নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ মাত্র ২৩৫টি। আর এক হাজারের বেশি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ভাসমান বৈদেশিক মুদ্রার বাণিজ্য করছে। এসব অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের প্রতিটিতে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা।

বুধবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত আইজিপি ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।

সিআইডি প্রধান বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ২৩৫টি লাইসেন্সধারী বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ রয়েছে। এর বাইরে এক হাজারের বেশি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।’

‘এছাড়াও আন্তর্জাতিক সিমান্ত চেকপোস্ট বেনাপোলে নামমাত্র সাইনবোর্ড টাঙিয়ে অনেকে নাম-ঠিকানাবিহীন ভাসমান অবস্থায় হাতে-হাতে, কাঁধে ব্যাগ বহন করে মতিঝিল, গুলশান, উত্তরা এবং বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ব্যবসা করে আসছে।’

সিআইডি প্রধান জানান, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ডলারের দাম বাড়িয়েছে একটি চক্র। এই চক্রটির কারণে ৮৫ টাকার ইউএস ডলার ১২৩ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছে।

এর আগে মঙ্গলবার অবৈধ মানি একচেঞ্জ ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় সিআইডির বিশেষ টিম রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই অভিযান চালায়।

অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন—আবু তালহা ওরফে তাহারত ইসলাম তোহা, আছাদুল শেখ, হাছান মোল্ল্যা, আব্দুল কুদ্দুস, হাসনাত এ চৌধুরী, মো. শামসুল হুদা চৌধুরী ওরফে রিপন, মো. সুমন মিয়া, তপন কুমার দাস, আব্দুল কুদ্দুস, কামরুজ্জামান রাসেল, মো. মনিরুজ্জামান, মো. নেওয়াজ বিশ্বাস, মো. আবুল হাসনাত এবং মো. শাহজাহান সরকার।

এসময় তাদের কাছ থেকে এক কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৬ টাকা দামের ১৯টি দেশের বৈদেশিক মুদ্রাসহ মোট এক কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৬ টাকা জব্দ করা হয়।

সিআইডি প্রধান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে জালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি বিরাজমান। বাংলাদেশও এর অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতে দেশের কিছু অসাধু বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায়ী অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে বৈদেশিক মুদ্রার কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে।’

‘অধিক মুনাফার জন্য মার্কিন ডলার মজুদ করে দাম বাড়াচ্ছে। ৮৫ টাকার মার্কিনডলার ১২৩ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এ কাজে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের বা চেঞ্জারের যেমন ভূমিকা ছিল তেমনি কিছু কিছু বৈধ মানি এক্সচেঞ্জের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।’

ডলারের ঊর্ধগতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় সিআইডি ইতোমধ্যে বেশ কিছু অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে সংস্থাটির প্রধান।

সংবাদ সম্মেলনের জানানো হয়, সিআইডি প্রধানের সার্বিক তত্বাবধানে ও নির্দেশনায় অবৈধভাবে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা এবং এর আড়ালে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার সংক্রান্ত অভিযান চলমান রয়েছে। এরই ধারাবহিকতায় মঙ্গলবার অভিযান চালানো হয়।

সিআইডি প্রধান বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব অফিস এবং ভাসমান যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি (লাইসেন্স) ছাড়াই বৈদেশিক মূদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে।’

‘জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বিদেশী মূদ্রা অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয় করে। তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ অনুযায়ী মামলা করা হয়েছে। সুত্র : ঢাকা টাইমস।