সাভার প্রতিনিধি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখিয়ে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি করছেন।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে ধর্ষণের এই অভিযোগের বিষয়টি সামনে আসার পরপরই সংশ্লিষ্ট হলের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা; তাদের সঙ্গে যোগ দেন বেশ কয়েকজন শিক্ষকও।

এরইমধ্যে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেখানে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, আবাসিক হলে অছাত্রদের বের করাসহ ধর্ষণে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ভবনটির তৃতীয় তলায় উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সঙ্গে কথা বলছেন আরেকদল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘ক্যাম্পাসে ধর্ষক কেন, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘ধর্ষণমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’; ‘ধর্ষকদের পাহারাদার, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের হাতে ধর্ষণ বিরোধী প্ল্যাকার্ডও রয়েছে।

ধর্ষণের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নারী। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

অন্যদিকে, ভুক্তভোগীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত মামুন (৪৫)।

মোস্তাফিজ মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ভুক্তভোগীর ভাষ্য, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ওই দম্পতিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে আনে মামুন। পরে তার স্বামীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন অভিযুক্তরা। পরে স্বামীর কাছে নেয়ার কথা বলে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।

এ ঘটনার পর অভিযুক্ত মোস্তাফিজকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে, শনিবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হল থেকে অভিযুক্তদের পালাতে সহযোগিতা করেছেন- এমন অভিযোগে ওই তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিকী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামান।

এই তিনজনও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। তবে আরেক অভিযুক্ত বহিরাগত যুবক মামুন (৪৫) পলাতক রয়েছেন। পাশাপাশি অভিযুক্তদের পালাতে সহায়তা করায় অভিযুক্ত মুরাদ ও শাহ পরান নামে আরও দুই জন পলাতক রয়েছেন।

সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে, রাতেই তাকে পালাতে সহযোগিতা করায় তিনজনকে আটক করা হয়।