আব্দুল্লাহ আল-মামুন, স্টাফ রিপোর্টার : ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা নিপীড়িত হন। তারপরেই স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা ডাক আসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের কাছ থেকে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের সকল মানুষ স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অবশেষে ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে তারা ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা।
২৬মার্চ শনিবার সকালে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজার সভাপতিত্বে উপজেলা চত্বরের অডিটোরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তার বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীনতা মানেই হলো- পরাশক্তির কাছে মাথা নত না করে কিছু ছিনিয়ে নেওয়া। ১৯৭১ একটি বিদ্রোহ, বিপ্লব ও সংগ্রামের নাম। ‘স্বাধীনতা দিবস’ হল মায়ের ভাষায় কথা ও নিজের দেশের সম্মান রক্ষা করার রাজপথ কাপানো মিছিল, স্লোগান, আন্দোলনে মুখরিত একটি মুহূর্ত। এই দিনে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা তাদের বুকের তাজা রক্তে পিচ ঢালা রাজপথে সিক্ত করে মায়ের সম্মান ও দেশের মানুষের অধিকারকে আদায় করেছে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর কবল থেকে। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ এদেশের জাতীয় জীবনে একটি স্মরণীয় ও কালরাত। আর ১৯৭১ সালের মার্চ মাসকে কেন্দ্র করেই বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা ঘটে এবং শোষণ ও পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করে স্বাধীনতাকামীরা। আর এ স্বাধীনতাকে পশ্চিমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনেন বীর মুক্তিযোদ্ধারাই। তাই আমরা আজ মায়ের ভাষায় কথা বলা সহ স্বাধীনভাবে চলতে পারছি।

ভৌগলিক স্বাধীনতা না থাকলেও ভাষার স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। কিন্তু বিশ্ববাসী বিষ্ময়বিভুতচিত্তে অবলোকন করেছে। জন্মগত অধিকার মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য বাংলার ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক, পেশাজীবী, কৃষক, মজুর থেকে শুরু করে সর্বস্তরের লেলিয়ে দেয়া পুলিশের গুলিতে জীবন দিয়েছে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ অসংখ্য তাজা প্রাণ। রক্তের বন্যায় সিক্ত হয়েছে বাংলা মায়ের বুক।

তিনি আরো বলেন, আমরা জানি, ১৯৪৭ সালে ভারত বর্ষ ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হয় এবং সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদ্বয় ঘটে। উভয় পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে। তারা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি শুরু থেকেই বৈষম্য নীতি ও শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন এবং ২৪ মার্চ কার্জন হলের অনুষ্ঠানেও তিনি এ ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেন। ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকার এক জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে, বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সমগ্র বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী। আর তারই ফলোশ্রুতি আমাদের এ স্বাধীনতা।

এ সময় প্রধান অতিথির ব্ক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়ব আহমেদ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ড মোজাফ্পর হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের প্রমুখ।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ সালেহ আহমেদ মিন্টু, শার্শা থানা ইনচার্য মামুন খান, বেনাপোল পোর্ট থানা ইনচার্য কামাল হোসেন, বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজি এনামুল হক মুকুল, সাধারন সম্পাদক আলহাজ নাসির উদ্দিন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আলেয়া ফেরদৌস, উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সোহারাব হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান কবির উদ্নি তোতা, শার্শা সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কাওছার আলী, সাধারন সম্পাদক আলহাজ মোরাদ হোসেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর রহিম সরদার প্রমুখ।

এ দিকে এদিন সকাল ৬টায় শার্শার কাশিপুরে বীর শ্রেষ্ট নুর মোহাম্মদের কবরে পুস্পস্তবক অর্পন করেন সংসদ সদস্য আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন। এরপর সকাল সাড়ে ৭টায় উপজেলা চত্বরে জাতির জনক শেখ মুজবেুর রহমানের সৃতি মুড়ালে দলীয় নেতাকর্মী ও প্রশসিানিক কর্মকর্তাদের নিয়ে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান। সকাল ৯টায় শার্শা স্টেডিয়াম মাঠে এক মনোজ্ঞ কুজকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। সকাল সাড়ে শার্শা বুরুজবাগান পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে খেলায় অংশ নেন সংসদ সদস্য আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন। সেখানে তিনি গোলক নিক্ষেপ খেলায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে বিজয়ী হন।

বিকাল ৫টায় বেনাপোল বলফিল্ড মাঠে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু। এ সময় সেখানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক স্পন্দন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাহাবুব আলম লাভলু, আওয়ামীলীগ নেতা আলী কদর সাগর সহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।

এ ছাড়া শার্শার বাগআঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ ইলিয়াছ কবির বকুলের নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাগআঁচড়া বাজারে এক বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়। র্য্যালীতে অংশ নেন কায়বা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ হাসান আহমেদ টিঙ্কু, সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।