খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 5522 বার
শেখ কাজিম উদ্দিন : চিরকালের জন্য না ফেরার দেশে চলে গেলেন বেনাপোলের সকলের পরিচিত ফারুক পাগল। রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর/২৪) বিকেল ৩ টার সময় বেনাপোল স্থলবন্দরের ৫ নং গেটের বিপরীতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো (আনুমানিক) ৭০ বছর। পাগলটির মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিন তার মৃত্যুর পর থেকেই ছিলো ফারুক পাগলকে নিয়ে বেনাপোলবাসীর মুখে শোকের কথা। এশার নামাজ বাদ, বেনাপোল মানব কল্যাণ সামাজিক সংগঠনের সার্বিক আয়োজনে মাহবুবা হক এতিমখানা মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে মরহুমের জ্বানাযা শেষে গাজীপুর গণ-কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
এ বিষয়ে বেনাপোলের সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও গ্রামের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুল মুননাফ জানান, তিনি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে শুরু করে স্থলবন্দরের ১নং গেটের সামনে পর্যন্ত চলাচল ও বিভিন্ন দোকানের সামনে বসে রাত্রি যাপন করেছেন। মৃত্যুর পূর্ব-মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি সকল মানুষের খাদ্য বা সাহায্য গ্রহণ করেননি। এমন প্রকৃতির মনের মানুষ দেখা এখন বিরল।
এ পাগলটি সম্পর্কে এলাকার গণমাধ্যম কর্মীদের যেকথাটি আজও মনের ভিতর দাগ কাটে- একদা গভীর রাতে প্রচন্ড শীতের মধ্যে তৎকালীন শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বেনাপোলে এসে পথচারী পাগলদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করছিলেন। এমন সময়ে এ পাগলকে তিনি বেনাপোল চেকপোস্টের রিক্সাস্ট্যান্ড মসজিদ মার্কেটের একটি দোকানের সামনে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখেন। পাগলের প্রতি ভালবাসা উজাড় করে দিয়ে তিনি একটি কম্বল ফারুক পাগলকে পরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ( পাগলটি ) তা গ্রহণ করেননি।
তিনি (পাগলটি) একটুখানি বিরক্ত বোধ করে আক্ষেপের সহিত বলেছিলেন, আমার গায়ে তো একটি চাদর আছে! এতেই আমি শীত পার করে দিতে পারবো, এজন্য আমার কম্বল প্রয়োজন নেই। যার কিছু নেই বা যার প্রয়োজন’ তাকে আপনি দিয়ে আসেন। সেসময়ে তিনি কারও অনুরোধ বা জোড়াজোড়িতে সেই কম্বল গ্রহণ করেননি। যা এলাকার গণমাধ্যম কর্মীদের এখনও পর্যন্ত তাক লাগায়।
বেনাপোল চেকপোস্টে অবস্থিত রাজা বাদশা মানি চেঞ্জারের প্রোপ্রাইটর ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব আবুল বাশার জানান, প্রায় ৫/৬ বছরের বেশি সময় ধরে বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকায় এই পথচারী ফারুক পাগলের ছিলো চলাফেরা। তবে, কখনও দেখা যেতোনা তার প্রসাব, পায়খানা ও গোছল করতে। তারপরেও ছিলোনা পাগলটির শরীরে কোনো ধরণের বাজে দূর্গন্ধ, এমনকি তিনি কখনও কারও কাছে খাবারও চাইতো না। আমার দৃষ্টিতে তিনি নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ ছিলেন বলে জানান এ সামাজিক ব্যক্তিত্ব আবুল বাশার।
উল্লেখ্য, তার বাড়ি কোথায়? বা কে তার আপন জন তা বেনাপোলবাসীর কারও জানা নেই।