বিশেষ প্রতিনিধি।। ৮৫ যশোর-১ শার্শা আসনে নৌকার বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে স্বতন্ত্র আওয়ামীলীগ। নৌকা, ট্রাক আর লাঙ্গল নির্বাচনের মাঠে থাকলেও নৌকা ও ট্রাকের মধ্যে হবে মুল প্রতিযোগিতা। এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে তাদের দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই লড়তে হবে। অর্থাৎ মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন আশরাফুল আলম লিটন।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিনের নৌকার সঙ্গে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা।

অন্যদিকে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক মার্কায় তার সমর্থক নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে রয়েছেন।এ ছাড়া জাতীয় পার্টির (এরশাদ) আক্তারুজ্জামান লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিন নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রঞ্চম বারের মত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

এই আসনে মোট তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত আছেন। তবে ভোটের মাঠে সবচেয়ে বেশি সরব শেখ আফিল উদ্দিন ও আশরাফুল আলম লিটন। তারা প্রতিদিন সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগের মধ্য দিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। একইসঙ্গে চলছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগও।

ভোটের বাতাস বলছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যশোর-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও জমজমাট লড়াই হবে বলে ধারণা করছেন ভোটাররা।

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-১ শার্শা আসনের প্রার্থীদের প্রচারণা।

আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উভয়েই ভিন্ন ভিন্ন প্রতিশ্রুতি নিয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। পোস্টার ঝুলিয়ে, হাতে হাতে লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠক ও মাইকিং করে নির্বাচনী প্রচারণা সরগরম করে তুলেছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা।

যশোর-১ আসন শার্শা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনটিতে একটি পৌরসভা, ১১টি ইউনিয়ন, ১০২টি ভোটকেন্দ্র এবং ৬৬১টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে। এ আসনে মোট দুই লাখ ৯৪ হাজার ৬৯২ জন ভোটারের মধ্যে এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৬ জন পুরুষ ও এক লাখ ৪৭ হাজার ১১৬জন মহিলা ভোটার রয়েছে।

এই আসনটিতে মূলত সত্যিকারের নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে মোট তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। বেনাপোল স্থলবন্দরের কারনে জেলার মধ্যে এ আসনটিই যশোরবাসীর নির্বাচনী আলোচনার-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে চলছে ভোটারদের ভোটের হিসাব-নিকাশ। এ আসনে বিজয়ী যে-ই হোক, ভোট যুদ্ধ হবে সেয়ানে সেয়ানে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি আব্দুর রহিম সরদার বলেন, ২০০১ সাল থেকে শেখ আফিল উদ্দিন শার্শার আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন।সততা ও নিষ্ঠার সাথে তিনি দলকে গুছিয়ে তিন তিনবার এমপি হয়েছেন। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার পক্ষেই আছেন। যুবলীগ ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ তার হাতে গড়া সংগঠন। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আলেয়া ফেরদৌস, জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য সালেহ আহম্মদ মিন্টু, সাবেক দু’জন সদস্য অধ্যক্ষ এসএম ইব্রাহিম খলিল, অহিদুজ্জামানসহ ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে শার্শা সদর ইউপি চেয়ারম্যান কবির উদ্দিন আহমেদ তোতা, বেনাপোল ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, বাগআচড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক, গোগা ইউপি চেয়ারম্যান তবিবর রহমান, বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান ও ডিহি ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মুকুল তার বলয়ে ভোটের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

অপরদিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান, নিজামপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা বিপুল, লক্ষনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগম, উলাশি ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, কায়বা ইউপি চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন, পুটখালি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফ্ফার সরদার কাজ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন বলয়ে।

দিন যতই ঘনিয়ে আসছে যশোরের শার্শা আসনে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা ততই জোরালো হচ্ছে। দিনভর মিছিল আর নির্বাচনী জনসভা, মাইকিং মানুষের মধ্যে ভোটের আমেজ তৈরি করছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চান। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর চায়ের টেবিলেও নির্বাচনী ঝড় উঠছে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অবস্থান এবং বিরোধী জোটের আন্দোলনের বিষয়ই আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

সব দলের কাছেই আসনটি অধিক মর্যাদার। বিগত ১১টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৬ বার, বিএনপি ৩ বার, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত একবার বিজয়ী হয়েছে।

এই আসনে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ১৯৭৯ সালে বিএনপির আলী তারেক, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির ডা. নজরুল ইসলাম, ১৯৮৮ সালে জামায়াতের অ্যাডভোকেট নূর হোসেন, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তি, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ২০০১ সালে বিএনপির আলী কদর, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে শেখ আফিল উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালেও শেখ আফিল উদ্দিন নির্বাচিত হয়েছেন।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী আক্তারুজ্জামান বলেন, জনগণের সেবা করতে জনপ্রতিনিধি হলে সুযোগ বেশি পাওয়া যায় তাই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সঠিক এবং সর্বাধিক জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। নির্বাচিত হতে পারলে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত শার্শা গড়ায় হবে আমার প্রধান কাজ।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন বলেন, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।কারণ শার্শা বেনাপোলের সাধারন মানুষই আমাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন। সংসদে কথা বলার জন্যই সাধারণ ভোটাররা আমাকে বেঁছে নিয়েছেন। বর্তমানে যিনি সংসদ সদস্য আছেন তিনি কখনও শার্শা ও বেনাপোলের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন না। সাধারন ভোটাররা তাদের ভাগ্য উন্নয়নে আমাকে নির্বাচিত করবেন এবং জাতীয় সংসদে পাঠাবেন।

নির্বাচনে আমি বিজয়ী হলে সাধারন মানুষের ভালোবাসার দায়িত্ব নিয়েই শার্শা উন্নয়নে কাজ করবো। নগর উন্নয়ণে নতুন নতুন রাস্তা নির্মানসহ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবো। শার্শা উপজেলাকে বাংলাদেশের মধ্যে মডেল স্মার্ট উপজেলায় পরিনত করবো।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনবারের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, জীবনে আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। সুযোগ পেলে যশোর-১ আসনের মানুষের উন্নয়নে আজীবন কাজ করে যাব। দলের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমি শিক্ষা, বিদ্যুৎসহ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেছি। শার্শাকে আমি একটি স্মার্ট উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর ধরেই এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। প্রথম ২০০১ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করতে না পেরে আমি এলাকা ছেড়ে যাইনি। শত নির্যাতনের মধ্যে কর্মীদের পাশে ছিলাম। নৌকার টিকিট পেয়ে আমি ২০০৮ ও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। আমি মাঠ গোছানোর কাজ করেছি। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এলাকার নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখে সব সময় পাশে থেকেছি, ভবিষ্যতেও থাকব। আশা করি, আমার কাজের মূল্যায়ন করে ভোটাররা আমার সাথেই থাকবেন।