মনোহরপুর,(মণিরামপুর)প্রতিনিধি : শেষ রাতের হিম শীতল বাতাসে কাঁটা দিিচ্ছে শরীরে।শিশির বিন্দু ও বলে দিচ্ছে শীত কড়া নাড়ছে।

দিনে গরম আর রাতে ঠান্ডা তাই তো মনে হচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। মিষ্টি হয়ে উঠেছে ভোরের সূর্য।সূ্র্য্যদয়ের পাখি ডাকা ভোরটা হয়ে উঠেছে কুয়াশাময়।কুয়াশার আচল সরিয়ে যখন উত্তরের বাতাস বইছে শরীরে তখন ছড়িয়ে পড়ছে শীতের হীম স্পর্শ।আর নরম রোদের আবেশ জানান দিচ্ছে শরত গেছে হেমন্তের হাত ধরে আসছে শীত। শেষ রাতের হিম শীতল বাতাসে কাটা দিচ্ছে শরীরে। তাই নকসি কাঁথা উঠছে শরীরে। কৃষকের মাঠে ধান আর ধানের সোদাগন্ধ উত্তর থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বইছে আগমনী রার্তা। সকালে শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রস্তুত হচ্ছে প্রকৃতি। ঋতু বৈচিত্র্যে এখন রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগাম বার্তা।

আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়ন এর বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা গাছকাটা কাজে গাছিরা এখন ব্যস্ত। এক সময় খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরী চিনি ছিলো প্রসিদ্ধ দেশ এর কদর ও ছিলো বেশ। কিন্তু এখন আর তা পাওয়া তেমন যায় না। এ রস গুড়ের চাহিদা বেশ ছিলো উৎপাদন ও কম হতো না মানুষ অপেক্ষায় থাকতো কেশবপুর উপজেলার কাটাখালি বাজারের দিনের জন্য মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে খেঁজুর গাছ ও গাছি।

কথায় আছে যশোরের যশ খেঁজুরের রস। গৌরব আর ঐতিহ্যের মধু বৃক্ষ খেঁজুর গাছ। যত শীত ঘনিয়ে আসছে তত যেন মনও আনন্দদের বাধ বাধতে শুরু হচ্ছে। এই খেঁজুর গাছ গ্রামের আনাচে কানাচে অযন্ত অবহেলায় প্রাকৃতিক আলো বাতাসে বেড়ে ওঠে। শীত এলেই কদর বাড়ে খেঁজুর গাছের। তবে শীত কালের খেঁজুরের রসই বেশী সুস্বাদু। এই খেঁজুর গাছ মানুষের অনেক উপকারে আসে। যেমন শীতের শুরু তেই গাছ থেকে মিষ্টি রস দেয়। ঐ রস থেকে তৈরি হয় যশোরের সেই বিখ্যাত গুড় ও পাটালী যা মানুষের হৃদয়ে সহজে জায়গা করে নেয়। এতে রয়েছে মিষ্টি ঘ্রাণ। পুরো শীত মৌসুমে চলে পিঠা পুলি আর পায়েসের উৎসব। এ যেন ভোলার নয়, সেই আনন্দ এখন আর গ্রামীন জনপদে আর দেখা জায় না। প্রিয় মধু বৃক্ষ খেঁজুর গাছের কাচা রস আর গুড়, পাটালী, পিঠা, পায়েস সহ নানা সব কিছুর টানে বহু দূর থেকে ছুটে আসে গ্রামে সবাই। পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপভোগ করার জন্য। পুরো শীত মৌসুমটা চলে আনন্দ আনন্দে।

