আশরাফুজ্জামান বাবু, স্টাফ রিপোর্টার : রক্তের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষার রিপোর্টে একই ব্যাক্তির একই দিনে তিন ক্লিনিকে তিন রকম ফলাফল এসেছে। তিন রকম রিপোর্ট নিয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী রুগী। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি (বাবুপাড়া) গ্রামের সিরাজুল ইসলামের সাথে।

ঘটনা সুত্রে জানা যায়, শারীরিক দুর্বলতার কারনে সিরাজুল ইসলাম ডাক্তারের পরামর্শে গদখালি ফাতেমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্তের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করালে সেখান থেকে ৭ পয়েন্ট আছে মর্মে রিপোর্ট দেওয়া হয় যেখানে একজন পুরুষ মানুষের স্বাভাবিক পয়েন্ট থাকে ১২.৫। রিপোর্ট পেয়ে তিনি রক্ত দেওয়ার জন্য শার্শা উপজেলার নাভারন মুক্তি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানে রক্ত পরীক্ষা করে তাকে ১৩ পয়েন্ট এর রিপোর্ট প্রদান করা হয়। দুই জায়গার রিপোর্টের এরকম আকাশ পাতাল পার্থক্য দেখে তিনি পুনরায় ঝিকরগাছা বাজারের কপোতাক্ষ প্যাথলজিতে একই টেস্ট করালে সেখান থেকে ১১.১ পয়েন্টের রিপোর্ট দেওয়া হয়। তিন ক্লিনিকে তিন রকম রিপোর্ট পেয়ে কি করবেন বুঝতে না পেরে সিরাজুল ইসলাম বাড়িতে চলে যান।

মানুষ অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে বিভিন্ন টেস্ট করতে বলা হয়। সেই টেস্টের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ডাক্তার পরামর্শপত্র লেখেন। এই রিপোর্ট যখন ভুল হয় তখন রুগীর জীবন সংশয় দেখা দেয়। এবিষয়ে জানতে গদখালি ফাতেমা ডায়াগনস্টিকে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় গত অক্টোবরে এই প্যাথলজির অনুমোদন শেষ হয়েছে। রিপোর্টে যিনি স্বাক্ষর করেছেন তিনিই এটি পরিচালনা করেন কিন্তু রিপোর্টে স্বাক্ষর করার যে যোগ্যতা থাকা দরকার সেই ধরনের একাডেমিক কোনো সনদ সাদ্দাম হোসেনের নেই। ৪বছর ধরে তিনি এভাবে রুগীদের সাথে প্রতারণা করছেন। রিপোর্টের ভুল ত্রুটি স্বীকার করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি কাগজপত্র রিনিউ করতে জমা দিয়েছি এখনও হাতে পায়নি।

নাভারন মুক্তি ক্লিনিকের মালিক মইনুল ইসলাম মিন্টু বলেন, আমাদের ল্যাব টেকনিশিয়ান রিপোর্টটা তৈরি করেছে। তিনি নিজেই স্বীকার করেন, একই পরীক্ষায় এতটা তারতম্য হওয়ার কথা নয়। তবে তিনি তাদের রিপোর্ট ঠিক আছে বলে দাবি করেন। উক্ত ক্লিনিকের রিপোর্টে স্বাক্ষরকারী ল্যাব টেকনিশিয়ান মফিজুর রহমান তার পদবীতে কর্মস্থল যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল উল্লেখ করলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায় উক্ত নামে যশোর সদর হাসপাতালে কোনো ল্যাব টেকনিশিয়ান নেই।

ঝিকরগাছা বাজারে অবস্থিত কপোতাক্ষ প্যাথলজির মালিক আব্দুর রশিদ বলেন, গতকাল ঐ রোগীর টেস্ট আমি করেছি। সেখানে রিপোর্ট ১১.১ পাওয়া গেছে। পরীক্ষার ত্রুটি বা কারিগরি কারণে দু-এক পয়েন্ট কমবেশি হতে পারে। তবে একই রিপোর্ট এতটা পার্থক্য হতে পারেনা। তার প্যাথলজিতে করা রিপোর্ট সঠিক বলে তিনি দাবি করেন।

যেখানে রুগীর জীবন মরনের প্রশ্ন সেখানে এধরণের ভুল কতটা যুক্তিসঙ্গত এপ্রসঙ্গে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ রশিদুল আলম বলেন, এধরণের ঘটনা অমার্জনীয় অপরাধ। যে প্যাথলজি থেকে রিপোর্ট গুলো দেওয়া হয়েছে খুব শীঘ্রই আমরা এগুলোর পারমিশন সহ সকল কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে সরজমিন পরিদর্শন করবো। কারো কোনো গাফিলতির প্রমাণ পেলে সেই প্যাথলজি বা ক্লিনিক বন্ধ করে দেবো। সেই সাথে তিনি জনসাধারণের এধরণের পরীক্ষা নীরিক্ষা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করার অনুরোধ জানান।