খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ মার্চ ৯, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 5182 বার
সানজিদা আক্তার সান্তনা, যশোর অফিস : যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা মল্লিক পাড়ায় চিকিৎসার নামে প্রতারণার ফাঁদ পাতা প্রতারক খন্দকার কবীর হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতারিতরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ক্যান্সার ও যৌন চিকিৎসা দিয়ে কবীর আর্থিক সুবিধা নিলেও ভুক্তভোগীদের কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এদিকে, ভায়াগ্রা ইডিগ্রাসহ ভারতীয় যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট গুড়ো করে মিশিয়ে বড়ি ও হালুয়া তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার ক্যান্সার চিকিৎসার নামে মানুষকে ঠকানো হচ্ছে। কবীরের তৈরি কথিত ওষুধ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা না করায় তার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ক্যান্সার ও যৌন উত্তেজনার ওষুধ নিয়ে প্রতারিত হয়েছেন এমন কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন আব্দুর রাজ্জাক, হাবীব, খোরশেদ আলম, ঈমাম হোসেন, মিজানুর রহমান, সুমন দাস, রুবেল হোসেন, আল আমিন, লিপি আক্তার ও জুয়েল হোসেন।
যোগাযোগ করা হলে আব্দুর রাজ্জাক জানান, তার মায়ের ক্যান্সার চিকিৎসার নামে তার কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নেন খন্দকার কবীর হোসেন। ওষুধ খাওয়ার পর উন্নতিতো দুরের কথা শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়।
মুঠোফোনে কথা হলে হাবীবুর রহমান হাবীব নামে একজন জানান, যৌন চিকিৎসার জন্য দুই বারে তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়েছেন ননী ফল নার্সারির কবীর হোসেন। প্রথমবারে ৮ হাজার ও দ্বিতীয়বারে ২ হাজার টাকা দেয়া হয় তাকে। কিন্তু কাজ হয়নি। বরং ওষুধ খাওয়ার পর শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়ার কারণে তিনি আর খাননি। পরে ওষুধগুলো ফেলে দেয়া হয়।
রুবেল হোসেন জানান, খন্দকার কবীর হোসেন একজন প্রতারক। গোপন চিকিৎসার নামে তার কাছ থেকে ৬ হাজার ৬শ’ টাকা নেয়া হয়। তার ওষুধ খেয়ে কোনো কাজ হয়নি। রুবেলের দাবি তার মতো আর কেউ যেন প্রতারক কবীরের খপ্পরে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, ননীফল নার্সারির আড়ালে কবীরের জমজমাট চিকিৎসা প্রতারণা চলছে। তিনি রাতের আধারে নার্সারির পাশের একটি টিন শেডের মধ্যে নিম গাছের পাতা, জিনসেং পাউডার, ননী ফল গাছের ছাল ও বাকল জ্বালিয়ে যৌন উত্তেজক ওষুধ মিশিয়ে বড়ি ও হালুয়া তৈরি করে। রাতেই সেগুলো বোতলে ভরা হয়। এরপর মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে চিকিৎসা প্রতারণা শুরু হয়। ভুয়া ওষুধ দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় হাজার হাজার টাকা। এভাবে তিনি লোক ঠকিয়ে প্রতি মাসে ৩০ লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, তিনি বিগত দিনে খন্দকার কবীর হোসেনের ডেরায় চাকরি করতেন। কিন্তু চিকিৎসা প্রতারণা ও মানুষ ঠকানোর কারণে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, ননী ফল নার্সারি শুধু মাত্র কবীরের সাইনবোর্ড। এই নার্সারির আড়ালে তার যত সব অপকর্ম রয়েছে। কবীরের প্রতারণা বন্ধের দাবি জানান তিনি। অন্যথায় তার চিকিৎসায় মানুষ শারীরিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবেন।
এসব বিষয়ে খন্দকার কবীর হোসেন জানান, তার বিরুদ্ধে মানুষ মিথ্যাচার করছেন। তিনি সঠিক পদ্ধতিতে ক্যান্সার ও যৌন ওষুধ তৈরি করছেন।
চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. তৌহিদুর রহমান জানান, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা ছাড়া কোনো ভাবেই যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবন করা ঠিক না। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে।
ওষুধ প্রশাসন যশোরের তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল ইসলাম জানান, ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়াই খন্দকার কবীর হোসেন অবৈধভাবে যৌন উত্তেজক, ক্যান্সারসহ নানা রোগের ওষুধ তৈরি করছেন। তার ওষুধ পরীক্ষাগার নেই। কবীরের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরেছি। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, খন্দকার কবীর হোসেনের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ডিগ্রি না থাকার পরও সকল রোগ নিরাময়ের শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে চিকিৎসা করে আসছেন। একই সাথে নানা প্রকারের ওষুধ তৈরি করছেন। আবার ফেসবুক আইডিতে ডাক্তার ও মোটরসাইকেলে চলেন পুলিশ লিখে। এই বিষয়ে গত কয়েকদিন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর কবীরের প্রতারণা এলাকায় ফাঁস হয়ে পড়ে। বিভিন্ন মহলে দেনদরবার করছেন তিনি।