সানজিদা আক্তার সান্তনা : যশোরের রাজারহাট দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার বাজার। ঈদ পরবর্তী প্রথম বাজার ছিল আজ শনিবার (২২জুন)। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতি বছরের মতই আগের রাতেই চামড়া নিয়ে হাজির হন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে বাইরে থেকে আসা ব্যাপারীরাও আগের রাতে এসে অবস্থান নেন।

সকাল সাতটা থেকে শুরু হয় এ হাটের চামড়ার কেনাবেচা। তবে, এই বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে কোনো চামড়া কেনাবেচা হয়নি। অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লোকসানে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। গরুর চামড়া বিক্রি হলেও বিপাকে পড়েন ছাগলের চামড়া বিক্রেতারা। প্রতি পিস ছাগলের চামড়া তিন টাকা ৮৫ পয়সাও বিক্রি করতে দেখা গেছে।

আবার ছাগল ও ভেড়ার চামড়ার দাম বলেনি কোনো কোনো ব্যাপারী-এমন ঘটনাও ঘটেছে। এমন কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পাওয়া যায়নি যে তার গরুর চামড়ায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লোকসান হয়নি। সব মিলিয়ে এ বাজারে বড় দরপতন হয়েছে।

জেলার নাভারন থেকে চামড়া নিয়ে আসা আবদুল জলিল জানান, সিন্ডিকেটের কারণে বাধ্য হয়ে ৪০ টাকা ফুটের চামড়া মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। হাটে ফুট হিসেবে চামড়া বিক্রি হয়নি, হয়েছে পিস হিসেবে। তিনি আরো বলেন, এবার দুই-আড়াই লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে। এবার হাটে কিছু ট্যানারি দালাল এসেছে। তাদের এ সিন্ডিকেটের হাতেই জিম্মি ঐতিহ্যবাহী বিশাল এ চামড়ার হাট।

অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, কেশবপুর থেকে আসা কালীদাস নামে এক বিক্রেতা ইমরান হোসেন পাপ্পু নামে এক আড়তদারকে তার ৫২ পিস ছাগলের চামড়া পাঁচ টাকা করে কেনার জন্য তোষামোদ করতে থাকেন। পাপ্পু ৫২ পিস চামড়া নিয়ে পাঁচ টাকা হিসেবে ৪০ পিসের দাম দেয়ার শর্ত দেন। কালীদাস উপায় না পেয়ে তাতেই রাজি হন। সেই হিসেবে কালীদাস এক পিস ছাগলের চামড়া বিক্রি করেন তিন টাকা ৮৫ পয়সায়।

নওয়াপাড়া থেকে ৪৫০ পিস চামড়া নিয়ে আসা অশ্বিনী জানান, তিনি ৫০ থেকে আট শ’ টাকায় গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন। তার প্রতি চামড়ায় দুই শ’ থেকে চার শ’ টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়েছে। প্রতি বছর লোকসান হওয়ার পরও কেন চামড়ার ব্যবসা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি পেশা হিসেবে নিয়েছি। এ কারণে ব্যবসা না করে পারি না।

বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর বলে লোকসান হচ্ছে। এবার দাম ভালো। বাজারে ৩৫ হাজারের মতো চামড়া এসেছে।