নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের বিখ্যাত প্যারা ও নলেন গুড়ের সন্দেশ, দেশ পেরিয়ে যাচ্ছে এখন বিদেশেও। ঐতিহ্য ধরে রেখেছে নড়াইলের কার্তিক কুন্ডু মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্যারা সন্দেশ ও নলেন গুড়ের সন্দেশ। অতুলনীয় স্বাদ ও গুণগত মানের কারণে এই মিষ্টি ধরে রেখেছে তার ঐতিহ্য। দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময়কালে একটওু ভাটা পড়েনি চাহিদায়। এখন এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এই মিষ্টি যাচ্ছে বিদেশেও।

জানা গেছে, নড়াইল সদরের কার্তিক কুন্ডু মিষ্টান্ন ভান্ডার ও পরিতোষ মিষ্টান্ন ভান্ডার এবং লোহাগড়া বাজারের সুরেন্দ্র সুইটসসহ কয়েকটি দোকানে বিক্রি হয় এসব মিষ্টি। দুধের ক্ষীর দিয়ে তৈরী করা হয় প্যারা সন্দেশ। আর খেজুর গাছের নলেন রস থেকে তৈরি নলেন গুড় দিয়ে তৈরিকৃত মিষ্টিকে বলা হয় নলেন গুড়ের সন্দেশ।

স্থানীয় বিয়ে, সুন্নাতে খাৎনা, নববর্ষসহ বিভিন্ন উৎসবে এই মিষ্টির দেখা মিলবেই। তাছাড়াও জেলার বাইরে থেকে আসা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়রা এলেও একবার এ মিষ্টির স্বাদ যেন নিতেই হয়। আত্মীয়দের মারফাত এই সন্দেশ দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যায়। তাইতো সন্দেশের এই দোকানগুলোতে ভিড় লেগেই থাকে। তবে দুধের দাম বৃদ্ধি এবং খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় চিন্তিত সন্দেশ প্রস্ততকারী দোকানিরা।

কার্তিক কন্ডু মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক প্রফুল্ল কুন্ডুর ছেলে জানান, সুনামের সাথে এই মিষ্টির দোকান চালাতেন তার ঠাকুরদাদা কার্তিক কুন্ডু। তারপর থেকে তার বাবা প্রফুল্ল কুন্ডু এবং তিনি এ ব্যবসা ধরে রেখেছেন। মূলত ভালো মানের কারণেই তাদের মিষ্টির চাহিদা প্রচুর। তাদের দোকানে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরি করা হয়। সব মিষ্টিরই চাহিদা রয়েছে। তবে নলেন গুড়ের সন্দেশ এবং প্যারা সন্দেশের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দেশের বাইরেও পাঠানো হয় এই সন্দেশ।

সন্দেশ কিনতে আসা মো. রাজু শেখ জানান, ছোট বেলা থেকেই কার্তিক কুন্ডুর দোকানের প্যারা সন্দেশ ও নলেন গুড়ের সন্দেশ খাচ্ছেন তিনি। বিদেশে বসবাস করা তাদের অনেক আত্মীয় স্বজনের কাছেও এ মিষ্টি পাঠান। গুণগত মান ভালো হওয়ায় এ মিষ্টি খেয়ে তৃপ্তি পান তারা। ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের বলেন, প্যারা সন্দেশ তার অত্যান্ত পছন্দের। সুযোগ পেলেই বন্ধু-বান্ধব নিয়ে প্যারা সন্দেশ খেতে আসেন তিনি। তাছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও এ মিষ্টির কদর সবচেয়ে বেশি।

অয়ন বিশ্বাস নামে আরো এক ক্রেতা বলেন, বাবার চাকুরির সুবাদে নড়াইলে থাকেন তিনি। নড়াইলে আসার পর থেকে নিয়মিত এখানকার নলেন গুড়ের সন্দেশ খাচ্ছেন। কখনো এর স্বাদের কোন পরিবর্তন পাননি। পূজা, বিয়েতে এ মিষ্টির ব্যবহার তো আছেই, আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতেও মাঝে মাঝে পাঠান তিনি। এছাড়াও জেলার বাইরে থেকে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়রা এলে তাদেরও প্রথম চাহিদা থাকে নড়াইলের সন্দেশে।
এদিকে,লোহাগড়া বাজাদেএ সুরেন্দ্র সুইটসের বর্তমান মালিক নলেন গুড়ের সন্দেশের কারিগর কানাইলাল কুন্ডুর সঙ্গে তিনি কে জানান, ১৯৭১ সাল থেকে আমার বাবা সুরেন্দ্র নাথ কণ্ডু নলেন গুড়ের সন্দেশ তৈরি করে বিক্রি করতেন। বাজারে প্রচুর চাহিদা ও সুনাম থাকায় বাবার মৃত্যুর পর ছেলে কানাইলাল কুন্ডু হাল ধরেন এর। নলেন গুড়ের সন্দেশ তৈরি ও বিক্রি তাঁদের পৈতৃক ঐতিহ্য হিসেবেই এখনো রয়েছে।

কানাইলাল কণ্ডু আরো বলেন, ভোক্তাদের হাতে ভালোমানের মিষ্টি বা খাঁটি নলেন গুড়ের সন্দেশ তুলে দিতে পারলে নিজেরাও খুব তৃপ্ত হই। সৌদি আরব, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এই সন্দেশ লোক মারফত যাচ্ছে তবে,ভারতেই বেশি চাহিদা এই মিষ্টির।লোহাগড়া উপজেলার কাউড়িখোলা গ্রামের প্রভাষক প্রসাদ কুমার গাইন বলেন,অন্য জেলা থেকে লোহাগড়ায় কেউ বেড়াতে আসলে তাঁকে অন্তত নলেন গুড়ের সন্দেশ না খেয়ে যেতে দেই না।