নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারের ভুলত্রুটি নির্দ্বিধায় পত্রিকায় প্রকাশ করে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস।

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে এই আহ্বান জানান তিনি।

বৈঠক শেষে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা জানান।

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম

মাহফুজ আনাম বলেন, “তিনি (ড. ইউনূস) আমাদেরকে বলেছেন, তিনি সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করেন এবং আমাদের কাছে তার বিশেষ আবেদন হচ্ছে, আমরা যেন আমাদের লেখনীর মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করা, তারপর বিভিন্ন সাজেশন যেটা আমাদের থাকে সেটা তিনি খুব সাগ্রহে গ্রহণ করেছেন।”

মাহফুজ আনাম আরও বলেন, “তিনি (প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কাছে আহ্বান করেছেন যে, এই সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি যেন আমরা ধরিয়ে দিই। তিনি বলেছেন, আমরা যেন সোচ্চারভাবে এই সরকারের ভুল ত্রুটি নির্দ্বিধায় কাগজে ছাপি এবং এই সরকারকে সহযোগিতা করি।”

ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, “বহির্বিশ্বে আমাদের বাংলাদেশের যে ভাইয়েরা আন্দোলনের শরিক হয়েছিলেন এবং ওখান থেকে আমাদের দেশের পরিবর্তনে ছাত্রদের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন, ওখানকার সরকার তাদের ৫৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। সেখানে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেখানকার আমিরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত আনন্দের খবর।”

তিনি আরও বলেন, “আজকের আলোচনার ব্যাপারে আমরা সম্পাদকরা যারা একসঙ্গে হয়েছিলাম, আমরা প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা এবং এই সরকারের যে কর্মকাণ্ড তার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। আমরা চাই একটা নতুন দিগন্ত বাংলাদেশে উন্মোচিত হোক। সেখানে আমি একজন সম্পাদক হিসেবে যে প্রশ্নটা উপস্থাপন করেছি সেটা হচ্ছে, সাংবাদিকদের নিশ্চয়তা এবং সাংবাদিকদের নামে যে যত্রতত্র খুনের মামলা সেগুলো যেন বন্ধ হয় এবং এই ব্যাপারে সন্তোষজনক সুস্পষ্ট একটা অবস্থান নেন। সাংবাদিকদের যদি সেভাবে দোষ থাকে তারা যদি দুর্নীতির সঙ্গে থাকে সেই ইস্যু নিয়ে আলাদা মামলা হবে কিন্তু এভাবে যেন না হয়।”

মাহফুজ আনাম বলেন, “আলোচনার মধ্যে এটা আসছে যে আমরা চাই বাংলাদেশে একটা জাতীয় ঐক্য স্থাপিত হোক। আমরা বিভিন্নভাবে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত জাতি। আমরা যেন একটা ঐক্য স্থাপন করতে পারি। আমরা এটাও বলেছি যে এই সরকারের কাছ থেকে আমরা কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আশা করছি। এর মধ্যে সংবিধান পরিবর্তন, বিভিন্ন যে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো আছে এন্টি করাপশন কমিশন, হিউম্যান রাইটস কমিশন, নির্বাচন কমিশন, এগুলো রিফর্ম করা। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন যেন ভবিষ্যতে সব নির্বাচনে সত্যিকার অর্থে জাতির এবং ভোটারদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটান এমন একটা সংস্থা চাই আমরা।”

“আমরা আরেকটা কথা বলেছি, বিএসএস, বিটিভি এবং রেডিও যেটা সরকারের নিয়ন্ত্রণে এদেরকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া, তারা যেন পেশাগতভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে।” যোগ করে মাহফুজ আনাম।

তিনি বলেন, “যতগুলো কালা-কানুন আছে, সেগুলো যেমন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, এ সমস্ত আইন যাতে এটলিস্ট এই মুহূর্তে ঘোষণা হয় যে এইগুলোতে সাংবাদিক নিপীড়নের যে অধ্যায়গুলো আছে এগুলো কার্যকর হবে না এবং এগুলোর রিফর্মটা তারা সময় নিয়ে করবেন।”

ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, “এখানে (বৈঠকে) আরো একটা প্রস্তাব এসেছে যে, কনস্টিটিউটাল রিফর্মের (সংবিধান পরিবর্তন) যে ব্যাপারটা, সেখানে প্রধান উপদেষ্টা যদি মনে করেন একটা গ্রুপ করে দেওয়া, একটা বিশেষ কমিটি করে দিয়ে সব ধরনের আইনের যে পরিবর্তন জুডিশিয়ালি ইন্ডিপেন্ডেন্স, পুলিশ রিফর্ম- এগুলো সব কিছু যদি একটা গ্রুপের কাছে হয় বা বিভিন্নভাবে হতে পারে, অথবা এগুলোর আমরা পরিবর্তন চাই এগুলোর আমরা গণতান্ত্রিক রিফর্ম চাই।”