খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর, রাজনীতি | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 17055 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ‘এখন মারলে পাল্টা মাইর দিতে হবে, সে যেই হোক। এখন বক্তৃতা আর স্লোগানে কাজ হবে না। সারাদেশে একযোগে আন্দোলন হচ্ছে, হতে থাকবে। এই দেশকে হায়েনার হাত থেকে মুক্ত করবো, ইনশাআল্লাহ।’
মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় যশোর শহরের মুড়লী মোড়ে রোডমার্চের সমাবেশে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এ কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এদিন সকালে ঝিনাইদহ থেকে শুরু হওয়া রোডমার্চ মাগুরা সদর উপজেলার আলমখালী বাজার থেকে বিকালে যশোরের বাঘারপাড়ায় এসে পৌঁছায়। সেখানে পুলেরহাট বাজারে পথসভা শেষে বিকাল ৪টায় রোডমার্চের বহরটি মুড়লী মোড়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদের ভাগনে দেশ থেকে এক লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। যে টাকা দিয়ে দেশে কমপক্ষে ১০টি পদ্মা সেতু করা যেতো। তথাকথিত উন্নয়নের নামে টাকাগুলো বিদেশে পাচার করা হয়েছে। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জয়ের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করলে তার কিছু আসে যায় না। কথা তো ঠিকই বলেছেন তিনি। সম্পদ তো আপনার নয়, জয়েরও নয়। সম্পদ হচ্ছে আমাদের। আমাদের ঘামের টাকা এগুলো। এসব পাচারকৃত টাকা দেশে ফিরিয়ে আনুন। অনেক শোষণ করেছেন, রক্ত চুষতে চুষতে দেশের মানুষকে ফ্যাকাশে বানিয়ে ফেলেছেন। এবার বিদায় নেন।’
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘জনগণকে মাফ করেন। ক্ষমতা ছাড়েন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। আমার নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। দেশের লোক তাহলে আপনাকে মাফ করলেও করতে পারে।’
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। আমরা এবার তাকে মুক্ত করবো । দেশ ও মানুষ বাঁচানোর জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। লুটেরা সরকারের পতনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ একতাবদ্ধ হয়েছে। পতন ঘটাতে হবে। বিএনপি কোন লুটতরাজ করে না। ডাকাতি করি নাই। অন্যদিকে পোষাকধারী একজন লোক হুংকার ছাড়ছে। তিনি তার বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। যদি কেউ বিশৃঙ্খলা করে ছাড় দেওয়া হবে না। আপনাদের কাজ চোর ধরা তাদের কেন ধরেন না। আমাদের কেন ধরেন?
তিনি বলেন, ১৫ বছরের তিক্ত জনগণ আজ মাঠে নেমেছে। তার তাদের ভোটাধিকার চায়। আমরা সেই জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করছি। অন্যদিকে পোষধকারী বাহিনী আমাদের বিরুদ্ধে লেগেছে। মনে হচ্ছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মত আজ তারা আমাদের শাসন ও শোষণ করছে। আমরা কারও রাজত্বে বাস করি না। এটা মাথায় রাখতে হবে। ১৫ বছরে জনগণের সকল অধিকার হরণ করেছেন, তাদেরকে বোকা বানিয়েছেন। আর বোকা বানানো যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। আর আপনার আপনাদের অবৈধ ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ১৫ বছর তো ক্ষমতায় থেকে দেশকে দেউলিয়া বানিয়েছেন। লুটপাট করতে করতে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছেন। ব্যাংকগুলো খালি হয়ে গেছে। আমাদের রিজার্ভ নেই। তথাকথিত উন্নয়নের লুটপাট করে টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন।
পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আরেক সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,এখন থেকে আন্দোলন হবে বাঁচা মরার। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। এখন থেকে আঘাত আসলে পাল্টা আঘাত হবে। রাজপথে যখন নেমেছি,রাজপথেই ফয়সাল্লা হবে। আওয়ামী লীগের কাছে অবৈধ অস্ত্র গুলি আর আমাদের কাছে জনগণের শক্তি । জনগণের শত্রু, দেশের শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু, টাকা পাচারকারী এই ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশ বাঁচবে না।
অপর বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, অচিরেই হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ হবে। আজ দেশের সমগ্র জনগণ তাদের পতনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। কেউ আওয়ামী লীগের পতন ঠেকাতে পারবে না। ১৫ বছরের রাজত্বে তারা জনগণের যে টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। সেই টাকা দেশে ফেরত এনে জনগণের টাকা জনগণকে দেওয়া হবে।
দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, জনগণের মধ্যে বিপ্লবী চেতনা শুরু হয়ে গেছে। দেশে আন্দোলনের অগ্নি গর্ভ সৃষ্টি হয়েছে। ভালোয় ভালোয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন অন্যথায় কারাগার ভেঙে তাকে মুক্ত করে আনবো।
ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড.নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা ৪০ চোর ডাকাতের সরদার। গত ১৫ বছর লুটপাট করতে করতে দেশটাকে লুটপাটের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করেছেন। জনতার আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে। দ্রুত বিদায় নিন,অন্যথায় জনতার আন্দোলনে বঙ্গপোসাগরে গিয়ে পড়বেন।
এছাড়া বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড আসাদুজ্জামান, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড.সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও সদস্য মিজানুর রহমান খানের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
যশোর জেলা বিএনপির পথসভা শেষে রোড মার্চের গাড়ি বহর যশোর খুলনা মহাসড়ক দিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে নওয়াপাড়া পৌর সদরে অভয়নগর উপজেলা বিএনপির পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে দুপুর আড়াই টায় রোড মার্চের গাড়ি বহর যশোরে পৌঁছে যশোর-মাগুরা সড়কের পাশে পুলেরগাট বাজারের বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পৃথক দুটি সভায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।