জেলার খবর, ঢাকা, ঢাকা বিভাগ | তারিখঃ মে ২৩, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3711 বার
স্টাফ রিপোর্টারঃ রাজধানীর পুরানা পল্টনে ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস কোম্পানির আড়ালে চলছে অবৈধভাবে সৌদি আরবে মানব পাচারের অভিযোগ উঠেছে।
রাজধানীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা পুরানা পল্টনে মোঃ শাহেনশা খান নামে সৌদি আরবে অবৈধ ভাবে মানব পাচারকারীর সন্ধান পাওয়া গেছে। সৌদি আরবে উচ্চ বেতনে চাকরি, বছরে দুইটি বোনাস, থাকা খাওয়া ফ্রীসহ চাকরি দেওয়ার এমন লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে অবৈধ ভাবে চলছে ভয়ঙ্কর মানব পাচারের বানিজ্য।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানব পাচারকারী এই চক্রের জনশক্তি রপ্তানির কোন লাইসেন্স নেই। চক্রটি ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস কোম্পানির নামে শুধুমাত্র যৌথ মূলধনী কোম্পানির নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সৌদি আরবে তিন থেকে পাঁচ বছরের কাজের ভিসা দেওয়ার কথা বলে চালাচ্ছে এই প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড। মানব পাচারকারী এই চক্রের নিয়োগ করা এজেন্টদের মাধ্যমে গ্রামের সহজ সরল বেকার যুবকদের অধিক আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সংগ্রহ করে থাকে। পরবর্তীতে ওইসকল যুবকদেরকে মাত্র তিন মাস (নব্বই দিনের) ভিসা দিয়ে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সৌদি আরবে অবস্থানরত তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে ভিকটিমদের জিম্মি করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে ভালো চাকরি দেওয়ার কথা বলে অধিক অর্থ হাতিয়ে নেয়। ভিকটিমের পরিবারের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার জন্য তাদের হাতে সৌদি আরবের মুদ্রা ধরিয়ে বলতে বাধ্য করে যে, তারা চাকরি করছে ও বেতন পেয়েছে। পাচারকারী চক্র ইহা ভিডিও করে বাংলাদেশে ভিকটিমের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে এমন ভিডিও চিত্র সংগ্রহে রয়েছে। উক্ত ভিডিও চিত্রে প্রতারনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এছাড়াও সৌদি আরবে ভিকটিম কিছু লোকজনের তথ্য আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে যাহারা সেখানে কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। রাজধানীর পুরানা পল্টনে হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন কার্যালয়ের সামনে ২৪ নং পুরানা পল্টন নওয়াব আলী টাওয়ারের অস্টম তলায় অবস্থিত ৭০১/ই, রুমে কুশল ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস কোম্পানির সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত অফিসে বসেই চলছে সৌদি আরবে অবৈধ মানব পাচারের এই বানিজ্য। বিষয়টি খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, উক্ত প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার রাড়ীকান্দি গ্রামের মৃত আলী আজগর খানের পুত্র মোঃ শাহেনশা খান তার স্ত্রী কচি সিকদার ও শাহেনশা খানের স্ত্রীর বড় বোন পলি সিকদার ত্রয় মিলে পরিচালনা করেছেন সৌদি আরবে অবৈধ ভাবে মানব পাচারের এই সিন্ডিকেট। শাহেনশা খানের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোঃ শাহেনশা খান একসময় দীর্ঘদিন সৌদি আরবে প্রবাসী ছিলেন। সেসময়ে তিনি স্বর্ণ চোরাচালান ও লাগেজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে পরিস্থিতি প্রতিকূলতার কারণে তিনি নতুন করে সৌদি আরবে আদম ব্যবসার সাথে জড়িত হয়েছেন। এবিষয়ে সরাসরি কথা বলার জন্য পুরানা পল্টনে কুশল ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস কোম্পানির অফিসে আমাদের একটি প্রতিনিধি টিম যায়। সৌদি আরবে অবৈধ ভাবে মানব পাচারের বিষয়ে আমাদেরকে তথ্য প্রদানকারী উক্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বয়োজ্যেষ্ঠ বোরহান উদ্দিন প্রধানকে সাথে নিয়ে শাহেনশা খানের অফিস কামরায় বসে কথা বলার সময় একপর্যায়ে শাহেনশা খান ও তার স্ত্রী কচি সিকদার এবং কচি সিকদারের বড় বোন পলি সিকদার বোরহান উদ্দিন প্রধানের উপর মারমুখী আচরণ করেন, এবং একপর্যায়ে শাহেনশা খান জনাব বোরহান উদ্দিন প্রধানের গায়ে হাত তোলেন। যাহার ভিডিওচিত্র আমাদের প্রতিনিধি টিমের গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। শাহেনশা খান নিজেকে একসময়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে ছিলেন বলে প্রকাশ করেন, এবং পলি সিকদার একজন যুবলীগ নেতৃ হিসেবে জাহির করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চালান। এছাড়াও তাদের সাথে পুলিশ এসবি ও ডিবির বড় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে বলেও নিজেরাই প্রকাশ করেন। সৌদি আরবে অবৈধ ভাবে মানব পাচারকারী এই চক্র দেশের প্রচলিত আইনকে উপেক্ষা করে জনশক্তি রপ্তানি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিত শুধুমাত্র একটি ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস কোম্পানির আড়ালে কিভাবে এমন অবৈধ বানিজ্য পরিচালনা করছে, জনস্বার্থে তাহা খতিয়ে দেখার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি। সুত্র : দুসস।