এলাকা বাসী জানান যে, আমাদের ইউনিয়নে বহু খেঁজুর গাছ ছিল। এই খেঁজুর গাছ গুলো বাড়ির আঙ্গিনায়, পতিত জমিতে, জমির আইলে, ঘেরের পাড়ে, মাঠে-ঘাটে রয়েছে প্রায় দেড় লক্ষধিক খেঁজুর গাছ। স্থানীয় এক গাছিরা মনোহরপুরের ইজার জানান প্রতিদিন ১৬০টি খেঁজুর গাছের রস আহরণ করেন। ছিজিনাল ব্যবসায়ী শত শত পরিবার ঐ খেঁজুর গাছের উপর নির্ভরশীল। আর এই খেঁজুর গাছ কাটার উপকরণ হলো, গাঁছি দা, দড়া, খুঙ্গী, পাওট, বালদারা ও আঁকড়া। একজন গাছি এই শীত মৌসুমে অর্থাৎ ১৬০ দিনে একটি গাছ থেকে ২০-২৫ কেজি গুড় পাটালী সংগ্রহ করতে পারে। এ সময় চাহিদা বেশি কাচা খেঁজুর রস এক ভাড় ১৩০/১৫০ টাকা করে বিক্রয় করে। খেঁজুর গাছ কোন ফসলের ক্ষতি করে না। এই গাছের জন্য বাড়তি কোন খরচ ও করতে হয় না। বাড়ির আঙ্গিনায় কোন প্রকার যত্ম কিংবা খেয়াল ছাড়ায় বেড়ে ওঠে এই খেজুর গাছ। শুধুমাত্র শীত মৌসুম এলেই গাছ গুলোর যতœ করা হয়। পরিষ্কার করা হয় খেঁজুর গাছকে। খেঁজুর গাছের পাতা দিয়ে তৈরী করা হয় বেদে পাটি ও মাদুর। জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হয় তাদের শিকড়ও। আজ এই সমাজে খেঁজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। ইচ্ছা কৃত ভাবে কেউ খেঁজুর গাছের চাষাবাদ করেনা। পরিকল্পিত ভাবে খেঁজুর গাছ চাষ করলে বৃদ্ধি হবে দেশের আর্থিক সম্পদ। বেশি করে খেঁজুর গাছ লাগালে সেখান থেকে গুড় পাটালীর চাহিদা দেশে মিটানোর পরও বিদেশে রপ্তানীর সুযোগ থাকবে। এদেশে খেঁজুর গাছ গ্রাম-গঞ্জে অনেক ঘুরাঘুরির পরও খেজুর গাছের সন্ধন পাওয়া যায়নি।আর কিছু খেঁজুর গাছের সন্ধান পাওয়া গেলে ও সেগুলো কাটেনি।

এ ব্যাপারে জানতে খেঁজুর রস সংগ্রহকারি নুর মোহাম্মদ, ইজার ও বলেন, গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে গেলে প্রথমে গাছ কাটার ৬থেকে ৭ দিন পর নলি, সুতানি ও চাচ দেওয়া এবং দড়ি বাধতে হয়।তার ১০ থেকে ১২ দিন পর থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। আমরা যারা আজ থেকে ১৫/২০ বছর আগে খেঁজুর গাছ কেটেছি ‘তাদের ভিতর এখন কেউ আর এ কাজ করে না। আমাদের সময় এ খেঁজুর গাছ অনেক ছিলো কিন্তু সে তুলনায় এখন অনেক কম। আগে তেমন কোন টাকা-পয়সা লাগতো না। আর এখন প্রতিটি খেঁজুর গাছ তুলতে ১০০/১২০ টাকা খরচ হয়। আমার নিজের কোন গাছ নেয় তাই অন্যের খেঁজুর গাছ চুক্তি করে রস সংগ্রহ করি। এ গুলকে গুড় তৈরি করে স্থানীয় হাটে বাজারে গিয়ে বিক্রি করি। এই তিন মাস খুব ভাল ভাবে সংসার চালাতে পারি। শীত মৌসুম শেষ হলে অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চালায়। খেঁজুর গাছ থেকে সুস্বাধু রস, জ্বালানী আর মাদুর সংগ্রহ করি যা কাজের প্রয়োজনে অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করতে হয়না। শীত মৌসুম শেষ হবার সাথে সাথে এই খেঁজুর গাছে আবার ফল পাওয়া যায়। শীত মৌসুম শুরু হলেই গ্রামের প্রায় প্রতি বাড়িতেই পায়েস ও রসে ভিজানো পিঠার উৎসব শুরু হয়। সকাল-সন্ধ্যায় চলে সাজো রস খাওয়ার প্রস্তুতি। গ্রামীণ সন্ধ্যাকালীন জীবন বড়ই আনন্দের হয়ে ওঠে, দেশে রস গুড় জ্বালানির চাহিদা মিটানোর পরও বিদেশে রপ্তানি করা যায়। খেঁজুর গাছের শিকড় দিয়ে আবার গ্রামের লোক-জন ঘুনি ও চারো, তৈরি করার কাজে ব্যবহার করে। এত কিছু চাহিদা মিটাবার পরও বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ। গ্রামীণ জন পদে খেঁজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমতি ছাড়া বাড়তি নয়। এভাবে রস বৃক্ষ খেজুর গাছগুলো ধ্বংস হতে থাকলে শত শত পরিবারের রস, গুড় ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগামী প্রজন্ম রসের স্বাদও ভুলতে বসবে। যশোরের যশ খেঁজুরের রসের থাকবে না কোন পরিচিতি।