সর্দিকাশির সমস্যা কিছুতেই কমছে না? ঘরোয়া টোটকায় এক বার ভরসা করে দেখবেন নাকি?
আর কোন কোন কাজে লাগে সর্ষের তেল?

সরিষার তেল ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এটি স্বাস্থ্যগত সুবিধায় পূর্ণ। তেলটি মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (এমইউএফএ) দিয়ে বোঝাই যা দেহে স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। সরিষার তেল আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা আমাদের কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে রক্ষা করে।

সরিষার তেলের অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি ক্ষতিকারক সংক্রমণ থেকে হজমশক্তিকে রক্ষা করে।

১) সংক্রমণ কমায়
ঠান্ডার মরসুমে বাড়ে খুশকির সমস্যা। খুশকি ছাড়াও মাথার ত্বকে নানা রকম সংক্রমণ হতে পারে। সর্ষের তেল মাথার ত্বকে ব্যাক্টেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণু তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রোধ করে।

২) ত্বকের জন্য ভাল
আবহাওয়ায় আর্দ্রতার অভাব হলে ত্বক অস্বাভাবিক হারে শুষ্ক হতে শুরু করে। ঘনত্ব বেশি হওয়ায় সরাসরি দেহে সর্ষের তেল মাখতে সমস্যা হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে বানানো যে কোনও এক্সফোলিয়েটের মধ্যে মেশাতে পারেন সর্ষের তেল। শুষ্ক ত্বক থেকে ফাটা গোড়ালি, সব সমস্যার মুশকিল আসান সর্ষের তেল।

৩) চুল প্রাকৃতিক উপায়ে কালো করতে
এখন অল্প বয়সেই অনেকের চুলে রুপোলি রেখা দেখা যায়। কম বয়সে চুল পাকার সমস্যায় প্রতি রাতে চুলে সর্ষের তেল লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে দিন। এর পর চুল ধুয়ে ঘুমোতে যান।

৪) রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে
হয়তো প্রতিদিনের ব্যস্ততায় সানস্ক্রিন কিনতে ভুলেই গিয়েছেন। তা বলে কি রোদে এমনিই বেরিয়ে পড়বেন? বরং বেরোনোর আগে অত্যন্ত অল্প পরিমাণে সর্ষের তেল মুখে লাগিয়ে নিন। এটা ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করবে। কাজ করবে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের মতোই। তবে বেশি পরিমাণ তেল লাগালে ত্বকে ধুলোবালি আটকে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

৫) ক্যানসার দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে দেয় না
বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নিয়মিত সর্ষের তেল খেলে শরীরে ক্যানসার আক্রান্ত কোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে না। প্রাথমিক ভাবে কয়েকশো ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সর্ষের তেল মলাশয়ের ক্যানসার রুখে দিতেও সক্ষম।

সরিষার তেলে থাকা ওমেগা ৩, ওমেগা ৫ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর মান সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

সরিষার তেলের ৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

ইমিউনিটি বুস্টার হিসাবে কাজ করে
সরিষার তেলের ঝাঁঝালো উপাদান শ্লেষ্মা এবং অবরুদ্ধ সাইনাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। রসুন ও লবঙ্গ দিয়ে সরিষার তেল গরম করে পা এবং বুকে মালিশ করলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

লোহিত রক্তকণিকা শক্তিশালী করে
প্লাজমা, কোষের লিপিডস এবং কোষের ঝিল্লির উপাদান হিসাবে বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনের জন্য আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চর্বিগুলোর একটি প্রধান উৎস সরিষার তেল। এই তেল কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে এবং লোহিত রক্তকণিকার ঝিল্লি গঠনের উন্নতি করে।

কার্ডিওপ্রোটেক্টিভ প্রভাব
গবেষণায় দেখা গেছে যে, সরিষার তেল খেলে অ্যারিথমিয়াস, হার্ট ফেইলিও এবং এনজাইনা হ্রাস পেয়েছে। কার্ডিওভাসকুলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্তদের জন্য সরিষার তেল স্বাস্থ্যকর হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি ট্রাইগ্লিসারাইড, রক্তচাপ এবং প্রদাহ কমাতেও সহায়তা করে।

কাশি এবং সর্দি হ্রাস করতে সহায়তা করে
প্রাচীনকাল থেকেই সরিষার তেল কাশি, সর্দি এবং অন্যান্য শ্বাস প্রশ্বাসের অ্যালার্জি প্রশমিত করতে ব্যবহৃত হয়। সরিষার তেল দিয়ে স্টিম নিলে তা শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। সরিষার তেল সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

জয়েন্টে ব্যথা এবং বাত থেকে মুক্তি দেয়
সরিষার তেল নিয়মিত মালিশ করলে তা পেশী এবং জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। সরিষার তেলে থাকা ওমেগা ৩ আর্থ্রাইটিসের কারণে সৃষ্ট কঠোরতা এবং ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

সরিষার তেলের অপকারিতা
এই তেল অতিরিক্ত খাওয়ার কারণেও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা নিম্নরূপ:

সরিষার তেলে ইরুসিক নামক অ্যাসিড থাকে, যা হার্টের ক্ষতি করতে পারে। একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ইরুসিক অ্যাসিড হৃৎপিণ্ডের পেশীতে লিপিডোসিস (ট্রাইগ্লিসারাইড জমা) ঘটাতে পারে এবং হার্টের টিস্যুর ক্ষতি করতে পারে।

কিছু লোকের ত্বকে সরিষার তেল ব্যবহারে অ্যালার্জি হতে পারে।

সরিষার তেলের এত উপকারিতা পড়ে অবাক হবেন না, এটি সম্পূর্ণ সত্য, যা অনেক বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দ্বারাও প্রমাণিত। তবুও, মনে রাখবেন যে সরিষার তেল শুধুমাত্র এই সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক। এটা কোনো সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান নয়। কেউ কোনো রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দিন। এছাড়াও, শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে এই তেল ব্যবহার করুন। আমরা আশা করি যে আমাদের দ্বারা প্রদত্ত তথ্য পাঠকের জন্য দরকারী প্রমাণিত হবে।