বেনাপোল বন্দরের শ্রমিক ইউনিয়ন দখলকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের তান্ডবলীলায় বন্দর নগরী ছিল অবরুদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন দখলকে কেন্দ্র করে নারকীয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের তান্ডবলীলায় বন্দর নগরী অবরুদ্ধ ছিল। দীর্ঘ ২ঘন্টা যাবত অঝর ধারায় বৃষ্টির মতো শতাধীক বোমার বিষ্ফোরণ ঘটায় আপনজন হারানোর ভয়ে চারিদিকে পাড়ায়-মহল্লায় মা-বোনদের আহাজারি আর স্কুল-মাদ্রাসার কচিকাচা শিক্ষার্থীদের চিৎকারে এলাকার বাতাশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। বন্দরের সকল পণ্য লোড-আনলোডসহ কাস্টমসের কার্যক্রম ও আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পিছু হটেযায় বন্দরের শ্রমিক সংগঠন দখল করতে আসা বোমাবাজরা। সোমবার বেলা আনুমানিক ১০টা ১৫ মিনিটের সময় বেনাপোল বন্দর এলাকায় এ ঘটনা শুরু হয়।

বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা জানান, বেনাপোল পৌরসভার কাউন্সিলর রাশেদের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল শ্রমিকদের পোশাক পরিহিত অবস্থায় এখানে প্রবেশ করে এবং আমরা কোনকিছু বোঝার আগেই তারা মুহুমুহু বোমার বিষ্ফোরণ ঘটাতে থাকে। একের পর এক বোমার বিষ্ফোরণ হওয়ায় কোনভাবেই তাদের পথ গতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছিল না। প্রায় ২ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বোমাবাজরা পালিয়ে যায়। পরে শ্রমিকদের বিক্ষোভে দিনব্যাপী বন্দরের সকল পণ্য লোড-আনলোডসহ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় পত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন দখলকে কেন্দ্র করে কাউন্সিলর রাশেদের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ দল বন্দর এলাকায় বোমার বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের দখল নিতে আসে। পরে বন্দরে অভ্যন্তরে থাকা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা প্রতিবাদের মুখে তাদেরকে পাল্টা ধাওয়া করে। মুহর্তে এলাকার পরিবেশ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। চলে দু-গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরে শার্শা থানা পুলিশ, ঝিকরগাছা থানা পুলিশ, বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশ(ডিবি), র‌্যাব ও শার্শা উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

বেনাপোল পৌর কাউন্সিলর কামরুন নাহার আন্না জানান, সোমবার সকাল ১০টার দিকে অঝর ধারায় বৃষ্টির মতো বোমা বিষ্ফোরণ হওয়ায় বন্দর সংলগ্ন গ্রাম গাজিপুর, ছোটআঁচড়া, নামাজগ্রাম, বড়আঁচড়াসহ কয়েক গ্রামের মানুষের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে স্বচোক্ষে গাজিপুর ওয়ার্ডবাসীর ভয়জড়িত কণ্ঠে আহাজারি দেখেছি, বোমার স্প্রীন্টারে সন্তান পরিজনসহ আপনজন হারানোর ভয়ে কান্না করতে দেখেছি প্রতিবেশিদের। স্কুল-মাদ্রাসায় কচিকাচা শিক্ষার্থীদের হুতোশ হয়ে কাঁদতে দেখেছি। প্রায়ই বেনাপোল বন্দরের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এমন রক্তক্ষয়ী সর্বনাশী সংঘর্ষ দেখাযায়। ঝরেযায় নুন আনতে পান্তা ফোরানো অজ¯্র শ্রমিকের তাজা রক্ত। বন্দর কেন্দ্রিক প্রতিনিয়ত এমন উত্তপ্ত পরিবেশ থেকে বেনাপোলবাসী পরিত্রাণ চায় বলে জানান তিনি। বলেন, শান্তিপ্রিয় বেনাপোলে এমন উত্তপ্ত পরিবেশ কেউ দেখতে চায়না। এমন সন্ত্রাসীয় কার্মকান্ডের একটা বিহীত হওয়া দরকার।

যশোরের নাভারন সার্কেল এএসপি জুয়েল ইমরান জানান, বেনাপোল বন্দরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষ তৈরি হয়। সেখানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এ ঘটনার সঙ্গে রাশেদ কাউন্সিলর নামে একজনের জড়িত থাকার কথা আসছে। তবে, অপরাধী যেই হোক আর এই ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন্দর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ঘটনা পরিদর্শণ করেছেন শার্শা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মীর আলীফ রেজা, সহকারি কমিশনার ভূমি রাসনা শারমিন মিথিসহ উপজেলা প্রশাসন আ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।

এসাথে বোমা বিস্ফোরিত বেনাপোল বন্দর এলাকা পরিদর্শণ করেছেন শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, যুগ্ম সম্পাদক ও যশোর জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নাসির উদ্দিন সহ আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ।