বিল্লাল হোসেন, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ-ডিলারের প্রতারণায় ভুল জাতের ধানের বীজ বপন করে বিপাকে পড়েছেন ভালুকার উথুরা এলাকার ৫০ এর অধিক কৃষক। বোরো মৌসুমে বপন করা এসব বীজে সময়ের আগেই গজিয়েছে ধানের শীষ। যা অপরিপক্ব হওয়ায় অধিকাংশতেই ধরেছে চিটা এবং অনেক জায়গায় মরেও গেছে। এর ফলে ফলন বিপর্যয়ে দিশেহারা কৃষক। প্রতারকের নাম বিএডিসি ডিলার মোফাজ্জল হোসেন। তিনি উথুরা কলেজে অধ্যাপনা করে আসছেন।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, সাধারণ কৃষকের সরলতার সুযোগে এক জাতের বীজের কথা বলে অন্য জাতের ধানের বীজ ধরিয়ে দেন খুচরা ডিলার। বোরো মৌসুমে বপন করা এসব বীজে অসময়ে ধানের শীষ গজিয়েছে এছাড়াও নির্দিষ্ট জাত বেঁধে ধানের পরিচর্যা করার ফলে অন্য জাতের ধানের বীজ হওয়ায় ক্ষেতেই ধানের চারা মরে গেছে । তারপরও অধিকাংশ ক্ষেতে ধানের চেয়ে চিটাই বেশি হয়েছে। যেখানে প্রতি একর জমিতে ৬৫ থেকে ৮০ মণ ধান আসার কথা, সেখানে ৩০ থেকে ৩৫ মণ ধান পেয়ে হতাশ হয়েছেন এসব কৃষক । এতে বড় ধরনের ক্ষতি বইতে হবে তাদের। সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসবেন অনেকেই। তাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষিনির্ভর প্রান্তিক জনপদের কৃষকরা।

ঘাটাইল উপজেলার এক ভুক্তভোগী কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর এক একর জমিতে বোরো আবাদ করেন বর্গা চাষীর মাধ্যমে । তার জমিতে ডিলারের প্রতারণার কারণে ভুল বীজ বপন হয়েছে। অসময়ে গজিয়েছে ধানের শিষ। অধিকাংশ শিষই অপরিপক্ব এবং চিটাযুক্ত এবং মারাও গেছে বেশির ভাগ জমিতে বপন করা চারা । এতে কাক্ষিত ফলন পাননি তিনি।

উথুরা এলাকার একাধিক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উথুরা বাজরের খুচরা ডিলার প্রফেসর মোফাজ্জল হোসেনের কাছ থেকে আমরা ধান এনেছি। আমরা তার কাছ থেকে ধানের বীজ চেয়েছি একটা তিনি বীজ দিয়েছেন আরেকটা । এতে আমরা নির্দিষ্ট বীজ হিসেবে ক্ষেতের পরিচর্যা করি। কিন্তু জাত ভিন্ন হওয়ায় পরিচর্যার ফলে ক্ষেতে অসময়ে গজিয়েছে ধানের শিষ। অধিকাংশ শিষই অপরিপক্ব চিটাযুক্ত এবং অনেকের ক্ষেতে ধানের চারা মরেও গেছে। আমরা না বুঝে এবং প্রফেসারের কথায় বিশ্বাস করে ধানের বিজ বপন করেছি। এরপর এক মাসের মধ্যেই ধানের শিষ বের হয়। যার অধিকাংশই চিটা। এতে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়।

এ বছর তেল ও সারের দাম বেশি থাকায় জমি আবাদে খরচ দিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে আবার এই ধস। দিশেহারা হয়ে পথে বসার অবস্থা। প্রতারক প্রফেসর মোফাজ্জল হোসেন ডিলারের মহা শাস্তি হওয়া দরকার। যাতে ভবিষ্যতে কোনো নিরীহ কৃষক আর এমন প্রতারণার শিকার না হয়। এমন দাবী কৃষকদের।

তবে প্রফেসর মোফাজ্জল হোসেনের প্রতারণার শিকার হয়েও প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারছেন না সাধারণ কৃষক।

কৃষকরা জানান, ভালুকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পরিচয়ে আবু বক্কর সিদ্দিক বুলবুল কৃষকদের বিভিন্ন হুমকি ধামকি ও নাম মাত্র ( কাঠা প্রতি ৫০০ টাকা) ক্ষতি পূরণ দিচ্ছেন। যা ক্ষতির পরিমাণের ২% হবেনা। এ বিষয়ে জানতে সরেজমিনে মেসার্স জনতা বীজ ভান্ডারে (প্রফেসর বিজ ভান্ডার ) গেলে আওয়ামী লীগের সদস্য পরিচয়দানকারী আবু বক্কর সিদ্দিক বুলবুলকে পাওয়া যায়।

এসময় সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি বলেন, আমাকে চিনেন? আমার কথার বাহিরে ভালুকার কেউ যাবেনা। ভালুকার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক কোন নেতা এমনকি সাংবাদিকরাও আমার কথার বাহিরে যাবেননা । আমি ডেপুটি অ্যাটর্নী জেনারেলের ভাই এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আপনারা কোথায় থেকে আসছেন তা ভালুকার সাংবাদিকদের( দুইজন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে বলেন) জানাব আমি।

জানা গেছে,প্রফেসার মোফাজ্জল হোসেন উথুরা কলেজে অধ্যাপনা করার পাশাপাশি বিএডিসির খুচরা ডিলার। তিনি ময়মনসিংহে বসবাস করেন এবং ময়মনসিংহ বাসায় খোলা ধানের বীজ, বিভিন্ন প্রকার সবজি বা শস্য বীজ খোলা বাজার থেকে কিনে নিজে প্যাকেট জাত করে অধিক মুনাফায় বিক্রি করে থাকেন।

অতীতেও তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে প্রতারিত হয়েছেন কৃষকরা। তিনি তার প্রতারণা চালিয়ে অধিক মুনাফা অর্জনে আওয়ামী লীগ নেতা থেকে শুরু করে দুজন সাংবাদিককে মাসিক মাসোহারা দিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে সার বীজ বিক্রয় করছেন নির্ভিগ্নে। তিনি কেজি প্রতি সার বিক্রিতে ৪-৭ টাকা বেশি বিক্রি করেন। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননা আবু বক্কর সিদ্দিক বুলবুল ও কথিত দুই সাংবাদিকের ভয়ে।

এদিকে কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে ডিলার কাছে জানতে চাইলে প্রফেসার মোফাজ্জল হোসেনের দোকানদার জানান, আমার দেওয়া বীজের পাকের যদি কৃষকের কাছে থাকে বীজের প্যাকেট নিয়ে মামলা করোক আমি সাক্ষী দেব।

ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন জাহান বলেন, প্রফেসার মোফাজ্জল হোসেন বিএডিসি অনুমোদিত ধানের বীজ ও সারের ডিলার। অধিক মুনাফার লোভে ভেজাল বীজ কৃষকদের মাঝে বিক্রয় করে থাকলে এবং পলিথিনের নামে কেজি প্রতি সারে ৪ টাকা বেশি নেওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিব।