আইন ও আদালত | তারিখঃ নভেম্বর ২২, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3163 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট। সমিতির সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেছেন, ‘শুধু আইনজীবী সমাজেরই না, আপনি খুলনার কলঙ্ক।’
তলব আদেশে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার পর মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে খুলনার তিন আইনজীবীর পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
শুনানির শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি খুলনা বার সভাপতিসহ তিন আইনজীবীর পক্ষে হাইকোর্টের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তখন আদালত সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতিকে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কোনও সভ্য লোক কি বিচারকের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করতে পারে? তিনি কি বার সভাপতি হয়ে আদালতে দাপট দেখাচ্ছেন? আপনারা কেন এসব মানুষের পক্ষ নিয়ে আদালতে আসেন? আপনারা তাদের পক্ষে শুনানি করতে আসলে আমরা বিব্রত হই। বার কাউন্সিল চরের লোকদের সনদ দিয়ে আইনজীবী বানাচ্ছে। মানুষ কতটা নিচু হলে এ ধরনের বিচারকের সঙ্গে এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করতে পারে?’
এসময় খুলনা বার সভাপতিকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘শুধু আইনজীবী সমাজেরই না, আপনি খুলনার কলঙ্ক। আপনি কি নিজেকে খুলনার মহানায়ক মনে করেন?’ জবাবে খুলনা বার সভাপতি বলেন, ‘আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাইছি। আমাকে মাফ করে দিন।’
এ পর্যায়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘আমরা লজ্জিত, তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি।’ তিনি বলেন, ‘এটা সত্যি, অভিযোগ পড়তেও লজ্জা লাগে। রেপ ভিকটিমের জবানবন্দির মতো মনে হয়।’
পরে আদালত বলেন, ‘আইনজীবীরা যদি আদালতের সঙ্গে এ রকম আচরণ করেন তাহলে আদালত, বার কিছুই থাকবে না। তারা ফৌজদারী অপরাধ করেছে।’
এসময় তিন আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা, অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি, অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু আদালতকে বলেন, ‘এবারের মতো ক্ষমা করে দিন। আর কখনও এমন হবে না।’
তখন আদালত বলেন, ‘যারা আদালত অবমাননা করে, বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আপনারা তাদের পক্ষে নিয়ে আসবেন না। তাদের আশ্রয় দেবেন না। আপনারা তাদের পক্ষে দাঁড়ালে ভুল মেসেজ যায়।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা বলেন, ‘এবারের মতো ক্ষমা করে দেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আর কখনও এমন ভুল হবে না।’
তখন আদালত বলেন, ‘আপনারা ভুল করেননি। অপরাধ করেছেন।’
এসময় আদালত খুলনার আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ আশরাফ আলী পাপ্পুকে ডায়াসের সামনে ডাকেন। তাকে আদালত বলেন, ‘আপনি এর আগে কি করতেন?’ তখন তিনি বলেন, ‘ব্যবসা করতাম।’ আদালত বলেন, ‘আপনার আচরণ আইনজীবীর মতো না। বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণের ক্ষেত্রেও আপনি মেইন রোল প্লে করেছেন। আপনাদের মতো ব্যবসায়ীরা এসে আইন পেশাকে নষ্ট করে দিচ্ছেন।’ পরে খুলনার আরেক আইনজীবী শেখ নাজমুল হোসেনকেও ভর্ৎসনা করেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ১ নভেম্বর খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন আদালত। একইসঙ্গে বার সভাপতি সহ আইনজীবী শেখ নাজমুল হোসেন ও অ্যাডভোকেট শেখ আশরাফ আলী পাপ্পুকে হাজির হতে দিন নির্ধারণ করে দেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গত ২২ সেপ্টেম্বর খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবী বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া হয়।
এরপর গত ২৫ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি এই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে বেঞ্চে শুনানির জন্য প্রেরণ করেন।