০২:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

বাঘারপাড়ায় জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিরাপদ পানির জন্য সরবরাহকৃত নলকুপে অস্বাস্থ্যকর গোবর ব্যবহারে অভিযোগ!

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ১১:২৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৬৩

সাঈদ ইবনে হানিফ]= বাঘারপাড়া (যশোর) : যশোরের বাঘারপাড়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী’র অধীন নলকূপ খননের সময় প্রতারণা করে রোরিং ফ্লুইড হিসাবে গোবর মেশানোর মত গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ।

ইতোমধ্যে ৫০টির বেশি নলকূপ বোরিং শেষ হয়েছে। অধিদপ্তরের চিঠি উপেক্ষা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাঁরা তাঁদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলায় গোবরমিশ্রিত পানি দিয়েই প্রতিটি নলকূপ বসানোর কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি লঙ্ঘন করে পাইপ বসাতে গোবর ব্যবহার, খাবার ও বখশিসের নামে টাকা আদায় করা হচ্ছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরদারির কথা থাকলেও তাদের উদাসীনতায় অনিয়মের মধ্যদিয়েই কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিস সুত্রে জানা যায়, সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে এ উপজেলায় ২৩৪টি ২০২৪ -২০২৫ অর্থ বছরে ১০৮টি নলকূপ বরাদ্দ দেয় অধিদপ্তর। প্রতি নলকূপ স্থাপনে গ্রাহককে ১০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে চালান জমা দিতে হয়। সেখানে সরকার ঠিকাদারের মাধ্যমে সরবরাহ করছে ছয়শত ফুট পাইপ, ১ হর্স পাওয়ার পাম্প, ১০০০লিটারের ১টি ট্রাংকি, ২০ কেজি বেন্টোনাইট -ক্লে ও ৫ ফিট হাইটের ১০ ইঞ্চি গাথুনের স্টান্ড। এতে সরকারের ব্যায় হচ্ছে একটি নলকূপ স্থাপনে জন্য ১ লাখ টাকা।

অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ি দরপত্র চুক্তি মোতাবেক নলকূপ খননের সময় অবশ্যই বোরিং ফ্লুইড হিসাবে বেন্টোনাইট -ক্লে মিশ্রিত পানি ব্যবহার করতে হবে। কোনক্রমেই বোরিং ফ্লুইড হিসাবে গোবর মিশ্রিত পানি ব্যবহার করা যাবে না। নলকূপ স্থাপনের সময় মনিটরিং এর দায়িত্বে নিয়জিত কর্মকতার্ ও মেকানিকগন নলকূপ খননের সময় রোরিং ফ্লুইড হিসাবে বেন্টোনাইটকে মিশ্রিত পানি ব্যবহার নিশ্চিত করবেন। গোবর মিশ্রিত পানি ব্যবহার করলে কাজ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। একই সাথে বলা হয়েছে নলকূপ স্থাপনের সময় গোবর পানি ব্যবহারের কারণে ভূগর্ভের পানির স্তর দূষণের স্থায়ী সমস্যা হতে পারে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

সরেজমিন দেখাগেছে, নলকূপ খননে বোরিং ফ্লুইড হিসেবে গোবর ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকে গোবর স্থানীয়ভাবে জোগাড় করতে পারলেও বেশির ভাগ গ্রাহকেরই গোবর কিনে দিতে হচ্ছে। যাতে গুণতে হচ্ছে ৩-৪ হাজার টাকা। উপকারভোগীরা বলছে , উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের কর্মকতার্ , মেকানিক এসে গোবর দেখলেও কেউ কোন কথা বলেনা।

অভিযোগ রয়েছে, নাহার কন্সট্রাকশন বরিশাল, এস এম এন্টার প্রাইজ উত্তরা ঢাকা ও এম এম এন্টারপ্রাইজ গোপালগঞ্জ নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নলকুপ স্থাপনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। অধিদপ্তরের আদেশ উপেক্ষা করে তাঁরা তাঁদের শ্রমিক দিয়ে নলকূপ খননের সময় রোরিং ফ্লুইড হিসাবে গোবর মিশিয়ে নলকূপ বোরিং শেষ করছেন।

