খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ এপ্রিল ২৯, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 4783 বার
যশোর অফিস : তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো। গত কয়েকদিনে তাপমাত্রা রেকর্ড ৪২ দশমিক ৬ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। আর চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সামপ্রতিক সময়ে এটাই দেশের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার রেকর্ড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। আগামী দিনগুলোয় সারাদেশে আরও গরম পড়তে পারে। বাড়তে পারে তাপমাত্রার পারদ।
আজ সোমবার যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দাবদাহের কারণে স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে দিনের উষ্ণতম সময়ে বাড়ির বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এছাড়া খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে খরতাপে মারাত্মক ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের।
তীব্র গরমে আজ নড়াইলের লোহাগড়ার ইতনা হাই স্কুলের ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে স্থানীয় ভাবে তাদেরকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। এদিনে ত্রীব্র তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে যশোরসহ গোটা দক্ষিনাঞ্চলের মাছের রেনু পোনার উৎপাদন। অত্যাধিক তাপমাত্রার কারনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার দিনমজুর শ্রমিক রিকসা, ভ্যান ও ইজিবাইকের চালক।
তীব্র তাপদাহের কারনে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল এবং নওয়াপাড়ায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বৈশাখের তপ্ত গরমে বিপর্যস্ত যশোর। চলছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। আজ এই জেলায় রেকর্ড ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠার দিন সড়ক-মহাসড়কের বিটুমিন (পিচ) গলে যেতে দেখা গেছে। গরমে পিচ গলে যাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে দুর্ঘটনার। এর আগের শনিবারে তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অন্যদিকে, তীব্র গরমে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোগী সংখ্যা বেড়েছে। ফলে হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে বর্তমানে ১ হাজার ১৬জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়া চলমান তাপপ্রবাহে সবজি জাতীয় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষক। আম, কাঠাল, লিচু এবং ড্রাগন ফলের ফুল-ফল ঝরে যাচ্ছে। তীব্র পানি সংকট বিরাজ করছে গোটা দক্ষিনাঞ্চলে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারনে যশোরসহ গোটা দক্ষিণ পশ্চিাঞ্চলে পানি সংকট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব জেলঅর অধিকাংশ অগভীর নলকুপে পানি উঠছে না। ডিপ টিউবওয়েল ও সাব মার্সিবলে পানি ওঠার মাত্রাও কমে গেছে বহুগুনে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছেন, বৈশাখের শুরু থেকেই সারাদেশে তাপদাহ শুরু হয়। এখন গরম তীব্র থেকে অতি-তীব্র আকার ধারণ করছে।
গত বৃহস্পতিবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমকি ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। রোববার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমকি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজ যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দুপুর ২টায় ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, যশোর-নড়াইল, যশোর-ঝিনাইদহ ও যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের কিছু কিছু স্থানে তাপপ্রবাহের কারণে বিটুমিন গলে যাওয়ায় সড়কের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাস্তায় যানবাহনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত সড়কে যে পিচ ব্যবহার করা হয় তা ৬০-৭০ গ্রেডের। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে পিচ গলার কথা। কিন্তু তার অনেক আগেই পিচ গলে যাচ্ছে।
বিসিক ঝুমঝুমপুর এলাকা ব্যবসায়ী কাউসার আলী জানান, রাস্তায় হাঁটতে গেলে জুতো স্যান্ডেল পিচে আটকে যাচ্ছে। দু’একজন পিচ থেকে তুলতে না পেরে স্যান্ডেল রেখেই চলে যাচ্ছেন। গাড়ির চাকার চাপায় তা রাস্তার পিচের সঙ্গেই আটকে থাকছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, যশোর-নড়াইল ও যশোর – খুলনা সড়কের যেসব স্থানে বিটুমিনের পরিমাণ বেশি পড়েছে, প্রচ- গরমে সেসব জায়গা গলে যাচ্ছে। এজন্য সড়কের গলে যাওয়া স্থানে বালি ও নুড়িপাথর দেওয়া হচ্ছে। যাতে গলে যাওয়া পিচ আগের অবস্থায় থাকে।