সনতচক্রবর্ত্তী: বোয়ালমারীতে রোপা আমন ধান কাটা-মাড়াই উৎসবে মেতেছেন চাষিরা। বোয়ালমারী উপজেলায় পুরোদমে চলছে ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ। আবার অনেক জায়গাতেই বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে এখনও দোল খেতে দেখা যাচ্ছে সোনালী ধানে। ধান কাটা-মাড়াইয়ে কৃষকের পাশাপাশি দিনমজুরদের মাঝেও বেড়েছে চরম ব্যস্ততা।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারে উপজেলায় ৬১ হাজার ৬৯৮মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতে পারে। আর ধানের উৎপাদন ও মূল্য ভালো পাওয়ায় কৃষকরাও বেশ খুশি।

সরজমিনে বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও ধান কাটা মাড়াই চলছে। কেউ কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আবার কিছু মাঠে কেবল ধানের হলুদ বর্ণ ধরেছে। কৃষকরা বলছেন, স্থান ভেদে বিভিন্ন সময়ে চারা রোপণের কারণে এ অবস্থা। আর কৃষি বিভাগের মতে, সাধারণত বছরের জুন মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত রোপা আম ধান চাষাবাদের মৌসুম ধরা হয়। এ সময়ে আগে-পিছে যারা যে সময়ে চারা রোপণ করবেন, সেই অনুযায়ী ধান পরিপক্ক হবে।

বোয়ালমারী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় রোপা আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৩৪৪২ হেক্টর জমিতে এবং চাষাবাদ হয়েছে ১৪৪৫৮ হেক্টর । আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬১৬৯৮ মেট্রিক টন। ৭০% জমির ফসল ইতোমধ্যে কৃষকের গোলায় উঠে গেছে। ফলন ভালো না হলেও ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রিতম কুমার হোড় বলেন, বাকি ধান কৃষকরা সুষ্ঠু মত ঘরে তুলতে পারলে সম্ভাব্য উৎপাদন হবে ৬৫৯২৮ টন।

গত মৌসুমে (২০২১-২২) চাষাবাদের লক্ষামাত্রা ছিল ১১৬৩৫ হেক্টর, অর্জিত হয় ১৩৪৪২ হেক্টর।

কৃষকরা জানান, এবার বন্যার পানি ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফসল চাষাবাদে কিছুটা বিপত্তি ঘটেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন কিছুটা কম হয়েছে। আর ধান কাটা মাড়াইয়ে খরচ বেশি পড়ছে। বাজারে ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা বা বন্যার পানি সময়মত পেলে ফসল চাষাবাদ আরও লাভজনক হতো। আমন ধান ঘরে তোলার পর এসব জমিতে আলু, শীতকালীন বিভিন্ন সবজিসহ বোরো ধান করবেন তারা।

বোয়ালমারী উপজেলার বান্দুগ্রাম গ্রামের কৃষক রিপন আলী জানান, তিনি এবার ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষাবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় তার ফলন হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ মন। ধানের বাজারও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তবে শ্রমিক সংকট ও পারিশ্রমিক বেশি পড়ছে।

বড়গা গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী জানান, তিন বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন তিনি। কিন্তু বর্ষাকালীন আবাদ হলেও সেচ সুবিধায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। কৃষি শ্রমিকের সংকট থাকায় এবং তাদের মজুরি বেশি হওয়ায় তিনি নিজেই গত ৪ দিন ধরে ধান কাটছেন।

এছাড়া ময়না ও বান্দুগ্রাম ঘুরে অনেক কৃষকই এমন করছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় কৃষি শ্রমিক আলিম, হাচান ও হোসেন জানান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বেকায়দায় পড়েছেন। তাই এবার দুই বেলা খেয়ে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫৫০ টাকা দরে পারিশ্রমিক নিচ্ছেন।
ধান মাড়াই শ্রমিকরা জানান, প্রতি বিঘা জমির ধান মেশিনে মাড়াই করতে স্থান ভেদে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

বোয়ালমারী উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় জানান, প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকরা ১৪ থেকে ১৫ মণ করে ফলন পাচ্ছেন। চাষাবাদের অনুকুল পরিবেশ থাকায় কৃষকরা ফসলে লাভবান হচ্ছেন। বাজারে ধানের দামও সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার উপজেলায় আমন ও বোরো দুই মৌসুমেই উপশী,বিরি ৮৭ বিরি৭৫,বিনা ধান ৭, এবং বিনা ধান১৭ জাতের ধানের যেমন খাদ্য চাহিদা রয়েছে, তেমনি বাজার মূল্য অন্যান্য ধানের তুলনায় বেশি পাওয়া যায়। বর্তমানে এই ধান উচ্চ ফলনশীল এবং বাজারে চাহিদা রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।