নিজস্ব প্রতিবেদক : কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের মুল সতাল গ্রামের ২২ হতদরিদ্র মানুষ মিলে গঠন করেছেন একটি সমিতি। উদ্দেশ্য কারও কাছে হাত না পেতে নয়, নিজেদের অর্থে কোরবানি দেওয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় সাত বছর আগে এই সমিতির যাত্রা শুরু হয়। প্রতিদিন সদস্যদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই টাকা জমিয়ে কোরবানির সময় কেনা হয় গরু।
সমিতির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিদিন টাকা সংগ্রহের কাজটি করে থাকেন। মাহতাবসহ সমিতির তিনজন সদস্য দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এছাড়া, সদস্যদের সবাই দিনমজুর শ্রেণির।
মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘সাত বছর ধইর্যা আমরা এই সমিতি করছি। নিজেরার টেহা জমাইয়া সাত বছর ধইর্যা কোরবানি দিতাছি। প্রতিদিন আমরা ২০ টেহা কইরা সঞ্চয় করি। বছর শেষ অইলে, সেই টেহা দিয়া কোরবানির গরু কিনি। আমরা নিজেরার টেহা দিয়া কোরবানি দেই, পরিবারের বউ পুলাপাইনও অনেক খুশি হয়। কারো কাছে হাত পাততে অয়না, এইডাই আমরার তৃপ্তি। আল্লাহ আমরার সহায়, হেইডাই অনেক কিছু।’
সমিতির অন্যান্য সদস্যরা জানান, এ বছর ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির গরু কিনেছেন তারা। তবে, গরু কিনতে গিয়ে ৬ হাজার টাকার মতো কম পড়েছিল। পরে সমিতির সবাই আরও কিছু টাকা দিয়ে সেটি পরিশোধ করেছেন।
তাছাড়া, প্রতিবছর গরু কিনে টাকা উদ্ধৃত থাকলে সে টাকা কোরবানির মাংসের সঙ্গে সকল সদস্যদের সমানভাবে বণ্টন করা হয়। কোরবানির ঈদের পরের দিন থেকে আবার ২০ টাকা করে জমানো শুরু হয়। সমিতির শুরুতে তারা ১০ টাকা করে জমা করে কোরবানি দিতেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জিনিসপত্রসহ কোরবানির পশুর দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ২০ টাকা করে জমানো শুরু করেন।
স্থানীয়রা জানান, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই এলাকায় এ সংগঠনটি হওয়ার পর হতদরিদ্র মানুষজন ঘুরে দাঁড়াতে শিখে গেছে। তাদের দেখে এমন আরও ২০টির মতো সমিতি তৈরি হয়েছে। তারাও প্রতি কোরবানির ঈদে নিজেদের জমানো টাকায় কোরবানি দেন। মাংসের জন্য কোনো ধনী মানুষের বাড়িতে ভিড় করেন না। নানা প্রতিকূলতা আর তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই এসব হতদরিদ্র মানুষেরা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য বদলেছেন। এখন আর কোরবানিতে কারো মুখের দিকে তাকাতে হয় না। পরিবারের সদস্যরাও ঈদের দিনটি আনন্দে কাটাতে পারেন। সকলের মাঝেই ঈদ আনন্দের কোনও ঘাটতি থাকে না।