্বার গাজীর ছেলে মহির উদ্দীন চালের কার্ড করে দেয়ার কথা বলে তার কাছে ভোটার আইডি কার্ড ও মোবাইল ফোন নম্বর চায়। তিনি নিজে মোবাইল ব্যবহার না করায় তার স্ত্রীর কাছ থেকে নিতে বলেন। ভোটার আইডি কার্ড ও মোবাইল ফোন নম্বর নেওয়ার পর থেকে তার স্ত্রীর কাছে প্রায় ফোন করে কু-প্রস্তাবসহ নানা ধরনের অশ্লীল কথা বলে আসছিল। যা স্ত্রীর মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা আছে। তার স্ত্রী এসব কথা তাকে জানালে তিনি বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন, স্থানীয় বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তারকে অবহিত করেন। তারা মহির উদ্দীনকে সতর্ক করার পরও মোবাইল ফোনে উত্ত্যক্ত করা থেকে নিবৃত থাকেনি মহির উদ্দীন।

এক পর্যায় তার স্ত্রী মানসম্মানের কথা চিন্তা করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। ঘটনার দিন তার স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে মহির উদ্দীন ফের কু-প্রস্তাবসহ অশ্লীল কথা বলে। এক পর্যায় শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে তার স্ত্রী মানসম্মানের ভয়ে কীটনাশক পান করে। এরপর তাকে প্রথমে মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

উত্তম কুমার সরকার তার স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য মহির উদ্দীনকে দায়ী করে এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। এমনকি তার স্ত্রীকে কু-প্রস্তাব দেয়াসহ অশ্লীল কথা-বার্তার অডিও রেকর্ড মোবাইল ফোনে সংরক্ষিত করে রেখেছেন।

স্থানীয় গোপালপুর বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার জানান, ওই গৃহবধূ ও তার স্বামী উত্তম কুমার তাকে বিষয়টি অবহিত করলে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। স্থানীয় একাধিক গ্রামবাসী জানান, মহির উদ্দীনের বিরুদ্ধে এধরনের নারী ঘটিত একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালি হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন জানান, ২০ দিন আগে ওই গৃহবধূর স্বামী বিষয়টি তাকে জানালে তিনিও আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন।

মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী জানান, প্রাথমিকভাবে কোতয়ালি থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।