মোঃ জাহাঙ্গীর আলম : আন্তর্জাতিক সিমান্ত চেকপোষ্ট বেনাপোল ইমিগ্রেশন কাস্টমসে চলছে অবাধে ল্যাগেজ, জাল ভ্রমণকর ও হুন্ডি বাণিজ্য। দেশে বিনা শুল্কে অবৈধ পণ্য প্রবেশ করায় মারাত্মক হুমকির মুখে আমদানি বাণিজ্য। স্থানীয় ল্যাগেজ পারাপারকারী চোরাই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তাদের রমরমা ঘুষ বাণিজ্য চলতে থাকায় প্রতিদিন সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। একই সঙ্গে চলছে যাত্রীপ্রতি ১ হাজার টাকার ট্রাভেল ট্যাক্স ফাঁকির মহোৎসব।

ভারতগামী দেশি-বিদেশি যাত্রীদের সঙ্গে ভ্রমণকর জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে ১০টি দোকানে তালা দিয়েছে পুলিশ। তবে অজ্ঞাত কারণে থরা পড়েনি তোন দোকান মালিক।

গত বুধবার ভোরে চালানো এ অভিযানের খবর পেয়ে দোকানিরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন ভূঁইয়া।

সম্প্রতি ভারতগামী শারমিন আক্তার ও জাকির হোসেনের কাছ থেকে প্রতারণা করে ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

স্থানীয়রা জানায়, চেকপোস্টে বিভিন্ন নামে শতাধিক এন্টারপ্রাইজের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে পাসপোর্ট দালালীসহ ভ্রমণকর জাল-জালিয়াতি ও হুন্ডি ব্যবসা করে আসছে। এসব প্রতারণার অভিযোগে আগেও একাধিকবার এসব দোকানে তালা ঝুলিয়ে কয়েকজনকে আটক করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে ছাড়া পেয়ে তারা ফের এ ধরনের প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন।
সবশেষ প্রতারণার অভিযোগে চৌধুরী মার্কেটের রবিউল ইসলামের মধুমতি স্টোর, ইবাদত হোসেন, মফিজুর রহমান, আমিন উদ্দিন মসজিদ মার্কেটের ইয়ামিন, ঢাকা হোটেলের পেছনে রিংকু মিয়া, রাজলক্ষ্মী স্টোরের মুসা, রেজাউল মার্কেটের মিলন, হোটেল ফ্রেসের পাশে শহিদুলের দোকান তালা ঝুলিয়ে দেয় প্রশাসন।

পুলিশ জানায়, বেনাপোল বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশন ও বন্দর প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে থেকে দ্রুত পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সেরে দেওয়ার কথা বলে যাত্রীদের নিয়ে যায় প্রতারক চক্রটি। পরে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ‘জাল ভ্রমণকর’ রশিদ তৈরি কিংবা যাত্রীদের সঙ্গে থাকা টাকার নম্বর লেখার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিত তারা।
চক্রটির কেউ দোকানের নাম ব্যবহার করে কেউবা নামবিহীন ঘরে বসে প্রতারণা কার্যক্রম চালাত বলে জানায় পুলিশ।
ওসি কামাল হোসেন জানান, যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে চেকপোস্ট এলাকার ১০টি দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় এমন অভিযান চলমান থাকবে।

তিন মাস আগে চেকপোস্টে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন সনদ জালিয়াতি, যাত্রী হয়রানিসহ একাধিক অভিযোগে শাওন এন্টারপ্রাইজের দোকানে তালা দিয়েছিল পুলিশ।

পুলিশ জানায়, বেনাপোল বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশন ও বন্দর প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে থেকে দ্রুত পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সেরে দেওয়ার কথা বলে যাত্রীদের নিয়ে যায় প্রতারক চক্রটি। পরে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ‘জাল ভ্রমণকর’ রশিদ তৈরি কিংবা যাত্রীদের সঙ্গে থাকা টাকার নম্বর লেখার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিত তারা।

চক্রটির কেউ দোকানের নাম ব্যবহার করে কেউবা নামবিহীন ঘরে বসে প্রতারণা কার্যক্রম চালাত বলে জানায় পুলিশ।
সুত্রমতে, বেনাপোল থেকে ভারতের কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। এখান থেকে দুদেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বিজনেস, ট্যুরিস্ট, মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসার সিংহভাগ যাত্রী এ পথেই যাতায়াত করেন। ৫ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াতের এই চেকপোস্ট থেকে প্রতিদিন ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার রাজস্ব আসার কথা। যা ইমিগ্রেশন এন্ট্রি কাউন্টার থেকে প্রতিদিনের যাত্রী সংখ্যা আর কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের হিসাব মেলালে শুভঙ্করের ফাঁকি বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন সুধীজনরা।

জানা যায়, ল্যাগেজ পারাপারকারী যাত্রীর কাছ থেকে প্রতিদিন ইমিগ্রেশনে কর্মরত এক শ্রেণীর অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদমর্যাদার মান বুঝে নগদ ঘুষ বাণিজ্য হয় সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত। সেখানে নামমাত্র দু-একজন ননটেকার নামধারী কর্মকর্তা থাকলেও তাদের বিভিন্ন কাজের মাঝে চুরি করে ল্যাগেজ পণ্য পারাপার করেন এসব টেকার নামধারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ স্থল প্রবেশপথ বেনাপোল দিয়ে যাতায়াতে স্ক্যানিং মেশিন থেকে শুরু করে পথে পথে অহেতুক ব্যাগ তল্লাশির নামে হয়রানি করেন এসব কর্মকর্তা। লোভ তাদের এমনভাবে ঘিরে ফেলেছে যেখানে ব্যাগ প্রতি অবৈধ চাহিদার টাকা না দিলে ব্যবহারের জন্য ভারত থেকে নিয়ে আসা সামান্য কেনাকাটার পণ্যসামগ্রী ডিএম (আটক) করে এবং তা কাস্টমসে জমা দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন অগণিত পাসপোর্ট যাত্রী। এছাড়া তাদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। যে কারণে এ পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত কমতে শুরু করেছে পাসপোর্ট যাত্রী চলাচল। সরকার হারাতে বসেছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। বিষয়টি এলাকার সচেতন মহল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।