নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ (১২ রবিউল আউয়াল) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এই দিনে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত মহানবী হযরত মুহম্মদ (দ.) এর আবির্ভাব ঘটে।

৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)।

মহানবী হযরত মুহম্মদ (দ.) এর জন্মের আগে গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। ওই সময় আরবের মানুষ মহান আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃংখলা। এ যুগকে বলা হতো আইয়ামে জাহেলিয়াত। তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করতো। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতাআলা রাসুলুল্লাহকে (দ.) দুনিয়ায় পাঠান।

মহানবী (দ.) অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত লাভ বা মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভ করেন।

লাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) হিসেবে পালন করে থাকে।

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (দ.)-এর ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ-না’ত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, ইসলামী বইমেলা, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।

এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪টি ইসলামিক মিশন ও ৮ টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়াও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলিমকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে; প্রতিটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার জন্য অনিন্দ্য সুন্দর অনুসরণীয় শিক্ষা ও আদর্শ রেখে গেছেন; যা প্রতিটি যুগ ও শতাব্দীর মানুষের জন্য মুক্তির দিশারি হিসেবে পথ দেখাবে।’

পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘মহান আল্লাহ রাববুল আলামিন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)-এর ওপর সর্বশেষ মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করে জগতে তাওহিদ প্রতিষ্ঠার গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অসীম ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সীমাহীন ত্যাগের মাধ্যমে তিনি শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সারাবিশ্বে পবিত্র কুরআনের মর্মার্থ ছড়িয়ে দেন। তিনি সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নারীর মর্যাদা ও অধিকার, শ্রমের মর্যাদা এবং মনিবের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট ভাষায় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তার বিদায় হজের ভাষণ সমগ্র মানবজাতির জন্য আলোর দিশারী হয়ে থাকবে।’

এদিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। বন্ধ থাকবে সংবাদপত্রও। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেল দিনটিতে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলোও বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।