গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : ফের প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল হচ্ছে চলতি সপ্তাহে। মাঠ প্রশাসন সদ্য নিয়োগ পাওয়া আওয়ামী লীগ অনুসারি চিহ্নিত বেশির ভাগ জেলা প্রশাসকদের থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে। এসব ডিসি নিয়োগ নিয়ে চলছে বিতর্ক। আবার নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের গোয়েন্দা সংস্থার গোপনীয় তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া তারাহুড়া করে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো এবার তাদের মাঠ প্রশাসন থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব ডিসিদের মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জন ডিসিকে তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পাশাপাশি চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রিপরিষদ সচিববাদে অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তার চুক্তি বাতিল করা হয়। ডিসি ও সচিব নিয়োগে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন, ব্যক্তিগত তথ্য ও কর্মজীবেনের ইতিবৃত্ত এবং সাফল্যসহ অন্যান্য যাচাই বাছাইকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বিশেষ করে ডিসি নিয়োগ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ঘটে নজিরবিহীন ঘটনা।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তারা ডিসি ফিট লিস্টে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পরীক্ষা দিয়েও ডিসি নিয়োগ না পাওয়ায় তারাই বেশি ক্ষুব্ধ হন। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, যোগ্যতা ও মেধা যাচাই বাছাই ছাড়াই অর্থের বিনিময়ে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর নেপথ্যে বিগত সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তারাই রয়েছেন। এসময় তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কক্ষ অবরুদ্ধ করে রাখেন। এমনকি কোন কোন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করেন। স্বাধীনতার পর জনপ্রশাসনে এমন ঘটনা ঘটেনি বলে অনেকেই মন্ত্রব্য করেছেন।

এ প্রেক্ষাপটে জনপ্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা ন্যাক্কারজনক বলে অভিহিত করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত কোন কোন শীর্ষ কর্মকর্তা সমালোচনা করে গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। তাদের মতে, এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রশাসনের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা। কঠোরভাবে তাদের লাগাম টেনে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। শুধু তাই নয়, এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এমএ আকমল হোসেন আজাদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান বলেছেন, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)র মাধ্যমে যোগ্যদের ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া কমিটির সকলেই অভিজ্ঞ ও দক্ষ। তারা প্রার্থীদের শারিরীক সক্ষমতা ও মেধা যাচাই করেই ডিসি নিয়োগ দিয়েছেন। তাছাড়া সকলেই ডিসি হবেন এমন কোন গ্যারান্টি নেই। এখানে কাউকে মুখ দেখে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যারা বিশৃঙ্খলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া মাঠ প্রশাসন থেকে থেকে ৩বছর ধরে যেসব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রয়েছেন তাদেরও প্রত্যাহার করা হবে। বিপুল পরিমান আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ত্যাগী, বঞ্চিত ও যোগ্য কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে আওয়ামীলীগ পরিবার সংশ্লিষ্ট এবং বিগত ১৫ বছরে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদেরই আবার ডিসি পদে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকা ডিসি নিয়োগের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা কাযালয়ের পরিচালক প্রশাসন (অতিরিক্ত সচিব) এবং জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের (এপিডি) মো. আব্দুর রউফ এসব নিয়োগের মুল দায়িত্ব পালন করেছেন বলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ।

ইতোমধ্যে তিন কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়ণ নিয়ে মাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে খতিয়ে দেখতে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। এদিকে ঘুষের বিনিময়ে ডিসি নিয়োগ কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়নের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘তিন কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়ন’ শিরোনামে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত চেকের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়, উক্ত কমিটি চেকের সত্যতা যাচাই করে দিনের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তদন্ত কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (পরিকল্পনা-১ শাখা) মো. লিয়াকত আলী সেখ।

ন্যায়বিচার পেতে ২০১৯ সালে ফেনীর সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) পি কে এম এনামুল করিমের কাছে গিয়েছিলেন নুসরাত জাহান রাফি ও তার মা শিরিন আক্তার। কিন্তু ন্যায়বিচারের পরিবর্তে সে সময় নুসরাতের বিরুদ্ধে ‘নাটক’ সাজানোর অভিযোগ থাকার পর ও সিলেট জেলার ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু বাকীদের মাঠ থেকে প্রত্যাহার করা হয়নি।

এছাড়া ২৫ জেলা প্রশাসকের মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসাবে পরিচিতরা নিয়োগ পেয়েছেন। প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, মাঠ প্রশাসনে ২৫ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে তাদের বেশির ভাগই আওয়ামীলীগ সরকারের সুবিধা ভোগী।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উপসচিব পদমর্যাদার এসব কর্মকর্তাকে জেলা ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২২ সালে আওয়ামীলীগ সরকার অন্তত ১০ জনের নিয়োগ বাতিল করেছিলো। অথচ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় আবারো ছাত্রলীগের নেতারাই ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এসব জেলার ডিসি প্রত্যাহার হতে পারে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