নলকূপ বরাদ্দ পাওয়া এমন একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন , উপজেলা জনস্বাস্থ্যের লোকজন বেন্টোনাইট-ক্লে মিশ্রিত পানি ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করছে। এমনটি বোরিংয়ে বেন্টোনাইট-ক্লে মিশ্রিত করলে নলকূপ নষ্ট হয়ে যাবে। পাশাপাশি ঠিকাদারের শ্রমিকরা গোবর ব্যবহার না করতে দিলে বোরিং হবে না এমন ভয়ভিতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।

ধলগ্রাম ইউনিয়নের দশপাখিয়া গ্রামের রকিব উদ্দিন জানান, আমি উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের মাধ্যমে একটা নলকূপ পাই। নলকূপ বসানোর সময় তিনদিন ১৩ জন শ্রমিকের খেতে দিতে হয়েছে। প্রথম দিন বোরিংয়ের সময় সাড়ে চারশত টাকার কেক এর পর গোশ মাছ দিয়ে খেতে দিতে হয়েছে। আমার ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। বোরিংয়ের সময় ২শত ঝুড়ি গোবর এনে দেয়ার পর তাঁরা নলকূপ বসানোর কাজ শেষ করেছে।

নারিকেলবাড়ীয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের কিরামত আলী এতিমখানা মাদরাসার শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, শ্রমিকদের খাবার মাদরাসা থেকে দিতে হয়েছে। গোবর দিয়ে বোরিং করা হয়েছে।

এ বিষয় জানতে নাহার কন্সট্রাকশন ম্যানেজার জাকারিয়া জানান, বোরিংয়ে বেন্টোনাইট-ক্লে দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকরা কিভাবে খাচ্ছে জানিনা।

এম এম এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ খান জানান, বেন্টোনাইট -ক্লে ব্যবহার করে নলকূপ বোরিং করা হচ্ছে। শ্রমিকদের খাবার তাদের মতো করে নিচ্ছে।

এ বিষয়ে বাঘারপাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অন্তরা সরকার জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করলে চিঠি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয় যশোর জেলা জনস্বাস্থ্য নিবার্হী প্রকৌশলী আকমাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, নলকূপ খননের সময় রোরিংয়ে গোবর ব্যবহার নিতীমালা পরিপন্থী। এ রকম অনিয়ম পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রমিকদের খাবারের বিষয় জানান, ঠিকাদার তাদের খাবারের ব্যবস্থা করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

বাঘারপাড়ায় জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিরাপদ পানির জন্য সরবরাহকৃত নলকুপে অস্বাস্থ্যকর গোবর ব্যবহারে অভিযোগ!

আপডেট: ১১:২৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫

সাঈদ ইবনে হানিফ]= বাঘারপাড়া (যশোর) : যশোরের বাঘারপাড়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী’র অধীন নলকূপ খননের সময় প্রতারণা করে রোরিং ফ্লুইড হিসাবে গোবর মেশানোর মত গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ।

ইতোমধ্যে ৫০টির বেশি নলকূপ বোরিং শেষ হয়েছে। অধিদপ্তরের চিঠি উপেক্ষা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাঁরা তাঁদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলায় গোবরমিশ্রিত পানি দিয়েই প্রতিটি নলকূপ বসানোর কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি লঙ্ঘন করে পাইপ বসাতে গোবর ব্যবহার, খাবার ও বখশিসের নামে টাকা আদায় করা হচ্ছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরদারির কথা থাকলেও তাদের উদাসীনতায় অনিয়মের মধ্যদিয়েই কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিস সুত্রে জানা যায়, সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে এ উপজেলায় ২৩৪টি ২০২৪ -২০২৫ অর্থ বছরে ১০৮টি নলকূপ বরাদ্দ দেয় অধিদপ্তর। প্রতি নলকূপ স্থাপনে গ্রাহককে ১০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে চালান জমা দিতে হয়। সেখানে সরকার ঠিকাদারের মাধ্যমে সরবরাহ করছে ছয়শত ফুট পাইপ, ১ হর্স পাওয়ার পাম্প, ১০০০লিটারের ১টি ট্রাংকি, ২০ কেজি বেন্টোনাইট -ক্লে ও ৫ ফিট হাইটের ১০ ইঞ্চি গাথুনের স্টান্ড। এতে সরকারের ব্যায় হচ্ছে একটি নলকূপ স্থাপনে জন্য ১ লাখ টাকা।

অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ি দরপত্র চুক্তি মোতাবেক নলকূপ খননের সময় অবশ্যই বোরিং ফ্লুইড হিসাবে বেন্টোনাইট -ক্লে মিশ্রিত পানি ব্যবহার করতে হবে। কোনক্রমেই বোরিং ফ্লুইড হিসাবে গোবর মিশ্রিত পানি ব্যবহার করা যাবে না। নলকূপ স্থাপনের সময় মনিটরিং এর দায়িত্বে নিয়জিত কর্মকতার্ ও মেকানিকগন নলকূপ খননের সময় রোরিং ফ্লুইড হিসাবে বেন্টোনাইটকে মিশ্রিত পানি ব্যবহার নিশ্চিত করবেন। গোবর মিশ্রিত পানি ব্যবহার করলে কাজ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। একই সাথে বলা হয়েছে নলকূপ স্থাপনের সময় গোবর পানি ব্যবহারের কারণে ভূগর্ভের পানির স্তর দূষণের স্থায়ী সমস্যা হতে পারে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

সরেজমিন দেখাগেছে, নলকূপ খননে বোরিং ফ্লুইড হিসেবে গোবর ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকে গোবর স্থানীয়ভাবে জোগাড় করতে পারলেও বেশির ভাগ গ্রাহকেরই গোবর কিনে দিতে হচ্ছে। যাতে গুণতে হচ্ছে ৩-৪ হাজার টাকা। উপকারভোগীরা বলছে , উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের কর্মকতার্ , মেকানিক এসে গোবর দেখলেও কেউ কোন কথা বলেনা।

অভিযোগ রয়েছে, নাহার কন্সট্রাকশন বরিশাল, এস এম এন্টার প্রাইজ উত্তরা ঢাকা ও এম এম এন্টারপ্রাইজ গোপালগঞ্জ নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নলকুপ স্থাপনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। অধিদপ্তরের আদেশ উপেক্ষা করে তাঁরা তাঁদের শ্রমিক দিয়ে নলকূপ খননের সময় রোরিং ফ্লুইড হিসাবে গোবর মিশিয়ে নলকূপ বোরিং শেষ করছেন।

নলকূপ বরাদ্দ পাওয়া এমন একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন , উপজেলা জনস্বাস্থ্যের লোকজন বেন্টোনাইট-ক্লে মিশ্রিত পানি ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করছে। এমনটি বোরিংয়ে বেন্টোনাইট-ক্লে মিশ্রিত করলে নলকূপ নষ্ট হয়ে যাবে। পাশাপাশি ঠিকাদারের শ্রমিকরা গোবর ব্যবহার না করতে দিলে বোরিং হবে না এমন ভয়ভিতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।

ধলগ্রাম ইউনিয়নের দশপাখিয়া গ্রামের রকিব উদ্দিন জানান, আমি উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের মাধ্যমে একটা নলকূপ পাই। নলকূপ বসানোর সময় তিনদিন ১৩ জন শ্রমিকের খেতে দিতে হয়েছে। প্রথম দিন বোরিংয়ের সময় সাড়ে চারশত টাকার কেক এর পর গোশ মাছ দিয়ে খেতে দিতে হয়েছে। আমার ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। বোরিংয়ের সময় ২শত ঝুড়ি গোবর এনে দেয়ার পর তাঁরা নলকূপ বসানোর কাজ শেষ করেছে।

নারিকেলবাড়ীয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের কিরামত আলী এতিমখানা মাদরাসার শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, শ্রমিকদের খাবার মাদরাসা থেকে দিতে হয়েছে। গোবর দিয়ে বোরিং করা হয়েছে।

এ বিষয় জানতে নাহার কন্সট্রাকশন ম্যানেজার জাকারিয়া জানান, বোরিংয়ে বেন্টোনাইট-ক্লে দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকরা কিভাবে খাচ্ছে জানিনা।

এম এম এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ খান জানান, বেন্টোনাইট -ক্লে ব্যবহার করে নলকূপ বোরিং করা হচ্ছে। শ্রমিকদের খাবার তাদের মতো করে নিচ্ছে।

এ বিষয়ে বাঘারপাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অন্তরা সরকার জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করলে চিঠি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয় যশোর জেলা জনস্বাস্থ্য নিবার্হী প্রকৌশলী আকমাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, নলকূপ খননের সময় রোরিংয়ে গোবর ব্যবহার নিতীমালা পরিপন্থী। এ রকম অনিয়ম পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রমিকদের খাবারের বিষয় জানান, ঠিকাদার তাদের খাবারের ব্যবস্থা করবে।