গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ শেষ হয় গত ১৯ সেপ্টেম্বর। কূটনৈতিক পাসপোর্ট সঙ্গে থাকায় ভারতে তার বৈধভাবে থাকার সুযোগ ছিলো ৪৫ দিন। ঘণ্টা হিসেবে যা সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও শেখ হাসিনা এখনো ভারতে অবস্থান করছেন।

আলোচনা চলছে, তিনি কি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন কি না। ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রক্রিয়া সাধারণত জটিল। এ অবস্থায় শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে খবর বেরিয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (৯ অক্টোবর) শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী ওই আওয়ামী লীগ ওই নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে, সেই ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে বিশ্বের যেকোনো দেশের ভিসা নিয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন তিনি।’

ভারতে শেখ হাসিনাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে ওই নেতা জানান, শেখ রেহানাও সেখানে অবস্থান করছেন।

তবে ট্রাভেল ডকুমেন্ট পেলেও আপাতত শেখ হাসিনা ভারতেই থাকবেন। শিগগিরই ভারতের বাইরে ভ্রমণে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই তার।

সাধারণত কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদেরও সেই দেশের ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়। তাহলে কি শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ওই নেতা জানান, শেখ হাসিনার গুরুত্ব বিবেচনায় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে ভারত।

এদিকে শেখ হাসিনাকে ভারত সরকার ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ ইস্যু করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের আনুষ্ঠানিক উত্তর মেলেনি এখনো। এ বিষয়ে ভারত সরকার এখনো কিছু জানায়নি। তবে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী ব্রিফিংয়ের জন্য অপেক্ষা করুন। সেখানে প্রশ্ন করে দেখুন, মুখপাত্র কী বলেন!’

এদিকে সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী ভারতের সাবেক এক শীর্ষ কূটনীতিবিদ (যিনি দেশটির রাষ্ট্রদূত ছিলেন) সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ভারত যদি শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সত্যিই দিয়ে থাকে, আমি তাতে এতটুকুও অবাক হবো না। কারণ এই পরিস্থিতিতে এটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত পদক্ষেপ।’

ভারতীয় ওই কূটনীতিক বলেন, ‘ভারতের ম্যাকলিয়ডগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় যে কয়েক লাখ তিব্বতি শরণার্থী থাকেন, তারাও বেশিরভাগই ভারতের পাসপোর্টধারী নন। বরং এই ধরনের ট্রাভেল ডকুমেন্ট (সংক্ষেপে যেটাকে বলে ‘টিডি’) নিয়েই তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সফর করেন।’

সাবেক ওই রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘জানি না ভারত শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় (পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম) দেবে কি না। কিন্তু গত দুই মাসের ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে গড়িয়েছে, তাতে দালাই লামার ঘটনার সঙ্গে আমি কিন্তু শেখ হাসিনার কেসের অনেক মিল পাচ্ছি।’

‘ভারতে যত দিনই থাকুক, শেখ হাসিনা হাত গুটিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকবেন, এটা তো আর হতে পারে না। দালাই লামাও তাই করেছেন, রাজনীতি ও কূটনীতি চালিয়ে গেছেন এবং পৃথিবীর বহু দেশে সফর করেছেন।’

‘একইভাবে রাজনৈতিক প্রয়োজনে, বিশ্বময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে শেখ হাসিনাকেও ভারতের বাইরে যেতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। সেই বাস্তবতা অনুধাবন করে ভারত যদি তাকে টিডি বা আইসি দিয়ে থাকে, সেটাতে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই’ বলেন ওই কূটনীতিক।