দেশের ৫১টি জেলার ডিসি নিয়োগ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক শেষ হয়নি। চলছে গোপনীয় তদন্ত। আওয়ামী লীগ সরকারের আশির্বাদপুষ্ট এসব কর্মকর্তার অপসারণ চেয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ডিসিদের বিরুদ্ধে উস্থাপিত অভিযোগ গুলো তদন্ত শেষ। যাদের বিষয়ে তথ্য প্রমান সঠিক পাওয়া গেছে তাদের মাঠ থেকে প্রত্যাহার হতে পারেন।

সম্প্রতি ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের শুনানি শেষ হয়েছে। এরপর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া দেয়া হয়েছে। তবে এখনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে তাদের প্রত্যাহার করে নতুন ডিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। তা না হলে মাঠ প্রশাসনে অস্থিরতা আরো বাড়বে। আবার যারা ডিসি নিয়োগ পেয়েছেন তারা কাজ করতে পাবরে না বলে মনে করছেন প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগের ঘটনায় আলোচনায় আসা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কে এম আলী আযমকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে বদলি করা হয়েছে। গত বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। অন্তরবর্তী সরকার ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দুই দিনে ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়। তবে যাঁরা ডিসি হতে পারেননি, তাঁরা এই দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হট্টগোল করেছিলেন। উপসচিব পর্যায়ের ওই সব কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ(এপিডি) শাখার যুগ্ম সচিব কে এম আলী আযমের কক্ষে ঢুকে হইচই-হট্টগোল শুরু করেন। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আট জেলায় নতুন ডিসির নিয়োগ বাতিল করে। এসব পদে শিগগির নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এ ছাড়া চার ডিসির জেলা পরিবর্তন করা হয়। ইতিমধ্যে নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিরা জেলায় যোগদান করেছেন। যারা সদ্য জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেছেন প্রতিটি জেলায় গোয়েন্দা তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। অনেক জেলার ডিসির গোয়োন্দা প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে।

এদিকে শুনানিতে অংশ নেওয়া বঞ্চিত একাধিক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা একপেশে করছেন। বিশেষ বিবেচনায় ডিসি ফিটলিস্ট প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। এতে তাঁর পিএসসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাতজন কর্মকর্তা ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান। ও ঢাকার ডিসি মো,তানভীর আহমেদ এর প্রত্যাহার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করা হয়েছে। ঢাকার সর্বস্তরের নাগরিক সমাজের ব্যানারে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে দাবি মেনে না নিলে জেলা প্রশাসককে অসহযোগিতাসহ আরও বড় ধরনের কর্মসূচি পালনের হুমকি দেয়া হয়। এর আগে লক্ষ্মীপুরের নবনিযুক্ত ডিসি রাজীব কুমার সরকার এবং খুলনার ডিসির অপসারণ চেয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে লক্ষ্মীপুর ও খুলনার সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ। তার আগে নাটোরের ডিসির বিরুদ্ধে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হলে তাকে লক্ষ্মীপুর বদলী করা হয়।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের ডিসি নিয়োগ নিয়ে ঘটে যাওয়া নজিরবিহীন ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটি নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে এবং তিন কোটি টাকা চেক পাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

