ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশনা উপেক্ষা করে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত শৈলকুপার সহকারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অসীম কুমার গাঙ্গুলীকে পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনা নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে প্রাথমিক ভাবে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত অসীম কুমার গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করে তথ্য গোপনের মাধ্যমে কিভাবে তাকে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়া হলো ? এই পদোন্নতিতে কত টাকার লেনদেন হয়েছে ? পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের পরিচালক হাবিবুল হক খান কেন জেলা কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকায় না পাঠিয়ে ধামা চাপা দিলেন ? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। এদিকে স্থানীয় প্রভাব বিস্তার, আর অবৈধ টাকার জোরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অসিম কুমার গাঙ্গুলী। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, অসদাচারণ, দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কর্মকর্তাদের অপমান ও তাদের সাথে অসাদাচারণ ও মারমুখি আচরণের অভিযোগে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের জেলা পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা।

অভিযোগে বলা হয়, গত ২০ অক্টোবর ঝিনাইদহ পরিবার পরিকল্পনা সহকারী পরিচালক মোজাম্মেল হকের অফিসে কক্ষে আসেন সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অসিম কুমার গাঙ্গুলী। এ সময় সহকারী পরিচালক মাঠ পর্যায়ে কাজের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ডিস্ট্রিক্ট কনসালটেন্ট ডাঃ শহিদুর রহমানের সামনেই সহকারী পরিচালক মোজাম্মেল হককে মেরুদন্ডহীন অফিসারসহ নানা অপমানজনক কথা বলে অসাদাচরন করেন। এমনকি ডিস্ট্রিক্ট কনসালটেন্ট গাঙ্গুলীকে থামানোর চেষ্টা করলে তার উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, আপনাকেও দেখে নেওয়া হবে। অসীম কুমার গাঙ্গুলী আঙ্গুল উচিয়ে ডাঃ শহিদুর রহমানকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আমি স্থানীয়। এই শহরে আমার অনেক লোক আছে। ফোন দিলে এখনই শত শত লোক আসবে। তাদের দিয়ে আপনাদের শায়েস্তা করতে পারি।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ঢাকায় ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর হটলাইনে শৈলকুপার সহকারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অসীম কুমার গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়। সে মোতাবেক দুদকের ঢাকা অফিসের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান তার দপ্তরের ১৭৯২ নং স্মারকে দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। খুলনা বিভাগের পরিচালক হাবিবুল হক খান ৩৭৭ নং স্মারকে ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপ-পরিচালক ডাঃ জাহিদ আহমেদকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন।

চিঠি পেয়ে সরজমিন তদন্ত করে শৈলকুপার সহকারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অসীম কুমার গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে ষ্টিলের ট্রাঙ্ক সরবরাহ কাজে দুর্নীতির তথ্য পান। অসীম কুমার সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে ঝিনাইদহ শহরের এইচএসএস সড়কের মেসার্স খোন্দকার ফার্নিচারকে দেখান এবং সেখান থেকে ষ্টিলের ট্রাঙ্ক কিনে মাঠকর্মীদের সরবরাহ করেন। কিন্তু মেসার্স খোন্দকার ফার্নিচার শুধু কাঠের ফার্নিচার তৈরী ও বিক্রি করে থাকেন। সেখানে কোন ষ্টিলের ট্রাঙ্ক তৈরী হয় না। টেন্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে এই কেনাকাটার ফলে লক্ষাধীক টাকা পকেটস্থ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এদিকে ষ্টিলের ট্রাঙ্ক কেনার ক্ষেত্রে সরকারী পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি মর্মে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। দুদকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ডাঃ জাহিদ ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারী বিষয়টি তদন্ত ও অবহিতকরণ পত্র (যার স্মারক নং ৬২) পাঠান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা, পরিচালক প্রশাসন ও খুলনা বিভাগের পরিচালকের দপ্তরে। চিঠিতে তদন্ত কর্মকর্তা আরো উল্লেখ করেন অসীম কুমার গাঙ্গুলী দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা বিধায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের এখতিয়ার তার নেই। ফলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে চুয়াডাঙ্গার উপ-পরিচালককে নিয়োগ করেন। তিনি তদন্ত করে অনিয়মের সত্যতা পান। অনিয়ম পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন ওই কর্মকর্তা। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পরও তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা দিয়ে তার পদোন্নতী প্রদান করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দুদকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অসীম কুমার গাঙ্গুলীকে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দিয়ে কুড়িগ্রামের চররাজিবপুর উপজেলায় বদলী করা হয়। বিষয়টি জানতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের পরিচালক হাবিবুল হক খান জানান, আমার দপ্তরে এমন কোন তদন্ত প্রতিবেদন আসেনি। আসলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করতাম। তিনি বলেন হয়তো এই কপি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অসিম কুমার গাঙ্গুলী বলেন, আমি তাদের সাথে কোন অসাদাচারণ করিনি। ওই সময় আমার একটি ফোন কল আসে। আমি কল রিসিভ করায় আমার উপর উনারা রাগ করেছেন। তাদের সাথে খারাপ আচরণের কোন ঘটনা ঘটেনি।