সানজিদা আক্তার সান্তনা, যশোর অফিস : যশোরে ইউপি সদস্যের হাতে দুই তরুণ-তরুণীর অমানুষিক নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে ওই দুই তরুণ-তরুণীকে নির্যাতন করা হয়। পরে নির্যাতনকারীরা সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনায় ইতির বাবা সাহেব আলী বাদী হয়ে চারজনের নামে মামলা করেন।

শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে ইউপি সদস্য আনিচুর রহমানসহ চারজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ। আনিচুর রহমান যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণী ও তার বন্ধুকে একটি দোকানের ভেতরে নেওয়া হয়। সেখানে একজন তরুণীর পায়ের পাতা উঁচু করে ধরে এবং অন্যজন লাঠি দিয়ে পায়ের পাতায় পেটাতে থাকে। এ সময় ইতি চিৎকার করলেও অভিযুক্তরা ছাড়েনি।

এদিকে নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা অভিযোগ করেন, গত ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় তার মেয়ে আত্মীয় এক যুবকের মোটরসাইকেলে করে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামে ওয়াজ মাহফিল শুনতে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে তাদের গতিরোধ করে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে দুজনকেই অশালীন কথাবার্তা বলতে থাকেন ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান, তার সহযোগী আইযুব আলী, ভুট্ট, আবদুল আলীমসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জন। একপর্যায়ে তাদের দুজনকে নিয়ে একটি দোকানের ভেতরে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে তারা।

১৫ মার্চের ঘটনার ভিডিও চিত্র ১৮ মার্চ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ড এবং ৪৪ সেকেন্ডের দুটি ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি দোকানে অর্ধশতাধিক মানুষের সামনে তরুণীকে এলোপাতাড়ি জুতাপেটা করছেন ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান। ওই তরুণী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ইউপি সদস্যের পাশে থাকা কয়েক যুবক লাথিও দেন। অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে তরুণীর সঙ্গে থাকা যুবককেও এলাপাতাড়ি মারধর করেন ইউপি সদস্য ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন যুবক।নির্যাতনের শিকার ইতি বলেন, আমাকে আনিচুর মেম্বার, আইয়ুব আলী, খোকন, ভুট্টোসহ কয়েকজন মারধর করে। তারা আমার কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন ও গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। মারধরের খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন এসে আমাকে ছাড়িয়ে আনে এবং হাসপাতালে ভর্তি করে।

ইতির বন্ধু সাঈদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, রাত হয়ে যাওয়ায় ইতি তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলে। আমি তাকে সাইকেলে করে আব্দুলপুর গ্রামে নিয়ে যাই। এ সময় পথে কয়েকজন আমাদের গতিরোধ করে নাম-পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেওয়ার পর তারা ইউপি মেম্বারকে ডেকে আনে। এরপর গ্রামের একটি দোকানে ঢুকিয়ে আমাদের মারধর শুরু করে। ওরা ইতিকে অনেক মারধর করে। আমাকেও মেরেছে। আমার কানে আঘাত লেগেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

ইতির মা নাজমা বেগম বলেন, বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি ফেরা কি অপরাধ? তারা তো আমাদের ডেকে বলতে পারত। কিন্তু তারা আমার মেয়েকে এমনভাবে মারল। ফেসবুকে আমার মেয়েকে মারধরের ভিডিও ছড়িয়ে গেছে। আমার মেয়ের সম্মান আর থাকল না।

যশোর পুলিশের মুখপাত্র ডিবি ওসি রূপণ কুমার সরদার গণমাধ্যমকে জানান, নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর মেয়েটির বাবা যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। মামলার প্রেক্ষিতে যশোর কোতোয়ালি পুলিশ ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ইউপি মেম্বরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।