৫৯টি জেলার ডিসি নিয়োগের পর এসব কর্মকর্তাদের আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ও পতিত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তারা সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপরই নড়ে চড়ে বসে সরকার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৯ জন ডিসির নিয়োগ বাতিল এবং ৪ জনের রদবদল করা হয়। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের এ ক্ষোভের বিষয়টি তদন্তে স্বাস্থ্য সচিব আকমল হোসেন আজাদকে প্রধান করে পরদিনই এ কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। তবে ডিসি নিয়োগের সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) বোর্ডে থাকা এ সদস্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেই ৭ জনকে জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। যা নিয়ে শুরুতেই বিতর্ক চলছে। তা এখনো থামছে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত গঠিত কমিটি সেদিনের ঘটনা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ৭জন কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রেজাউল মকসুদ জাহেদীর কক্ষে বক্তব্য গ্রহণকালে একরকম পুলিশের ইন্টারোগেশন সেলের মতো আচরণ করে কমিটি। এমনকি আলাদাভাবে ১৫ মিনিট থেকে প্রায় ৩০ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য গ্রহণকালে সরকারি এসব কর্মকর্তাদের কাউকেই বসতে দেয়া হয়নি। এ থেকে বাদ যাননি কোনো মহিলা কর্মকর্তাও। এসময় প্রশ্নবানে জর্জরিত করা হয় কর্মকর্তাদের। প্রশ্নকালে পতিত সরকারের পতনে তিনিসহ সরকারি কোনো কর্মকর্তারই কোনো ভূমিকা ছিলনা বলে উল্লেখ করেন তদন্ত কমিটির প্রধান। তবে এর বিরোধীতা করে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নিজেদের নানা ভূমিকার কথা তুলে ধরলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। কোনো সরকারের পতন করা কর্মকর্তাদের কাজ নয়। এমনকি যারা সরকার পতনে ভূমিকা রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দেন এই সচিব। তিনি বলেন, কোনো কর্মকর্তা ছাত্রদল করে প্রশাসনে এসেছেন পদোন্নতি বা পদায়নে সেটি বিবেচনায় নেয়ার বিষয় নয়। তদন্ত কমিটির প্রধানের এমন আচরনে ব্যাপক ক্ষুব্ধ বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তারা। তাদের কেউ কেউ কমিটি প্রধানকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, তাহলে ৫৯ জন ডিসির মধ্যে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ পরিবার ও পতিত সরকারের সুবিধাভোগীরা কিভাবে পদায়ন হলেন! তাদেরকে কি আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট হিসেবেই বিবেচনায় নেয়া হয়েছে কিনা? তবে এই প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে বাধ্য নন বলে জানান। তিনি বলেন, এটি এসএসবির ব্যাপার। তাছাড়া বোর্ড সুপারিশ করার পর প্রধান উপদেষ্টা তাদের ডিসি নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলেও দাবি করেন কমিটির প্রধান। তিনি বলেন, ৭/৮শ কর্মকর্তার ভাইভা নেয়া হয়েছে। সবাইকে ডিসি বানানো সম্ভব নয়। এসময় জেরার মুখে থাকা কর্মকর্তারা বলেন, স্যার আমরা ডিসি হতে চাইনা। আমরা চাই বঞ্চিত ও দক্ষ কর্মকর্তারাই যেন এ সম্মান পান। সেই সাথে বিগত সরকারের কোনো দোসর এবং পতিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তাকারী কোনো কর্মকর্তা যাতে ডিসি পদে নির্বাচিত না হন সেই বিবেচনা থাকা উচিত বলে মনে করেন তারা। এসময় পত্র পত্রিকায় কিভাবে ডিসিদের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ হলো সেটি সম্পর্কে জানতে চান সচিব। জবাবে কর্মকর্তারা বলেন, স্যার এটি সাংবাদিকদের কাজ। আমরা জানিনা। শেষে কারা সাংবাদিকদের এসব তথ্য সরবরাহ করেছে সেটি দেখা হবে বলেও পরোক্ষ হুমকি দেন।

ছাত্র-জনতার গণ অভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও বিভিন্ন স্থানে ওই সরকারের সুবিধাভোগীদের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন অব্যাহত রয়েছে।বিষয়টি নিয়ে একযুগেরও বেশি সময় ধরে বঞ্চিত ও বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। সর্বশেষ জেলা প্রশাসক পদে পদায়ন নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছে সরকার। গত প্রায় মাসখানেক ধরে ব্যাপক যাচাই বাছাই করে ফিট লিস্ট তৈরি করা হলেও সেখানে বিগত সরকাররে সুবিধাভোগী ও আওয়ামী পরিবারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে অনেকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভ, হট্রগোলে জড়ান বঞ্চিত ও বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তারা। এসব ঘটনা তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। এমন প্রেক্ষাপটে দুই দফায় ৫৯টি জেলায় ডিসি নিয়োগ দেয়া হলেও বুধবার ৯টি জেলার ডিসি পদে নিয়োগ দেয়া প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।

পাশাপাশি চারজনের পদায়নকৃত জেলা বদল করা হয়েছে। ৫১টি জেলার ডিসি তাদের নতুন পদে যোগদান করেছেন। এর আগে এক আদেশে পদায়ন করা ডিসিদের কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে আপাতত পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থানের নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে প্রশাসনের চরম এ অস্থিরতার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের দুইজন যুগ্মসচিবকে দায়ি করছেন বিক্ষুব্ধরা। তাদের অভিযোগ, বিপুল পরিমান আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ত্যাগী, বঞ্চিত ও যোগ্য কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে আওয়ামী লীগ পরিবার সংশ্লিষ্ট এবং বিগত ১৫ বছরে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদেরই আবার ডিসি পদে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এপিডির একজন যুগ্ম সচিব। সেজন্য অবিলম্বে ডিসি নিয়োগ দেয়া এসব প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিলের দাবি তাদের।

৫ আগস্ট বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। বিগত সরকারের সময়ে দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়াই পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধার কারণে উল্লেখযোগ্য কোনো কাজই করতে পারেনি মন্ত্রণালয়টি। কারণ মন্ত্রণালয়টির সিনিয়র সচিবকে তারা সবসময় সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, সরকারের প্রশাসন সংস্কারের অংশ হিসাবে শিগগিরই মাঠ প্রশাসনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। মাঠ প্রশাসনে ডিসি এবং কিছু এডিসিকে সরিয়ে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে। তা বাস্তবায়নে কাজ চলছে।