নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বৈরাচারী সরকারের আমলে গঠিত প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগে চলছে ব্যাপক সংস্কার। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অনেক কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে অবসর, চুক্তি বাতিলসহ ঢেলে সাজানো হচ্ছে প্রশাসন। স্থানীয় সরকার বিভাগের যত জনপ্রতিনিধি আছে ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া বাকী সবাইকে ইতোমধ্যে সরানো হয়ে গেছে।

সোমবার (১৯ আগস্ট) রাতের মধ্যেই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সিটি ও পৌর মেয়র এবং উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে অপসারণ করেছে সরকার। এবার অপেক্ষা জেলা প্রশাসকদের। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদেকেও সরানো হতে পারে বলে আলোচনা চলছে।

জনপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শিগগির জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদেও পরিবর্তন আসবে। পর্যায়ক্রমে ডিসিদের প্রত্যাহার করে তাদের জায়গায় নতুন ডিসিদের নিয়োগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারকে সহযোগিতা ও বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দায় নিতে হচ্ছে অধিকাংশ ডিসিদের। এসব নিয়ে অস্বস্তিতে থাকার কথা সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জানিয়েছেন অনেক জেলার ডিসিরা।

এমন পরিস্থিতিতে সব জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি বিদ্যমান জেলা প্রশাসক পদায়ন নীতিমালা ও আগের তৈরি ডিসি ফিট লিস্ট বাতিল করা হয়েছে।

বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে নতুন ডিসি দু–এক দিনের মধ্যেই নিয়োগ দেওয়া হবে। নতুন ডিসি নিয়োগের মানদণ্ড হবে মেধা, দক্ষতা ও সততা। এই মানদণ্ড নির্ধারণে সরকারকে সহযোগিতা দিতে বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত এই তিন ব্যাচের পাঁচ কর্মকর্তাকে সমন্বয়ক করা হয়েছে। তারা হলেন বিসিএস ২৪ ব্যাচের নুরজাহান খানম ও নজরুল ইসলাম, ২৫ ব্যাচের নুরুল করিম ভুইয়া ও ফরিদা খানম এবং ২৭ ব্যাচের সারোয়ার আলম।

ডিসিদের প্রত্যাহার ও নতুন ডিসি নিয়োগ নিয়ে আজ সোমবার রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কক্ষে পাঁচ সমন্বয়কের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাঁদের উল্লিখিত সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ এসএসবির একাধিক সদস্য।

বৈঠকে তারা জানান, সরকার বিদ্যমান জেলা প্রশাসক পদায়ন নীতিমালা ২০২২ ও আগের তৈরি ডিসি ফিট লিস্ট বাতিল করেছে। আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্য সব জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হবে। বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে নতুন ডিসি দু–এক দিনের মধ্যেই নিয়োগ দেওয়া হবে। এ কাজে এই পাঁচ সমন্বয়ক সরকারকে সহযোগিতা করবে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর জনপ্রশাসন ও পুলিশে নানা ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জনপ্রশাসনে বড় পরিবর্তনে হাত দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ১৪ আগস্ট এক দিনেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ ১১ জন সচিবের চুক্তি বাতিল করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবকে করা হয় বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি)।

এছাড়া পদ-পদায়ন থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অনেককে ‍ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে এসেছে বড় পদোন্নতি। অবসর প্রাপ্ত ৫ অতিরিক্ত সচিবকে প্রথমে চুক্তিভিত্তিক সচিব ও পরে সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, পুলিশ ও জনপ্রশাসনে শিগগিরই আরও কিছু পরিবর্তন করা হবে। এরমধ্যে বড় ধরনের সংস্কার হবে সব জেলার প্রশাসকদের (ডিসি) অপসারণ।