খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, ঝিনাইদহ | তারিখঃ এপ্রিল ৮, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 8442 বার
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামে ১৫ বছর আগে জনস্বাস্থ্য বিভাগের গভীর নলকুপ স্থাপন করেন গৃহবধু লিলিমা বেগম। নলকুপে ঠিকঠাক ভালোই পানি উঠছিল।
জানা গেছে, ফাল্গুনের শেষ দিক থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত এই ৩/৪ বছর তার নলকুপে পানি উঠছে না। অগত্য টিউবওয়েলের পাইপের মধ্যে দেড় ইঞ্চি পাইপ দিয়ে এখন পানি তুলছেন।
ওই গ্রামের হায়দার আলী জোয়ারদার জানান, তার নলকুপেও এখন আর পানি উঠছে না। ঝিনাইদহ পৌর এলাকার নতুন কোর্টপাড়ার মাঠে ধান চাষ তদারকী করেন কৃষক আজিজার রহমান ও মহিউদ্দীন। দুই মাস আগেও তার সেচ পাম্পে পর্যাপ্ত পানি উঠতো। দিন যতই যাচ্ছে পাম্পে পানির পরিমান কম উঠছে। দিনের বেলায় কম ও রাত ১১টার পর পানি বেশি উঠছে বলে তিনি জানান।
ভারি বৃষ্টি না হলে কৃষক মহিউদ্দীনের মতো ঝিনাইদহের হাজারো কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে ফারাক্কা ও অনাবৃষ্টির প্রভাবে ঝিনাইদহে প্রায় ৫০ হাজার টিউবওয়েলে কম পানি উঠছে।
ইতিমধ্যে পানির স্তর ২০ থেকে ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কৃষকের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, অনাবৃষ্টি ও ফারাক্কার প্রভাবে ভুগর্ভস্থ’র পানির স্ত নেমে গেছে। তথ্যনিয়ে জানা গেছে, চলতি শুষ্ক মৌসুমে জেলার বেশিরভাগ বিল-ঝিল, জলাশয় ও পুকুর-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। বিশেষ করে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ১০ নদী ও ২টি নদের প্রায় ৮০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে। এসব নদীর তলদেশে কৃষকরা এখন ধানচাষ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ছয় উপজেলায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধীক নলকূপে পানি কম উঠছে। নলকুপ শ্রমিকরা বলছেন, সাধারণত ২০ থেকে ৩০ ফুট মাটির নিচে পানির স্তর পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচেও পানির লেয়ার মিলছে না।
জেলা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বলছে, তাদের অনুমতি নিয়ে জেলায় ১৭০টির মতো গভীর এবং ৭ হাজার ৯২১টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। তবে তাদের অনুমতি ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েক হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপ থেকে নিয়ম না মেনে যত্রতত্র পানি উত্তোলন করায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে বাসা বাড়ির অগভীর নলকূপে। জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএডিসি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎসগুলো ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে জেলার মধ্যে শৈলকুপাতেই রয়েছে ৩৭ হাজার ৫০০ নলকূপ। যার ভেতরে এই মুহূর্তে বেশিরভাগ নলকূপে পানি কম উঠছে। এরমধ্যে অনেক টিউবওয়েল পানি না ওঠায় অকেজো হয়ে পড়েছে। অথচ উপজেলায় সরকারি নলকূপ রয়েছে মাত্র ১৫০০টি।
ঝিনাইদহ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, জেলাজুড়ে কত হাজার বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে তা আমাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে জেলায় ১৭ হাজার গভীর ও ১৮ হাজার অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা আছে বলে তিনি দাবী করলেও বাস্তবে তার চিত্র ভিন্ন।
তিনি জানান, ডিজাইন মাফিক নলকূপ স্থাপনের আইন পাস হলেও কেউ তা মানছে না। প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে বলে তিনি মনে করেন।