আশরাফুজ্জামান বাবু, স্টাফ রিপোর্টার : দেশব্যাপী বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝিকরগাছা উপজেলায় বোরো ধান চাষের সেচের দাম পুনঃ নির্ধারন করা হয়েছে। কিন্তু সেই মুল্য অনেক বেশি হয়েছে বলে মনে করছে এখানকার কৃষকরা। এতে করে বোরোধান সহ উৎপাদিত সকল পণ্যের খরচ বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন উপজেলার কৃষক সমাজ। ঝিকরগাছার কৃষকদের অভিযোগ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় পণ্যের দাম তারা পাচ্ছে না। সেচ মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষি পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন যশোরের ঝিকরগাছার কৃষক সমাজ।

নাভারণের কলাগাছি মাঠে বিদ্যুৎ চালিত পানির পাম্পের মালিক মৃত সামছুল হকের ছেলে জামাল উদ্দীন (৫৬) জানান তার স্কীমের আওতায় ২৫ বিঘা জমি রয়েছে। তিনি বিঘাপ্রতি ৪ হাজার টাকা নেন বলে জানিয়েছেন। পাম্প মালিক আরও জানান, আমরা স্কীমের মালিক এবং কৃষকেরা বসে পানির দাম নির্ধারণ করি। সরকারের নির্ধারিত মূল্য তালিকা সম্পর্কে আমাদের জানা নেই।

অথচ ওই মেশিনের আওতায় থাকা কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিঘা প্রতি গত বছর ৫ হাজার টাকা দিয়েছি, এ বছর ৬ হাজার টাকা দিতে হবে।

একই গ্রামের ওসমানের স্ত্রী কৃষাণী কাঞ্চন আরা (৩৫) বলেন, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে তাই সেচের পানির দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু এত টাকা দিয়ে ধান করে খরচ উঠবে কিনা সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

পানিসারা ইউনিয়নের কৃষক সায়েদ আলী বলেন, আমাদের ইউনিয়নে ডিজেল চালিত পাম্পের সরকারি রেট বিঘা প্রতি ৬০০০-৭০০০ টাকা ধরা হয়েছে যেটি অবান্তর। এক কথায় কৃষকের গলা চেপে ধরা হয়েছে। এত টাকা সেচের পেছনে খরচ করে কেউ ধান করতে পারবেনা। তিনি এই রেট আবারও সংশোধনের দাবি জানান।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় এ বছর বোরো মৌসুমে পৌরসভাসহ ১১ ইউনিয়নে আশা করা হচ্ছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হবে। এ মৌসুমে পানি সেচের আওতায় প্রায় ২৫০ হেক্টর ভুট্টা এবং প্রায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি সব্জি চাষের আওতায় আনা হয়েছে। গত বছর ধান উৎপাদিত হয়েছিলো ৭৮ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন। এ বছর উৎপাদিত ধানের পরিমাণ হবে প্রায় ৮২ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন।

ঝিকরগাছা পৌরসভা সহ উপজেলায় গভীর নলকূপ রয়েছে প্রায় ৩২৫ টা, অগভীর নলকূপ রয়েছে ৭ হাজার ২২০ টা এবং পাওয়ার পাম্প ৬৫ টা রয়েছে।

পায়রাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষিপণ্য উৎপাদনের খরচ বেড়েছে কিন্তু সেই তুলনায় পণ্যের দাম বাড়ছে না। এ ছাড়াও দিনের বেলা লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সেচ দেয়ার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম তালুকদার মোঃ মেজবাহ উদ্দীন জানান, রাত ১১ টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত কৃষকদের সেচ কাজ সম্পন্ন করতে নির্দেশনা রয়েছে, এসময় কোন লোডশেডিং থাকে না। দিনের বেলায় সামান্য লোডশেডিং থাকলেও অচিরেই লোডশেডিং মুক্ত হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুদ হাসান পলাশ জানান, সরকার নির্ধারিত সেচ মূল্যের বাইরে অতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ করলে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।