নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে ১৫ নভেম্বর। এরই মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি। বিএনপি তফসিল প্রত্যাখ্যান করে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না জানিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, বিএনপি নির্বাচনে না এলে সেক্ষেত্রে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা যাতে নির্বাচনে অংশ নেন- তা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়াতে দেয়া হচ্ছে নানা টোপ, নানা প্রলোভন। টার্গেট করা হচ্ছে দলটির নিষ্ক্রিয় সাবেক এমপি, দলছুট ও বহিষ্কৃত নেতাদের। এ ছাড়া নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে যারা এমপি হয়েছিলেন তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। শুধু বিএনপি নয়, তাদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকা সমমনা শরিক দলগুলোর নেতাদেরও নানা লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে বলে সূত্র দাবি করেছে।

তবে এসব প্রস্তাবের কথা অস্বীকার করেছেন ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা। তারা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কাউকে প্রলোভন দেখায় না।’

অপরদিকে বিএনপি বলছে, এগুলো করে সরকার পতনের আন্দোলনকে স্তব্ধ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে আন্দোলন থামাতে সরকার ব্যর্থ হবে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার ভয়ভীতি দেখিয়ে, জেল-জুলুমের হুমকি দিয়ে আমাদের কিছু নেতাকে নির্বাচনমুখী করার চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে হয়তো জনবিচ্ছিন্ন গুটিকয়েক নেতাকে ম্যানেজ করতে পারলেও সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। এদেশে দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের এমপি বানানোর নিশ্চয়তা দিয়ে দলছুট করার চেষ্টা করছে সরকার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল বিএনপি ও আগস্টে বিএনএম নামে দুটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে সদ্য নিবন্ধিত তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমের ব্যানারে নির্বাচন করবেন দলছুট নেতারা। এছাড়াও স্বতন্ত্র গণতন্ত্র মঞ্চের ব্যানারেও কেউ কেউ আসতে পারেন নির্বাচনে।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপিকে এর আগেও ভাঙার চেষ্টা করেছে সরকার, সফল হয়নি। গণবিরোধী সরকারগুলোই এসব নোংরামি করে। এগুলো করে বিএনপির প্রতি জনগণের সমর্থন কমানো যাবে না। জনগণের সঙ্গে বিএনপির যে অটুট বন্ধন তা ছিন্ন করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য এমন কোনো চেষ্টা নেই যে সরকার করেনি। এগুলো করে সরকার নিজেদের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করছে।’

গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরীকে চেয়ারপার্সন এবং অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে মহাসচিব করে পুনর্গঠন করা হয় তৃণমূল বিএনপি। সেদিন থেকেই তাদের নির্বাচনে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর সক্রিয় হতে থাকে বিএনপি থেকে বের হওয়া কিছু নেতার সমন্বয়ে গঠিত বিএনএম। ১৫ নভেম্বর বিকালে রাজধানীর মালিবাগ এলাকার স্কাই সিটি হোটেল লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার আহসান হাবিব এবং ব্যারিস্টার এ কে এম ফখরুল ইসলাম ঘোষণা দেন স্বতন্ত্র গণতন্ত্র মঞ্চ নামের একটি রাজনৈতিক দলের। ১২৫ জন বিএনপি নেতাসহ নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেন জানান তারা।

শনিবার হঠাৎ করেই গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূল বিএনপির শীর্ষনেতারা। তারা ৩০০ আসনে নির্বাচন করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান।

সোমবার বিকালে হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন ডাকে বিএনএম। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শাহ মো. আবু জাফরকে করা হয় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় কয়েকদিনের মধ্যে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা বিএনএম-এ যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

অপর একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, বিশেষ করে জেলার শীর্ষনেতাদের টার্গেট করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি থেকে বের হওয়া নেতাদের নিয়ে গঠন হওয়া কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে একটি নতুন জোট। যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এ প্রসঙ্গে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করব। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা আরও আগে থেকে শুরু করেছি। নির্বাচনে কে এলো না এলো এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমরা হয়ত জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করব।’ এদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলার একাধিক নেতা ঢাকা টাইমসকে জানান, সরকারের উচ্চমহল থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অনেকটা ভীতি কাজ করছে। তারা যদি সরকারের কথামতো নির্বাচনে অংশ না নেয় সেক্ষেত্রে নিজ এলাকায় থাকা কঠিন হয়ে পড়বে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন। তবে দলছুট ও নিষ্ক্রিয় দুই-একজন টোপ গিললেও বেশির ভাগ নেতাই এসব প্রস্তাবে তেমন সাড়া দেননি।

সরকারের তরফ থেকে এমন প্রস্তাব পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন একাধিকবার নির্বাচিত বিএনপির সাবেক এক এমপি। তিনি বলেন, ‘শুধু আমার সঙ্গেই যোগাযোগ করেনি। আমার মতো সাবেক অনেক এমপির সঙ্গেই যোগাযোগ করা হচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য নানা প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। তবে বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি সবাই আস্থাশীল।’

আড়াইহাজারের সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর বলেন, ‘১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এমপি ছিলাম। আমি বিএনপি করি। বিএনপির টিকিটে তিনবার এমপি হয়েছি। বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় তাহলেই আমি নির্বাচন করব। না গেলে করব না।’

সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের প্রস্তাব পাননি বলে জানিয়েছেন তিনি।