নুরতাজ আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ এখনও এক বছরের বেশি সময় বাকী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। তবে বেশ কিছুদিন আগে থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৎপরতা শুরু করেছেন। তাদের পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে শিবগঞ্জের রাজনীতি।

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে শিবগঞ্জ। নৌকার টিকিট পেতে ৫ নেতা এখন ব্যস্ত জনসংযোগে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি নানান প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। অনেকে শুভেচ্ছাসম্বলিত পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন। মোটরসাইকেল শোডাউন করছেন। চলছে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারণাও।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়প্রত্যাশীরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দীন আহম্মেদ শিমুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. জিল্লার রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী ও শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক। মনোনয়প্রত্যাশী এসব নেতা তৃণমূল মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দীন আহম্মেদ শিমুল ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও। গত নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামীলীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দীন আহম্মেদ শিমুল বলেন, আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তৃণমূল পর্যায়ের সব নেতাকর্মীদের নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছি। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এ কারণে মহামারী করোনা নিয়ন্ত্রণে মডেল জেলা হিসেবে পরিচিতি পায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সে সময় বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগী সরবরাহ ও নানা প্রয়োজনে এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। নিশ্চয় দল আমার কাজের মূল্যায়ন করবে। তাই আমার প্রত্যাশা আমি আওয়ামী লীগ থেকে আবারও মনোনয়ন পাব।

মনোনয়ন দৌড়ে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বেশকিছু দিন আগে থেকে তিনি উঠান বৈঠক করে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ‘সৈয়দ পরিবার’ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের কৌশল ও প্রত্যাশারই জয় হচ্ছে। দলীয় পদ আর মনোনয়ন, সব ক্ষেত্রেই তাদের সিদ্ধান্তই যেন শেষ কথা। সৈয়দ পরিবারের আরেক সন্তান সৈয়দ মনিরুল ইসলাম শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে সৈয়দ নজরুল ইসলামও আশাবাদী।

তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি সব দুর্যোগে জনগণের পাশে ছিলাম। এছাড়া স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগে আমাদের পারিবারে বিশেষ অবদান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উন্নয়নের লক্ষ্য ও জনপ্রত্যাশা পূরণে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। নিশ্চয়ই দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। দলের গ্রীণ সিগন্যাল পেলেই উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করবো। মনোনয়ন পেতে নির্বাচনের মাঠে কাজ করছেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব মো. জিল্লার রহমান। প্রায় দুই বছর আগে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তার শুভাকাক্সক্ষীদের নিয়ে তিনি নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিশ্বজয়ী নেতৃত্ব ও বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরছেন।

জিল্লার রহমান বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন তৃণমূলকর্মী হিসেবে গেল দুই বছরে চার শতাধিক উঠান বৈঠক করেছি। সেখানে ২ লাখেরও বেশি মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কথা বলেছি। তুলে ধরছি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র। আমি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করেছি। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, একটি ঐতিহ্যবাহী দল, দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে এই দলটি। এখন তাদের লক্ষ্য দেশের উন্নয়ন। নিশ্চয়ই তারা আমার কাজের মূল্যায়ন করবেন। তাই আমার প্রত্যাশা আমি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবো।

২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে গত চার বছর রাজনীতির মাঠে দেখা মেলেনি সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানীর। দীর্ঘ সময় পর হঠাৎ গণসংযোগ শুরু করেছেন সাবেক এ সংসদ সদস্য। তিনি মনোনয়ন পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন।

এছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন পেতে গণসংযোগ করছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার এনামুল হকের ছোট ভাই মো. নাজমুল হক। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।