আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। এ জাহাজটিকে ছায়ার মতো অনুসরণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর মেরিটাইম সিকিউরিটি ফোর্সের একটি যুদ্ধজাহাজ। জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধার করতে কয়েক দফায় জলদস্যু ও নৌবাহিনীর (নেভি) সদস্যদের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। একপর্যায়ে জিম্মি বাংলাদেশি নাবিককে একে একে হত্যার হুমকিও দেয় জলদস্যুরা। এরপর কোনো উপায় না থাকায় পিছু হটে নেভির যুদ্ধজাহাজটি।

সোমালিয়ার স্থানীয় সময় বুধবার (১৩ মার্চ) রাত থেকে এখন পর্যন্ত নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজটি তাদের অনুসরণ করে। কিন্তু দুর্ধষ জলদস্যুদের অনড় এবং অনমনীয় অবস্থানের কারণে জিম্মি থাকা ২৩ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবুও মাত্র ২০ নটিক্যাল মাইল দূর থেকে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমবি আব্দুল্লাহ’কে অনুসরণ করে যায় নেভির জাহাজটি। ইতোমধ্যে সোমালিয়া জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত জলসীমান্তে প্রবেশ করেছে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এই জাহাজটি। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এক জিম্মি নাবিকের পাঠানো মেসেজ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

১৪ মার্চ, বৃহস্পতিবার এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের মেরিটাইম সিকিউরিটি ফোর্স জানিয়েছে, তাদের একটি রণতরী উপকূলে বাংলাদেশি ওই জাহাজটিকে অনুসরণ করছে। জাহজটিতে ২৩ ক্রু সদস্য জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন।

বাংলাদেশি কার্গো জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাইয়ের খবর প্রথম শনাক্ত করে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী। সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৭০০ মাইল পূর্বে এটি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে।

ইইউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অপারেশন আটলান্টার অধীনে তাদের একটি রণতরী কার্গো ক্যারিয়ারটিকে ছায়ার মতো অনুসরণের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, বর্তমানে জলদস্যুরা জাহাজে অবস্থান নিয়েছেন এবং তারা ২৩ ক্রুকে জিম্মি করেছেন। তবে জাহাজে থাকা ক্রুরা নিরাপদ রয়েছেন। তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলের দিকে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

অপারেশন আটলান্টা হলো ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের উৎপাত ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিচালিত বিশেষ অভিযান।

জাহাজটির বর্তমান অবস্থান প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিকসহ জাহাজটির অবস্থান বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় শনাক্ত করা গেছে। জাহাজটি ওই সময় সোমালিয়া থেকে ৭২ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। আজ দুপুরের মধ্যে জাহাজটি সোমালিয়ায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। হয়তো এরপর জলদস্যুরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে যোগাযোগ করবে।

এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরেই জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই কোম্পানির ‘এমভি জাহান মনি’ নামের একটি জাহাজ। ওই জাহাজের ২৬ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। ১০০ দিনের আন্তরিক প্রচেষ্টার পর তাদের মুক্ত করতে সফল হয় চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। এবারও পূর্বের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরও দ্রুততম সময়ে ২৩ নাবিকসহ জাহাজ মুক্ত কারার পরিকল্পনা নিয়েছে শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ।