জেলার খবর, ঢাকা বিভাগ, ফরিদপুর | তারিখঃ নভেম্বর ২২, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3027 বার
সনতচক্রবর্ত্তী:বর্তমান সময়ে প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্প।
আধুনিক জিনিসপত্রের ভিড়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা এবং মাটির দাম বৃদ্ধিসহ নানা সংকট এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে বলে জানান কুমারেরা।
ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন পালপাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক হাজার পরিবার যুগ যুগ ধরে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। যাদের কর্মের মাধ্যমে এই শিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ করা হতো। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আগের মতো এ শিল্পের কদর না থাকায় অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িত পড়ছে।কিন্তু এ পেশায় জড়িত রয়েছে হাতেগোনা মাত্র ।এ পরিবারগুলোর মানুষ সারা বছর মাটির হাঁড়ি-পাতিল, ঢাকনা, কলসি, ফুলের টবসহ নানা উপকরণ তৈরি করে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে, কিন্তু কালের আবর্তে আজ তা বিলীন হতে চলেছে। হয়তো বা এমন দিন আসবে, যেদিন বাস্তবে এ পেশার অস্তিত্ব থাকবে না।
বোয়ালমারী উপজেলার ঠাকুরপুর পালপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, এ পেশার অনেকেই এখন পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ জীবিকা নির্বাহ জন্য বিভিন্ন পেশাকে বেছে নিয়েছে। যারা পেশা ছাড়তে পারেননি, তাদের অনেকেই আজ অবহেলিত, কেউ শিক্ষা-চিকিৎসাসহ জীবনযাত্রার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মৃৎশিল্পী সুশান্ত পাল আমাদের সময় ডটকমকের জানান, মাটির তৈজসপত্র বেচাকিনা বন্ধ হয়ে গেছে। দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র বের হওয়ায় মাটির তৈজসপত্র আর চলে না। মাটির তৈজসপত্র আগে ভালোই চলতো। সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজ করতাম। সারাদিন কাজ করতাম, হাট-বাজারে যেতাম দুই-চার হাজার টাকা বিকিকিনি করতাম। এখন আর আগের মতো বেচা কিনা নেই। দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র হয়ে মাটির তৈজসপত্র প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।দধির পাতিল আর টয়লেটের পাট এখন একটু চলে। দধির পাতিল ও টয়লেটের পাট যদি বন্ধ হয় আমরা কেমনে চলবো। আমাদের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে।তাই বাধ্য হয়ে ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে।
কবি,সম্পাদক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জাহিদ হোসেন জানান, মাটির জিনিসের চাহিদা কমতে থাকায় এবং দূরের এলাকা থেকে বেশি দামে মাটি কিনতে হয় বলে মৃৎশিল্পীরা দিন দিন এ ঐতিহ্য থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু সংখ্যক পরিবার বংশ পরম্পরার কারণে এ শিল্প ধরে রেখেছে। এ শিল্পের জন্য সরকারিভাবে যদি কোনো সহযোগিতা করা হয় তবে বাঙালির ঐতিহ্যময় এ শিল্প ধরে রাখতে পারবে মৃৎশিল্পীরা।