মো: জাহাঙ্গীর আলম : ‘সাংবাদিকদের প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ প্রশিক্ষিত করে তুলতে প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ”প্রশিক্ষিত সাংবাদিক আমাদের প্রত্যাশা”। প্রযুক্তির বিবর্তন হয়েছে, হয়েছে উন্নয়ন। তাই সাংবাদিকদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন রুরাল জার্নালিষ্ট ফাউন্ডেশন (আরজেএফ) চেয়ারম্যান জহির হোসেন। গত ২৫ নভেম্বর বিকাল সাড়ে তিনটায় যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ”প্রশিক্ষিত সাংবাদিক আমাদের প্রত্যাশা” শিরোনামে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে সাংবাদিক সানোয়ার আলম সানুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আরজেএফ এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব হাসনাত কবির আলম। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গ্রামের সংবাদ পত্রিকার সহকারি সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক সাহিদুল ইসলাম বাবু, এম এন আশরাফ শুভ, মনিরুজ্জামান বিপ্লব, মোছাঃ আমিরুন নেছা, সাইফুল ইসলাম, আবিদুর রেজা প্রমূখ।

প্রধান অতিখি আরো বলেন, প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষিত হতে হবে।’ কারণ সাংবাদিকের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। মানুষ যেখানে ভাবনা শেষ করে, সেখান থেকে একজন সাংবাদিক ভাবতে শুরু করেন। আর আমরা এখন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছি। শুধু পরিমনির ঘটনা নয়, এমন অনেক ঘটনায় একজন সাংবাদিককে যখন দেখি, রঙ্গ-তামাশায় মেতে ওঠেন, তখন বুঝতে বাকি থাকে না- পরিণতির দৌড়গোড়ায় মনে হয় আমরা। দলীয়করণ, বিভক্তি এসব কারণে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো তো রসাতলে গেছেই।

পেশায় সংবাদকর্মী। পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পরিচয়ের কিছুটা ব্যাপ্তি রয়েছে। আর যখন একজন সাংবাদিক ভালো রিপোর্ট করেন, তখন সামাজিক মাধ্যমে তার ওয়ালে ছড়িয়ে দেয় দ্যুতি। সমাজের আর দশটা মানুষের কাছ থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে ভাবতে হয় একজন সাংবাদিককে।

কেউ বুয়েট, কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং আবার কেউ চিকিৎসা পেশা ছেড়ে এসেছেন সাংবাদিকতায়। বিসিএস ক্যাডার বা ব্যাংকের কড়কড়ে নোটের সুবাস ছেড়ে যুক্ত হয়েছেন নাক সিটকানো পেশা সাংবাদিকতায়। তাহলে অবশ্যই এই পেশার একটা মোহ সবার মধ্যেই কাজ করে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দাপটে নাস্তানাবুদ এখন গণমাধ্যম। সেই ফেসবুকে এখন প্রচুর রিপোর্ট হয়, অনেক শেয়ার হয়। অনেক ঘটনা নিয়ে হয় ট্রল। চলে সেগুলো নিয়ে নগ্ন তামাশা। ক্ষণিকের আনন্দ আর লাইক-শেয়ার পেতে কাউকে হেনস্তা করতে ছাড় দেয় না ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। তবে এতে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়, আপনি আসলে কেমন রুচি কিংবা মানসিকতার ধারক-বাহক।

আবার অনেক সাংবাদিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে গণ্যমান্যদের সঙ্গে হাহা হিহি করে সেলফি তোলেন। সেগুলো আবার গর্ব করে ফেসবুকে আপলোড করেন। একবার ভাবুন তো, যার সঙ্গে সেলফি তুলতে গেলেন, তিনি কি নিজে কখনও আপনার সঙ্গে সেলফি তুলতে গেছেন! বিভিন্নভাবেই নিজের ব্যক্তিত্ব তুলে ধরতে হয়, নিজেকে হালকাভাবে উপস্থাপনের কোনো প্রয়োজন নেই।

ফেসবুকের আইডিতে যখন একজন সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় তুলে ধরছেন, তখন মনে রাখতে হবে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনি কী লিখবেন। কোন ঘটনাটিকে মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। কারণ সেটি দিয়েই ভার্চুয়াল বন্ধুরা পরিমাপ করবে আপনার পরিবার-বন্ধুজন, রুচিবোধ।
এখন হয়তো অনেকেই লেখকের ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে তল্লাশি চালাতে পারেন, এমন কোনো পোস্ট আছে কি না, যা দিয়ে ট্রল করা করা যায়! ভুল লেখকের হতে পারে। চলুন, সব সাংবাদিক বন্ধু মিলে পেশাটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই, সবক্ষেত্রেই রুচিশীলতার পরিচয় দেই। পেশার সম্মান বাড়াতে আরও পেশাদার এবং সচেতন হই।

সভা শেষে সানোয়ার আলম সানুকে সভাপতি ও এমএন আশরাফ শুভকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দিয়ে ৯ সদস্য বিশিষ্ট যশোর জেলা শাখা কমিটি গঠন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দদের হাতে সম্মাননা ক্রেষ্ট তুলে দেন যশোর জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।