ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহ আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট্য জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি।

এ সময় স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারি পরিচালক ডাঃ শামসাদ রাব্বী খান, ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালের তত্তাবাবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলাম ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মিথিলা ইসলামসহ চিকিৎসকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পর অর্থোডেপিক বিশেষজ্ঞ ডাঃ মনিরুল ইসলাম, শিশু চিকিৎসক ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও ডেন্টাল চিকিৎসক মেহেদী মাসুম সরকর নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে রোগী দেখেন। আগামী শনিবার পহেলা মার্চ থেকে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা পুরোদমে শুরু হবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান। হাসপাতালের তত্তাবাবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলাম জানান, খুলনা বিভাগে জেলা পর্যায়ে একমাত্র ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এছাড়া মাগুরার শ্রীপুর, যশোরের মনিরামপুর, ঝিকরগাছা ও কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে আওতাভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসকদের একটি তালিকা করা হয়েছে। সে মোতাবেক রোগীরা সিনিয়র কনসালটেন্ট ৪০০ টাকা, জুনিয়ার কনসালটেন্ট ৩০০ টাকা ও মেডিকেল অফিসারকে ২০০ টাকা দিয়ে ব্যবস্থাপত্র নিতে পারবেন। এছাড়া পরীক্ষা নিরীক্ষারও ব্যবস্থা থাকবে সরকারী হাসপাতালে। এদিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের অর্থো সার্জরি চিকিৎসকের কাছে বৃহস্পতিবার ৫ জন রোগী ৩০০ টাকা পরিশোধ করে চিকিৎসা গ্রহন করেন। এরমধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের লক্ষিপুর গ্রামের আঁখি বেগম (৫০) এসেছিলেন বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে। তিনি চিকিৎসা নিয়ে জানান, সুন্দর পরিবেশে ডাক্তার আমার কথা শুনে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। তিনি বলেন, এমন ব্যবস্থা চালু থাকলে রোগীরা উপকৃত হবেন। হরিণাকুন্ডু উপজেলা থেকে ছকিনা বেগম (৫২) ও সদর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া থেকে রাজেদা খাতুন এসে সরকার নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নেন। সার্জারি চিকিৎসক আব্দুল্লাহিল কাফির চেম্বারে একজন রোগী চিকিৎসা গ্রহন করেন।

জানা গেছে, দেশের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা পহেলা মার্চ থেকে নিজ প্রতিষ্ঠানে রোগী দেখতে পারবেন। অর্থাৎ ডাক্তাররা সরকারি হাসপাতালে ডিউটি শেষে ওই হাসপাতালেই প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুবিধা পাবেন, অর্থাৎ টাকা নিয়ে রোগী দেখতে পারবেন। এজন্য তাদেরকে আর বাইরে ব্যক্তিগত চেম্বার, ক্লিনিক, ফার্মেসি কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে রোগী দেখতে হবে না। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এই কার্যক্রমকে বলা হচ্ছে ইন্সটিটিউশনাল প্র্যাকটিস। হাসপাতালে চিকিৎসকরা সাধারণত রোগী দেখেন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এরপর বেশিরভাগ চিকিৎসক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখে থাকেন। চিকিৎসকরা বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ পাবেন। এতে একজন রোগীর বাইরে ডাক্তার দেখাতে যে খরচ হয়, তার চেয়ে কম খরচে ভালো সেবা পাওয়া যাবে। সরকারী তরফ থেকে বলা হচ্ছে, চিকিৎসকরা বাইরে যতো ফি নেন, নিশ্চয়ই নিজের প্রতিষ্ঠানে প্র্যাকটিস করার সময় খরচ কমাবেন। তাছাড়া সব রোগীর ফি তো সমান হবে না। এতে রোগীরা কম পয়সায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারবেন। যারা ভর্তি আছেন, তারাও চিকিৎসা পাবেন। সরকারি হাসপাতালে একসঙ্গে অনেক ডাক্তার পাওয়া যাবে। এতে সরকারি হাসপাতালে কোন চিকিৎসককে জরুরি প্রয়োজন হলে তাকে পাওয়াটা সহজ হবে। সেইসাথে সরকারি চিকিৎসকরা ধীরে ধীরে বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে নিরুৎসাহিত হবেন বলে সরকার আশা করছে।