ষ্টাফ রিপোর্টার : যশোরের শার্শা উপজেলায় ঈদ ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে দর্জিবাড়ির কারিগরদের। কাপড়ের কাটাকুটি চলছে, মেশিনে উঠছে রং-বেরঙের ফোঁড় দিচ্ছে দর্জিরা। শবে বরাতের পর থেকেই ব্যস্ত কারিগররা। তৈরি করছেন নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক।

এবার তৈরি পোষাকের পাশাপাশি ঈদের কাপড় নিয়ে কার্পণ্য নেই ক্রেতাদের। তাদের তৈরি পোশাক নয়, নিজেদের ডিজাইনে জুতসই পোশাক তৈরিতেই ভরসা। কেউবা নিজের পছন্দমতো আনস্টিচ জামা কিনে আবার কেউবা গজ কাপড় নিয়ে হাজির হচ্ছেন টেলার্সের দোকানে।

ঈদের আর মাত্র সপ্তাহ খানিক বাকি, তাই এ সময়ের মধ্যেই বানিয়ে নিতে হবে পছন্দের পোশাকটি। উৎসব প্রেমীরা বিভিন্ন ধরনের গজ কাপড় ও আনস্টিচ কাপড় নিয়ে থ্রিপিছ, টুপিছ, গাউন, লেহেঙ্গাসহ বিভিন ধরনের পোশাকের ফরমায়েশ দিচ্ছেন।আর সেসব পোশাক তৈরিতে সকাল বিকেল থেকে রাত অবধি ব্যস্ততা চলছে দর্জিবাড়িতে। কাপড়ের মাপজোক নিতে, কাপড় কাটতে ও সেলাই করতে, এমব্রয়ডারি ও ট্রায়াল দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দর্জিবাড়ির কারিগরেরা।

শার্শা উপজেলার বেনাপোল, নাভারন ও বাগআচড়া বাজারে ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন টেলার্সের দোকানের নিত্য দিনের চিত্র এটি।

নাভারন রোজ টেইলার্সে কথা হয় আবু নাইম মোহাম্মদ প্রিন্সের সাথে। ওই কিশোর বলেন, নিজের পছন্দমতো পোশাক বানাতে দর্জি দোকানে আসা। এতে ঈদের আগেই নিজের আলাদা ডিজাইনে তৈরি করা পোশাক পাওয়া যাবে। এতে আনন্দটাই আলাদা।

নাভারন নিউমার্কেটের আল আমিন টেইলার্সে কথা হয় কলেজ ছাত্রী আফিয়া জান্নাত ও অনামিকা আফরিনের সাথে।

আফিয়া জান্নাত বলেন,দর্জির কাছে অর্ডার দিয়ে পোষাক তৈরি করে নিলে নিজের মত নকশা ডিজাইন করে পোষাক তৈরি করা যায়।

বাজারে যা কিনতে পাওয়া যায় তা সবই একই ডিজাইনের হয়। একারনে পয়সা একটু বেশি খরচ হলেও পোষাকের ভিন্ন ডিজাইন করতে দর্জির কাছে দিয়েছি।

ক্রেতার ভিড় সামাল দিতে আগেভাগেই ঈদের কাজ শুরু করেছেন দর্জিবাড়ির কারিগররা। নিচ্ছেন শেষের দিকের অর্ডার। থ্রি-পিস আর পাঞ্জাবি তৈরিতে ব্যস্ততা বেশি। তবে সেই চিরচেনা ব্যস্ততা নেই দর্জিবাড়িতে। ঈদবাজারের অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রায় ১০০ টাকা করে বেড়েছে মজুরি।

তবে চিরচেনা হই-হুল্লোড় ও তোড়জোড় না থাকলেও শেষ সময়ে কাজ গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা কারিগরদের।

দর্জি আব্দুস রাজ্জাক বলেন,ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। রেডিমেড জামা-কাপড়ের ভিড়ে দর্জিবাড়ি হারিয়েছে আগের জৌলুস। তবে এবার অন্যান্য বারের চাইতে কাজের চাপ অনেক বেশি।

বেনাপোল বাজার পোশাক তৈরি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক মোহম্মদ খোকন বলেন, সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন খরচ বেড়েছে, তখন আমরা কিন্তু এখনো পোশাকের মজুরি বাড়াইনি।

পোষাক তৈরির মজুরি সম্পর্কে তিনি বলেন,মেয়েদের সুতির সালোয়ার কামিজ ২৫০ টাকা ও সিনথেটিক সালোয়ার কামিজ ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা। শুধু সালোয়ার ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। চুড়িদার ২০০ থেকে ২৫০, ধুতি সালোয়ার ৩০০, প্যান্ট কাটিং পায়জামা ২৫০ থেকে ৩০০, সেমিজ ১০০ থেকে ১৫০ প্লেন ব্লাউজ ১৫০, ডিজাইন ব্লাউজ ৩০০ থেকে ৪০০, পেটিকোট ১০০, বিভিন্ন ধরনের বোরকা ৩৫০ থেকে ৭৫০, প্লেন ফ্রক সুতি ৩২০, প্লেন গাউন ফ্রক সুতি ৪৫০, প্লেন গাউন ফ্রক দু’পার্ট ৭৫০, মৌচাক ফ্রক ৮০০ থেকে এক হাজার ৬০০, আনারকলি ৬৫০ থেকে এক হাজার ২০০, জিপসি ও পাখি ড্রেস ৬৫০ থেকে এক হাজার ২৫০, লেহেঙ্গা ৬০০ থেকে এক হাজার ৩৫০, শাড়ির পাড় ও শাড়ির ফলস্ ২০০, পুরুষদের পাঞ্জাবি ৩৫০ থেকে ৫০০ সাধারণ জুব্বা ৫৫০, সৌদি জুব্বা ৭০০, কাবলি সেট এক হাজার ১০০, শার্ট ৩০০, ডিজাইন শার্ট ৪০০, ফতুয়া ৩০০, প্যান্ট ৪০০, জিন্স প্যান্ট ৫০০, সাফারি সেট দু’হাজার টাকা। বিভিন্ন ধরনের কোটের মজুরি এক হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে।

বেনাপোল বাজারের হিরা মার্কেটের মনির ক্লথ এন্ড টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী শাহাবুদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, শবে বরাতের পর থেকেই অর্ডার আসছে। অন্যবারের তুলনায় এবারে একটু বেশি।সামনের রোজাগুলোতে আরও বেশি আশা করছি।