জাতীয় সংবাদ | তারিখঃ অক্টোবর ৩১, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 6016 বার
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম : ঢাকা-যশোর সেকশনের বহুল প্রতীক্ষিত ট্রেন সার্ভিসটি নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পদ্মা সেতু হয়ে চালু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পদ্মা রেল লিঙ্ক প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, আমরা নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর সেকশনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করার ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটির ১৫ নভেম্বর সকালে যশোর হয়ে কমলাপুর স্টেশনের উদ্দেশে বেনাপোল ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে এবং একই দিনে একটি ট্রেন (সুন্দরবন এক্সপ্রেস) কমলাপুর স্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, নবনির্মিত ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন রেল ট্র্যাকটি রূপদিয়া ও সিংগিয়া স্টেশন হয়ে বিদ্যমান খুলনাগামী রেল ট্র্যাককে সংযুক্ত করেছে। তিনি জানান, সরকার ৩৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কমলাপুর থেকে রূপদিয়া ও সিংগিয়া স্টেশন পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করেছে। প্রকল্প অনুযায়ী, বাংলাদেশ রেলওয়ের (জিআইবিআর) সরকারি পরিদর্শক ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত দুই দিনের লাইন পরিদর্শনশেষে প্রকল্পের কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হলে বন্ধ হয়ে যাবে খুলনা থেকে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী-ভাঙ্গা হয়ে চলাচল করা আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস। একই সাথে বন্ধ হবে খুলনা থেকে-চুয়াডাঙ্গা-ঈশ্বরদী, যমুনা সেতু হয়ে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন চিত্রা এক্সপ্রেস। ফলে এসব ট্রেন থেকে বঞ্চিত হবে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনার মানুষ।
এর আগে গত ২৫ মে রেলওয়ে (পশ্চিমাঞ্চল) থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু জনবলের অভাব, ইঞ্জিনের সংকটসহ নানা কারণে তা কতটা সম্ভব, এ বিষয়ে নিশ্চিত নন রেলের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন এই রেলপথ চালু হলে প্রতিদিন ২৪ জোড়া বা ৪৮টি যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। গত নভেম্বরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এখন এই পথে ১০টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। আগামী নভেম্বরে যশোর পর্যন্ত চালু হলে কিছু যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চালুর পরিকল্পনা আছে রেলের।
তথ্যমতে, ঢাকা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত বেনাপোল এক্সপ্রেস ও ঢাকা থেকে খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ট্রিপ বাড়তে পারে। এ ছাড়া ঢাকা-খুলনা রুটের নকশিকাঁথা ট্রেনেরও ট্রিপ বাড়াতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনা রুটের দূরত্ব ৪১২.৪০ কিলোমিটার। সময় লাগে ১০ ঘণ্টা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে সময় কমবে ৬ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। বর্তমানে চলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু-ঈশ্বরদী-পোড়াদহ-দর্শনা রুটে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন ১৯৮.৯০ কিলোমিটার রেলপথের ফলে দূরত্ব কমছে ২১৩.৫০ কিলোমিটার। আবার ঢাকা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত ৩৫৬.৪০ কিলোমিটার বর্তমান দূরত্ব। পদ্মা সেতু দিয়ে ১৭৪.৩০ কিলোমিটার নতুন রেলপথের কারণে ১৮২.১০ কিলোমিটার দূরত্ব কমছে। বর্তমানে সময় লাগে ৮ ঘণ্টা, নতুন রেলপথে ভ্রমণের সময় লাগবে মাত্র সোয়া ৩ ঘণ্টা। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই পথে ভ্রমণ সময় কমবে ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। প্রকল্প ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি চীন ঋণ হিসাবে প্রদান করেছে। গত বছরের অক্টোবরে এই লাইনের ঢাকা-ভাঙ্গা সেকশন চালু হয় এবং এই সেকশনে পাঁচটি ট্রেন চলাচল করছে। ঢাকা-যশোর রেললাইনটি চালু হলে ঢাকা ও যশোরের মধ্যে দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার এবং ভ্রমণের সময় অর্ধেক কমে যাবে। বর্তমানে যশোর পৌঁছাতে সময় লাগে আট ঘণ্টার বেশি। লাইনটি দেশের বৃহত্তম দুটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মংলাকে সরাসরি সংযুক্ত করবে।