খুলনা, খুলনা বিভাগ, জেলার খবর | তারিখঃ জুন ২২, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1357 বার
রাসেল আহমেদ, খুলনা জেলা প্রতিনিধি : গবাদি পশু কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ৩ টি পদ সায়েন্টিফিক বা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সরজমিন সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (এফএএআই) ও উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (এআই)। এই তিনটি পদে যারা দায়িত্ব থাকেন মূলত তারাই কৃত্রিম গবাদিপশু প্রজনন কেন্দ্রের মূল চালিকাশক্তি। এই তিনটি পদের বিপরীতে কর্মরতরাই গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। আর প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছেন উপ-পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মচারীবৃন্দ। অথচ খুলনা জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে দীর্ঘদিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি পদের বিপরীতে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। শূন্য রয়েছে পদ তিনটি।
ফলে কেন্দ্রের আওতাধীন খুলনা জেলা ও মেট্রো এলাকায় গবাদি পশু প্রজনন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কেন্দ্রের উপ-পরিচালককে প্রশাসনিক কার্যক্রম বাদ দিয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। প্রজনন কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে গত বছর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় যোগদান করেন। সেই থেকে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদটি শূন্য রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে প্রজনন কার্যক্রম বেগবান এবং গতিশীল করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে পদটি রয়েছে সেটি হচ্ছে সরজমিন সহকারী কৃত্রিম প্রজনন কর্মকর্তা।
২০২১ সাল থেকে পদটি শূন্য রয়েছে। এ পদে যিনি কর্মরত ছিলেন অবসরে যাওয়ার পর একজন ডেপুটেশনে কাজ করতেন তিনিও গতবছর পিআরএলএ চলে যাওয়ায় পথটি শুন্য রয়েছে। একইভাবে উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদটিও দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য রয়েছে। ফলশ্রুতিতে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের আওতা দিন জেলা এবং খুলনা মেট্রো এলাকায় মাঠ পর্যায়ে গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন বিশেষ করে দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী এবং বকনা বাছুরের প্রজননে কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়াও কেন্দ্রটিতে দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক জনবল সংকট বিরাজ করছে। ১০ টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৫ জন। বাকি পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। একটি গাড়ি থাকলেও শুরু থেকে কোন ড্রাইভার নেই। মাঝেমধ্যে প্রেষণে একজন ড্রাইভার নিয়োগ দিয়ে জরুরী ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। শুরু থেকে কেন্দ্রটির অর্গানোগ্রামে ড্রাইভারের কোন পদ নেই।
জানা যায়, শুধু খুলনা প্রজনন কেন্দ্রে নয়, শুরু থেকে দেশের ২২টি গবাদি পশু প্রজনন কেন্দ্রের অর্গানোগ্রামেও ড্রাইভারের কোন পদ সৃষ্টি করা হয়নি। প্রেষণে ড্রাইভার নিয়োগ দিয়ে দায়সারা ভাবে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সিমেন ক্যারিয়ার বা এড়ে গরুর শুক্রাণু (বীজ) বহনকারীর ৩ টি পদের বিপরীতে কাজ করছে মাত্র ১জন। এছাড়া ফুলতলা উপজেলার জামিরা ইউনিয়ন, খানজাহান আলী থানার শিরোমণি, ডুমুরিয়া উপজেলার শাহাপুর এবং চুকনগরে কৃত্রিম প্রজননের ৪ টি কেন্দ্র থাকলেও সেগুলিতে মন্ত্রণালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত কোন লোকবল নেই। দায়সারা ভাবে চলছে কেন্দ্র ৪ টি’র কার্যক্রম।
সব মিলিয়ে খুলনা প্রজনন কেন্দ্রে গবাদি পশু বিশেষ করে দুধ উৎপাদনকারী গাভী এবং বকনা বাচুরের প্রজনন কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে খুলনা অঞ্চলের গাভী চাষিরা। প্রজনন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ডাঃ স্বপন কুমার রায় বলেন, প্রজনন কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদসহ শুন্য হওয়া পদগুলি পূরণের জন্য একাধিকবার উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়াও অধিদপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রতিবছর পিএসসি’র মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে কিন্তু চাহিদার তুলনায় খুবই কম। যার কারনে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার শূন্য পদগুলো পূরণ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাট জেলার গবাদি পশুর প্রজননের শুক্রাণু বা বীজ খুলনা কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করতে হয়। বীজ সংরক্ষণ এবং সরবরাহের কাজগুলো বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার। কিন্তু পদটি শূন্য থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি কাজগুলো আমাকে করতে হচ্ছে। সময়মতো বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরায় বীজ সরবরাহ করতে হয়।
তিনি বলেন, কেন্দ্রের আওতাধীন খুলনার ৯টি উপজেলা এবং মেট্রো এলাকায় কৃত্রিম প্রজনন উপযোগী বকনা বা গাভী রয়েছে ৩ লক্ষ ৫ হাজার ৮৫১ টি। এর মধ্যে দেশীয় প্রজাতির ১ লাখ ২২ হাজার ৩৪০ টি। ক্রস বা শংকর প্রজাতির রয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫১১ টি। চলতি অর্থবছর আমরা ৫৫ হাজার গরুর শুক্রানু বা বীজ প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। গত বছরও আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫৫ হাজার। যেটা অর্জিত হয়েছে। চলতি বছর বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৬০০। ইতিমধ্যে বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ২০ হাজার ৩৪৫। বার্ষিক অর্জনের হার ১০৪ শতাংশ। শুক্রাণু বা বীজের প্রজনন চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। কেন্দ্রের নির্ধারণকৃত মূল্য তরল সিমের দ্বারা কৃত্রিম প্রজনন ফি ৫০ টাকা আর হিমায়িত সিমেন দ্বারা কৃত্রিম প্রজনন ফ্রি ৭৫ টাকা। আনুষঙ্গিক খরচসহ একটি গাভীর প্রজনন খরচ ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পড়বে। আর কোন বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে বীজ নিলে এক্ষেত্রে প্রজনন খরচ পড়বে ৫০০ টাকা। তিনি বলেন, জাত উন্নয়নে গাভীর ব্লাড লেভেল ৫০ শতাংশ হলে আমাদের দেশের জন্য সেটা ১০০ ভাগ উপযোগী হবে এবং সেক্ষেত্রে একটি গাভী থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি দুধ পাওয়া যাবে। প্রজনন কেন্দ্র থেকে আমরা গবাদি প্রাণীর কৃত্রিম প্রজনন, ছাগীর স্বাভাবিক প্রজনন, উন্নত জাতের ঘাসের কাটিং/বীজ সরবরাহ, প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের নিমিত্তের দুদ্ধ খামারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকি। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মাংসের উৎপাদনে এবং চাহিদা দু’টোই বাড়ছে। কিন্তু গাভী বা বকনা উৎপাদন স্থিতিশীল রয়েছে। জনপ্রতি একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা ২৪০ মিঃ লিঃ দুধ। সারা দেশের দুধের উৎপাদন জনপ্রতি ২২১ মিঃলিঃ হলেও আমাদের খুলনায় জনপ্রতি দুধের উৎপাদন ২৪০ মিঃলিঃ। বাকি ১০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা কাজ করছি।