জেলার খবর, ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ বিভাগ | তারিখঃ আগস্ট ৭, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 2973 বার
ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি।। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদকের কালো থাবা, আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর তৎপরতা না থাকায় মাদক কারবার, ছিনতাই চুরি জর্জরিত।
বিশ্বায়নের যে কয়টি উপসর্গ ঘৃণিত ও কলঙ্কিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম, সব অপরাধের জনক মাদক। এটি চুরি, ডাকাতি, খুন ও যৌন হয়রানির মতো অপরাধের নেপথ্যের অন্যতম কারণ। ছিনতাই কিংবা খুনের ঘটনা মাদকাসক্ত লোকের মাধ্যমে ঘটছে- এমন নজির বহু রয়েছে। মাদক নির্মূল না করতে পারলে, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। কেননা অধিকাংশ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের পেছনে রয়েছে মাদকের কালো থাবা। মাদকাসক্তদের মধ্যে ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, রিকশাচালক ও অন্যান্য পেশার মানুষও রয়েছে। বাদ যাচ্ছে না নারীরাও।
এক সমীক্ষায় জানা যায়, উপজেলার ৭নং মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের সাতেঙ্গা বইডাপাড়া, উথুরা, ভরাডোবা, মেদুয়ারী, বান্দিয়া, নিঝুরী, কয়েকজন মাদক কারবারি ইতিপূর্বে ২নং মেদুয়ারী ইউনিয়নের মেদুয়ারী চিত্রার বন্ধ নামক জায়গা সন্ধ্যার পরপরই কারবারিদের উপস্থিতি। তার কিছুক্ষণ পরপরই মাদক সেবী এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা মাদক ক্রয় করতে চলে আসে। ওই চিত্রাবন্ধ এলাকায়।
এতে দেখা যায়, শতকরা ৮০ ভাগ মাদকাসক্তের বয়স ১৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে, আমাদের মূল চালিকাশক্তি তরুণদের একটি বিরাট অংশ মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে; যা দেশের প্রগতি ও সমৃদ্ধির অন্তরায়। মাদকাসক্তি বলতে মাদকদ্রব্যের প্রতি নেশাকে বোঝায়। যেসব দ্রব্য সেবন করলে আসক্তির সৃষ্টি হয়, জ্ঞানার্জনের স্পৃহা ও স্মৃতিশক্তি কমে যায় সেগুলো মাদকদ্রব্য। ব্যাপক অর্থে, যে দ্রব্য গ্রহণের ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে এবং ওই দ্রব্যের প্রতি নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়, পাশাপাশি দ্রব্যটি গ্রহণের পরিমাণ ক্রমেই বাড়তে থাকে এমন দ্রব্যকে মাদকদ্রব্য বলে। ব্যক্তির এ অবস্থানকে বলে মাদকাসক্তি। মাদকদ্রব্য আসলে কি কি তার নির্দিষ্ট সংখ্যা বা নাম বলা সম্ভব নয়। মানুষ নেশার জন্য যা ব্যবহার করে তাই মাদকদ্রব্য। সেটি হতে পারে ইনজেকশন, ধূমপান বা যে কোনো মাধ্যম। বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে- সিগারেট, বিড়ি, তামাক, তাড়ি, গাঁজা, হিরোইন, কোকেন, ইয়াবা, আফিম, মারিজুয়ানা, ফেনসিডিল, চরস, ভাং, মরফিন, মদ, বিয়ার, কেটামিন ইত্যাদি।
মাদকের সঙ্গে অপরাধ ও অপরাধীর একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত মাদকসেবীরা মাদক সংগ্রহের জন্য অর্থের ওপর নির্ভর করে। আর এই অর্থ জোগাড় করতেই ছিনতাই এমনকি খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না তারা। কিছু গবেষণায় দেখে গেছে, মাদকদ্রব্যের ব্যবহারের ফলে মানুষের মধ্যে অপরাধ করার সাহস বেড়ে যায়। এর ফলে একজন ব্যক্তি যখন মাদক ব্যবহার করেন তখন মাদকের প্রতিক্রিয়ায় তার ভেতর সাহস বেড়ে যায় এবং সে তখন অপরাধ করতে ভয় পায় না। আর এ কারণে আমরা প্রায়ই দেখতে পাই, নেশার টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা, মাকে জবাই করার মতো এমন বেশ কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে। এ উপজেলায়। যে, নেশাখোর মাদক সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ার ক্রোধে নিজ মাকে খুন, কিংবা আদরের সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার মতো সব অমানবিক ঘটনা। খোদ মাদকসেবী ও মা খুনের ঘটনা নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়।
অপরাধ ও সমাজবিজ্ঞানী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন- ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ সব ধরনের মাদকদ্রব্যের কারণে অপরাধ বাড়ছে। তাই অপরাধ হ্রাস করতে হলে অবশ্যই মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। অন্যথায় দিন দিন অপরাধ বাড়তে থাকবে। একজন মানুষ মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়, অবরুদ্ধ হয়ে যায় বিবেক, যার ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তির দ্বারা যে কোনো ধরনের অপরাধ মুহূর্তের মধ্যেই সংঘটিত হয়ে যায় কোনো অনুশোচনা ছাড়াই। স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা, গুলি বা ছুরিকাঘাতে হত্যা করা কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার আধিক্যের পেছনেও মাদকাসক্তির ভূমিকা অন্যতম।
নানা কৌশলে ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলের মহল্লায়সহ অলিগলিতে দেখা যায় ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে আসছে তারা। মাদকের ভয়াবহতা রোধে আজই শপথ গ্রহণ করি। এই মরণব্যাধির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আওয়াজ তুলি- ‘মাদককে না বলি, অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ি’।