ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহ জেলা জুড়ে আবারো শুরু হয়েছে অবৈধ মাটিকাঁটার রমরমা ব্যাবসা। মূ়লত শীত মৌসুম শুরু হলেই শুরু হয়ে যায় মাটি বিক্রয় এই ব্যাবসা। বিভিন্ন অজুহাতে আর কৌশলে চলে এই মাটির ব্যাবসা। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না এই মাটি ব্যবসায়ীদের। ঝিনাইদহ জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাটি কাঁটার বহু অবৈধ সিন্ডিকেট। এর আগে প্রশাসনের অনুমতি বিহীন ফসলি জমিতে জমির মালিকদেরকে ভুল বুঝিয়ে নানা কৌশলে জমিতে ভালো ফসল না হওয়ার কথা বলে পুকুর খনন করে চালিয়েছে মাটির ব্যাবসা। তখন মাটিখেকোরা জমির মালিকদের বুঝিয়েছে যে জমিতে ধান চাষের বদলে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করলেই বেশি লাভ করা যায়। আর এই লোভে কিছু জমির মালিকেরা অতিউৎসাহী হয়ে যত্রতত্র ভাবে পুকুর খনন করে ফেলে।তবে ঝিনাইদহ জেলা জুড়ে অধিকাংশ পুকুর সঠিক পরিকল্পনা বিহীন খনন করা হয়। সেই সাথে ফসলি জমির মাটের মাঝখানে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় পানির অভাবে মাছ চাষ করা এখন আর সম্ভব হয়ে উঠছে না। আর এ কারণেই পুকুর গুলো পলি পড়ে ভরাট হতে চলেছে। আর ফসলি জমির ভিতরে পরিকল্পনা বিহীন পুকুর খননের ফলে ফসলের মাঠের চারিদিকে বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেজন্য কৃষকের ফসল উৎপাদনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় স্থানীয় মাঠ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। ফসলি জমি রক্ষার্থে স্থানীয় ভূমি অফিস, এসিল্যান্ড অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সমন্বয়ে অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধে জেল জরিমানা শুরু করে। প্রশাসনের এরকম শক্ত ভূমিকা দেখে মাটিখেকরা তাদের নতুন কৌশল অবলম্বন করে। বর্তমানে মাটি ব্যবসায়ীদের নতুন কৌশল হলো। কৃষকের উঁচু জমি সমান করার কথা বলে ধানী জমি তৈরি করে দেবে বলে অনেক জমির মালিকের টাকার লোভ দেখিয়ে শুরু করেছে এই মাটির ব্যাবসা। অনুসন্ধানে জানাযায় কৃষকের জমি সমান করার কথা বলে মাটিকাটা আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ কৃষি ইনস্টিটিউট এর গবেষণায় দেখা যায় কৃষি জমির মাটির উপরিভাগের অংশ ফসলের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী যাকে বলে (টপ সয়েল)। এছাড়া জমির উপরের অংশে পলি জমে থাকার কারণে মাটির উর্বরতা বেশি বৃদ্ধি পায়। জমির উপর অংশ থেকে মাটি কাটলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মাটির ব্যাবসার কারণে গ্রামগঞ্জের রাস্তায় রাতে কিংবা দিনে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে বড়, বড় ড্রাম ট্রাক, লড়িট্রাক্টর। আর এসব অনুমোদনহীন গাড়ি চলাচলের কারণে রাস্তায় ঘটছে নানা রকম দুর্ঘটনা পাকা রাস্তাঘাট ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে শিশুরা ভয়ে আতংকে থাকছে। গোপন অনুসন্ধানে জানাযায়, মাটি কাঁটার ব্যাবসা ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় কারণে এই ব্যাবসার নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তি থেকে শুরু করে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার এবং অনেক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। এছাড়া ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মাটি কাঁটার ব্যাবসা চালিয়ে আসছে বছরের পর বছর এই মাটিখেকোরা। কিন্তু বর্তমান সরকারি ভূমি আইনে অনুমতিবিহীন জমির মাটিকাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। ভূমি আইনে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে অবৈধভাবে মাটি বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে।

সরোজমিনে প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে দেখা যায়, ঝিনাইদহ জেলার সকল ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামেই চলছে নানা কৌশলে মাটি কাঁটার অবৈধ ব্যবসা। তবে ঝিনাইদহের সদর থানার, সাগান্না, মধুহাটি সাধুহাটি ইউনিয়ন মাটি কাটার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়া ঘোড়শাল, নলডাঙ্গা, ফুরসন্ধি,কালিচরণপুর ইউনিয়নে একই চিত্ত। ওই সব এলাকার সকল ফসলের মাঠেই এখন মাটি ব্যবসায়ীদের অবাধ বিচরণ। এসব এলাকায় প্রশাসনের এখনই শক্ত হস্তক্ষেপ না করলে ভবিষ্যতে কৃষি জমির ব্যাপক সংকটে পড়তে হবে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলায় দৌড়া এবং কুশনা ইউনিয়নে তিন ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন ও মাটি ব্যাবসা চলছে ভরপুর ভাবে। এছাড়া মহেশপুরের উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন আর মাটির ব্যবসা। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল, রাখালগাছি, ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে থেমে নেই মাটির ব্যাবসা। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি নষ্ট করে চলছে মাটি কাটার মহাউৎসব। ধানী জমি নষ্ট করে পিছিয়ে নেই শৈলকূপা উপজেলার মাটি ব্যাবসায়ীরা সেখানে একই চিত্র কৃষি জমি ধ্বংস করে চলছে মাটিকাটার ব্যাবসা।আর অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীদের এসব মাটি চড়া দামে কিনে নেন ইট ভাঁটা মালিকেরা। এবিষয়ে জেলার স্থানীয়রা মাননীয় জেলা প্রশাসকের নিকট দাবি জানান, তিনি অতিদ্রুত শক্ত আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে মাটি সিন্ডিকেট এর হাত থেকে ফসলি জমি রক্ষা করে মাটি কাঁটা বন্ধ করবেন।